রবিবার, নভেম্বর ১০, ২০২৪
জেলাজুড়েরাজনীতিসদর

‘কেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই’ শীর্ষক ছাত্র-শিক্ষকদের মতবিনিময় সভা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘কেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই’ শীর্ষক ছাত্র শিক্ষকদের মতবিনিময় সভা করেছে জেলা ছাত্র ফেডারেশন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় কলেজ রোড ডাক বাংলো অডিটোরিয়ামে শিক্ষা দিবস উপলক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় ছাত্র ফেডারেশন জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনার সভাপতিত্বে এবং সহ-সভাপতি সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় মত-বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা সৈকত আরিফ; সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক রুমন রেজা, সরকারি তোলারাম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মজিবুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক মোঃ মনোয়ার হোসেন, এবং ধর্মগঞ্জ ইসলামিয়া আরবিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল করিম সহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এবং বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্র প্রতিনিধিরা।


সভায় ড. রুমন রেজা বলেন, আমি ছাত্র রাজনীতির নানারকম রূপ দেখেছি, তবে আজকের এই আয়োজনে ছাত্র মজলিসের মতো সকল ছাত্র সংগঠন এসেছে এবং তারা তাদের মতবাদ ব্যক্ত করছে এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। ৮০-৯০ শতকের দিকে ছাত্র রাজনীতিতে বিভিন্ন দলা-দলি হানাহানি, কেউ কিন্তু সহ্য করতে পারে না এমন রূপ দেখেছি। তবে বর্তমান প্রজন্মের এই বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে এটা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। এখন ছাত্রদের মাঝখানে অন্যের মতামত গ্রহণ করার যে প্রবৃদ্ধি বা প্রেরণা গড়ে উঠেছে সেটা অসাধারন। আমরা যদি অন্যের মত গ্রহণ করি, নিজের মত অন্য কারো উপর চাপিয়ে না দেই, মিথ্যা না বলি বা অন্যায় না করি তাহলেই বাংলাদেশ পাল্টে যাবে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিত তৈরি করি, কিন্তু যারা শিক্ষিত হচ্ছে তারাই দুর্নীতি বেশি করছে, চুরি-চামারি অনিয়ম বেশি করছে। যারা কম শিক্ষিত, খেটে খাওয়া মানুষ তারা দুর্নীতি করে না। সুতরাং দায়টা আমাদেরই বেশি। শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে জেগে উঠেছে, তারা বাংলাদেশকে একটি নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে। তারা যেভাবে বাংলাদেশ থেকেই নিতে চাচ্ছে সেটা দেখে আমরা নতুন আশাবাদী হয়ে আছি। এখন দেশ শিক্ষার্থীরা চালাচ্ছে, তাহলে তোমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো করোনার পর নানা কারণে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ডিসি অফিস যাচ্ছে শহীদ মিনারে বসে থাকছে ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা রকমের মন্তব্য করছেন তবে ক্লাসে উপস্থিত থাকছেন না। তাহলে আমরা কলেজ চালাবো কাকে নিয়ে। নারায়ণগঞ্জ কলেজে সময়মতো গেট বন্ধ করে দেয় এবং গেট খুলে দেয় এজন্য অনেকে ফেসবুকে মন্তব্য করে এটা একটা কারাগার। হয়তো আমরা তাদের কাছে সে স্বতঃস্ফূর্ততা অর্জন করতে পারিনি, তাই তারা এটাকে জেলখানা মনে করছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরী একটি গোয়াল ঘরের মতো ছিল, আমি এটাকে একটি প্রজেক্টের আওতায় নিয়ে ই-লাইব্রেরী বানিয়েছি। তবে এখানে কেউ বই পড়তে যায় না, যারা যায় তারা আড্ডা দেয়। কর্মমুখী ও সততা এগুলা আসলে চর্চার বিষয়। আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে তবে সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশ কম। আমি যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মনের মত করে করতে চাই তাহলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখী হতে হবে। এই কলেজ রোডে কলেজ চলাকালীন সময় যে কোচিং গুলো করানো হয় সেখানে কেউ কোন কলেজের শিক্ষক নয়। তারা কলেজের বাহিরের।

নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ আপরও বলেন, আমার তো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশা করতে পারি তারা দায়িত্ব নেবে, নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে সেখানে ছাত্রছাত্রীদের বলবে যে ক্লাস চলাকালীন কেউ কোন কোচিং সেন্টার উপস্থিত থাকতে পারবে না। সবাইকে ক্লাসের সময় কলেজেই ক্লাস করতে হবে। তাহলে আমার মনে হয় শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হবে। যদি তোমার ক্লাস তোমার প্রত্যাশা অনুযায়ী না হয়, তাহলে আমাদের কাছে বসো। আমরা আলোচনা করে তোমার ক্লাস, তোমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিয়ে যাবো। একটা শিক্ষক যখন কোন বিষয় আলোচনা করে, তখন সে ৪-৫ টা ক্লাস নিয়ে আলোচনা করে। তবে দেখা যায় যে শিক্ষার্থীরা একটা ক্লাসে আলোচনা করে, তারা পরের ক্লাসে উপস্থিত থাকে না। এটা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটা কমন সমস্যা। যে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা শিক্ষার্থীদের উপলব্ধি করে ক্লাসে ফিরে আসতে হবে এবং কলেজ প্রশাসনকে সাহায্য করতে হবে।

সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বিমল কান্তি দাস বলেন, কিছুদিন আগে আমার ছাত্র বদলি হয়েছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীদের শক্তি আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। আসলে শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যে শিক্ষার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যাবে, নৈতিকতা শিক্ষা পাওয়া যাবে। তবে আমাদের ট্রেডিশনাল শিক্ষায় নৈতিক শিক্ষা নেই। আমাদের দরকার নৈতিক শিক্ষাব্যবস্থা। ব্যক্তিগতভাবে আমি রাজনীতি প্রমোট করি না। এখানে অতীতে যে ছাত্র রাজনীতি ছিল, সেটার বিরুদ্ধে আমি গিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে জামাত-শিবিরের আখ্যায়িত করা হয়েছিল। তখন আমার পেছনে কেউ ছিলনা। অনেকে বলে শিক্ষকরা মেরুদন্ডহীন, হ্যাঁ তবে আমরা চেষ্টা করেছি। এবং আমাদের সেই চেষ্টায় অনেকখানি কমিয়ে আনতে পেরেছিলাম। তবে যে ফ্যাসিবাদের রাজনীতি ছিল আমার তো বেঁচে থাকার কথা ছিল না নারায়ণগঞ্জে। কলেজের পেছনে যে এটা আগে জায়গা দখল হয়েছিল তারা এমনও বলেছে, এই জায়গার দিকে তাকালে চোখ তুলে ফেলবে। কিন্তু আমি সেই অধ্যক্ষ যে এই জায়গাটা উদ্ধার করেছি। আমি আমার জীবনের মায়া করিনি বলেই হয়তো ছাত্ররা আমাকে ভালোবাসো।

তিনি আরও বলেন, আমরা ছোট থাকতেই সন্ধ্যার আগেই বাসায় যেতাম কারণ যদি সন্ধ্যার আগে বাসায় না যেতাম তাহলে আমার মা আমাদের মারতো। কিন্তু এখন এই জেনারেশনের মধ্যে সেই জিনিসটা নেই। শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের লেখাপড়া ঠিক রেখে ডিসিপ্লিন অনুযায়ী চলে, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসলে কোন বিষয় না। এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট চ্যাট জিপিটির মত অনেক কিছুই আছে যেখান থেকে চাইলেই অনেক কিছু জানা যায়। যদি আমরা জানতে চাই তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন বিষয় না। বাহিরের অনেক দেশগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল হয়ে গেছে। আমি যদি ভালো মানুষ হতে চাই যদি নৈতিকতার মধ্য দিয়ে নিজেকে করতে চায় তাহলে আমার সামনে অনেকগুলো অপশন আছে। তবে কিছু বিষয় আছে যেগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সম্ভব না। কিছু কিছু শিক্ষার বিষয় ব্যবহারিক এর মাধ্যমে শিখতে হয়, যেটা ভার্চুয়াল জগতে শেখা যায় না। শিক্ষার্থীরা যদি প্রতিটি কলেজের অধ্যক্ষকে সাহায্য করে, তাহলে লেজুর ভিত্তিক ফ্যাসিবাদের রাজনীতি নারায়ণগঞ্জের ফিরে আসতে পারবে না। তবে এই ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা একটু খারাপ। কিছুদিন আগে আমরা একটি পরীক্ষার আয়োজন করি। সেখানে ৯৫ ভাগ স্টুডেন্ট পরীক্ষার হলে চলে গিয়েছিল তবে ৫% স্টুডেন্ট অটো পাশ চেয়েছে। এই ৫% স্টুডেন্ট ৯৫ ভাগ স্টুডেন্ট কে পরীক্ষার হল থেকে বের করে নিয়ে এসেছে , এবং বাধ্য হয়ে আমাদের সেই পরীক্ষাটা পোষ্টপন্ড করতে হয়েছে। আমরা এদের কাছে জিম্মি, এখানে যদি সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে না আসে তাহলে আমাদের আজীবন তাদের কাছে জিম্মি থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা বলছে অধ্যক্ষদের ব্যবস্থা নিতে কিন্তু আমরা তো শিক্ষার্থীদের ছাড়া ব্যবস্থা নিতে পারব না। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর পেছনে থাকলে অধ্যক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারবে। আমি যতদিন কলেজে থাকবো আমি সেই আগের রাজনীতি ফিরতে দিব না। আমি নারায়ণগঞ্জের সন্তান হিসেবে যাব এই নারায়ণগঞ্জের কলেজগুলো যেন রাজনীতি মুক্ত থাকে, এতে যদি আমার হেনস্থার শিকার হতে হয় তাহলে হোক।

তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ আরও বলেন, তোলারাম কলেজের লাইব্রেরী আছে, লাইব্রেরীতে ওয়াইফাই সেবা এবং হাজার হাজার বই আছে। তবে আমি ওয়াইফাই সেবা উন্মুক্ত করে দিইনি কারণ আমি জানি উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা কি করবে। আমি আমার লাইব্রেরীর জন্য ইন্টারনেট সংযোগ চেয়ে নিয়েছে, এভাবে এই ইন্টারনেট সংযোগের মিস ইউজ করতে পারে সেই ভয় আমার মধ্যে কাজ করে। কিন্তু আমার কোন যদি ছাত্র চায় সে গবেষণামূলক কাজের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চায় তাহলে সে অবশ্যই করতে পারবে। গত বছর বই কেনার জন্য আমি এক লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার বাজেট পেয়েছিলাম, তবে আমি বই কিনেছি প্রায় দুই লক্ষ টাকার। আমাদের যে কমিশনটা হয় সেটা দিয়েও আমি বই কিনেছি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যদি কারো ক্লাস অফ থাকে তখন লাইব্রেরী দেয়া যায় এ ছাড়া লাইব্রেরীতে যেতে চায়না। লক্ষ লক্ষ টাকার বই নষ্ট হচ্ছে কেউ বই নিতে চায় না। কাগজের দাম বাড়ার কারণে যেকোনো বইয়ের দামি অনেক বেড়েছে। আমি আমার ডিপার্টমেন্টের প্রতিটি শিক্ষকদের কাছে বলেছিলাম আপনাদের কাছে কোন শিক্ষার্থী বই চাইলে তাকে দিয়ে দিবেন। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি যদি লাইব্রেরী থেকে কোন বই দেওয়া না হয় তাহলে আমাদেরকে জানাও। আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব। যতদিন আমি আছি শিক্ষার্থীদের যে কোন সমস্যার সমাধানে আমাদেরকে পাশে পাবে। আমি এখানে আসার পর ড. রুমন রেজা ও ডিসি স্যারের সাথেও কথা বলেছি কোচিং বিষয়। ডিসি স্যার বলেছেন আপনার যখন চাইবেন আমি আপনাকে ফোর্স দিব। তবে আমি এখন কোচিং এর বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেই নি কারণ দেশের যে অবস্থা, যেকোনো শিক্ষককেই কলার ধরে নামিয়ে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ এমন কোন ঘটনা না ঘটলেও আমাদের মাঝখানে সেই ভয় থাকে, এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ এসে কিছু শিক্ষার্থীদের লিলিয়ে দিতে পারে। তবে আমি কথা দিচ্ছি এই কলেজে কলেজের ক্লাস চলাকালীন সময় কোন কোচিং সেন্টার খোলা থাকবে না এটাই ব্যবস্থা আমরা নেব। তোলারাম কলেজ এমন কোন রেকর্ড নাই যে কোন স্যারের প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় তাকে নাম্বার দেওয়া হবে না। স্কুলগুলিতে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে কিন্তু আমাদের কলেজে এমন কোন ঘটনা নেই।

প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, কেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই তা বুঝতে হলে আমাদের বুঝতে হবে শিক্ষা কি.? শিক্ষা হলো শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা কে সুউচ্চ শিখরে পৌঁছানো! আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো যাতে শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা কে বিকশিত করতে পারে সেই পরিবেশ আমাদের কে তৈরি করতে হবে।

সৈকত আরিফ বলেন, ক্যাম্পাসে গনতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে,একাডেমীক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক কে মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে! শিক্ষার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেকোনো উন্নয়ন সাধন অসম্ভব।

RSS
Follow by Email