ত্রিপাক্ষিক মতবিনিময় সভায় বক্তারা ‘যে কোন মূল্যে কারখানা চালু রাখতে হবে’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শিল্প সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের শ্রম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ত্রিপাক্ষিক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে তৈরি পোষাক রপ্তানি শিল্পের অন্যতম সংগঠন বিকেএমইএ। এতে, অংশ নেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিগণ।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে চাষাঢ়ায় অবস্থিত বিকেএমইএ’র কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভার সভাপতিত্ব করেন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সচিব এইচ এম সফিকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলে- শিল্প পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি মো. সিবগাত উল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, নারায়ণগঞ্জ জেলার সেনাবাহীনির কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেল কর্নেল আতিক ও বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
এসময় শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে- বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এডভোকেট মন্টু ঘোষ, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি ও মডেল গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদুজ্জামান মাসুদ, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা কাজী মনিরুজ্জামান প্রমুখ। এছাড়াও এই আলোচনায় অংশ নেয় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কারখানার মালিকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তাদের সমস্যার কথা জানতে চান।
এসময় গ্যাস-বিদ্যুৎ সহ কারখানার বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন উপস্থিত মালিকরা। অন্যদিকে, শ্রমিকদেরও বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন উপস্থিত শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
তাদের কথা শুনে প্রধান অতিথি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে ইন্ডাস্ট্রির চাকা চালু রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে গেলে মালিকদের যেমন লস হবে তেমনি শ্রমিকরাও কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশ থেকে অনেক অর্ডার চলে গেছে, ক্রিসমাসের অর্ডার বেশির ভাগই চলে গেছে। পাশাপাশি আন্দোলনের সময় অনেক দিন ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ ছিল। এছাড়াও গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। এগুলো মেনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মালিক পক্ষকে নিয়ে হতাশ। আমাদের শ্রমিক প্রতিনিধিদের কথা শোনার ধৈর্য্য না থাকলে তো এটা সমাধান হবে না। সুতরাং কথা শুনতে হবে। শ্রমিকদের সাথে ম্যানেজমেন্টের সাথে অনেক বিভেদ রয়েছে। আমাদের এসব জায়গায় ফোকাস করা দরকার।’
সচিব বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেক বড় বড় মালিক পালিয়ে গেছে, আইনের আওতায় চলে এসেছে। সেখানে বেতন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমে বেক্সিমকো থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এটা সরকার ইতোমধ্যে একটি ফান্ড তৈরি করে সমাধান করেছে। আমি মনে করি এগুলো বড় কোনো সমস্যা না। আপনাদের যত আবেদন রয়েছে আমাদের একটি কমিটি রয়েছে এখানে। ইতোমধ্যে আমার কাছে ১৩৮টি অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখবো। যারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন আমি শ্রমিক নেতাদের বলব, ফৌজদারি অপরাধকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। যারা আগুন দিয়েছে তাদের ধরলে আপনারা ব্যারিকেড দিয়ে বলবেন ছেড়ে দিতে, সেটা করা যাবে না।’
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শ্রমিকদের যেকোন ন্যায্য দাবি বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ সর্বদা সমাধান করায় সচেষ্ট থাকি, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং সরকারকে সাথে নিয়ে। এবারও শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আমরা সমাধান করব। এতে কোন ব্যক্তই ঘটেনি এবং ঘটবেও না। তবে অযৌক্তিক কোন দাবি এবং ফ্যাক্টরি বন্ধ করে রাজপথে কোন দাবি হবে না। ফ্যাক্টরির ভেতরে আলোচনায় বসে আমরা এর সমাধান করতে চাই। এক্ষেত্রে শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা আপনারা আমাদের পাশে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা আবার কিছু কিছু স্থানে দেখছি একটি দাবি মানা হলে আরও কয়েকটি দাবি নিয়ে আসছে। অনেকগুলো দাবি আবার অযৌক্তিক। তাই শ্রমিক নেতাদের বলবো, আপনারা শ্রমিকদের বোঝান। বিদেশিদের হাতে আমাদের এই দেশের ব্যবসাটা যাতে চলে না যায়। আশির দশকে শ্রীলঙ্কায় এমন অসন্তোষ ছিলো বলেই বাংলাদেশে এই পোষাক শিল্পটি আসে। এখন যদি এখানে অসন্তোষ লাগিয়ে রাখা যায় তাহলে লাভবান কারা হবে এটা আপনারাই বুঝতে পারেন।