কমরেড সুনীলের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিপিবির স্মরণসভা
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কমরেড সুনীল রায়ের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একটি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) উদ্দ্যেগে মাসদাইর শ্মশানে এ শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভা করা হয়।
এসময় জেলা সিপিবি কমিটির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম এর সভাপতিত্ব স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন খেলা ঘর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য রথীন চক্রবর্তী, আয়াত আলী, কমিউনিস্ট পার্টি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. মন্টু ঘোষ, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনাথ চক্রবর্তী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ জেলা কমিটির সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, কমিউনিস্ট পার্টি’র জেলা কমিটির সদস্য দুলাল সাহা, নারায়ণগঞ্জ সমমনা’র সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ সাহা প্রমুখ।
স্মরণসভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, শ্রমিক আন্দোলন ও গরীব মেহনতী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে কিংবদন্তিতুল্য শ্রমিক নেতা ছিলেন কমরেড সুনীল রায়। শ্রমিকের একান্ত আপন ও প্রাণের মানুষ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, মৃদুভাষী, পোশাক-আশাকে, চলন-বলনে একেবারে সাদাসিধে মানুষ। নিবেদিতপ্রাণ একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার শ্যামগ্রামে ১৯২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করে ছিলেন এবং ২০০১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে প্রয়াত হয়েছেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। চরম দারিদ্রতার কারণে অষ্টম শ্রেণির পড়া অসমাপ্ত রেখে মিল ম্যানেজার মামার আশ্রিত হয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চিত্তরঞ্জন কটন মিলে তাঁত চালানোর কাজে নিযুক্ত হয়ে ছিলেন। সেই সময়ে চলমান শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হয়ে কয়েক বছরের মধ্যে সকলের প্রিয় নেতা হয়ে উঠে ছিলেন।
কমরেড সুনীল রায় শ্রমিক হওয়ার কারণে শ্রমিকের দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা, চেতনা নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। সমাজের শ্রেণি বিভক্তির চেতনা ছিল তাঁর প্রখর। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বা কারো দয়ার উপর শ্রমিক শ্রেণির মুক্তি আসবে না। সমাজ বদলানো ছাড়া তা সম্ভব না। নিজেদের অবস্থার বদল ঘটাতে হলে শ্রেণি হিসেবে নিজেদেরই তা করতে হবে। তাই নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকদের মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অপরিসীম ভূমিকা রেখে ছিলেন তিনি। পাকিস্তানী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রেণি সংগ্রাম করতে গিয়ে কমরেড সুনীল রায় বহুবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, জেল খেটেছেন, অনেক সময় আত্মগোপনে থেকেছেন। যার কারণে বিয়ে বা ঘর-সংসার করতে পারেনি চিরকুমার ছিলেন। অদম্য শ্রেণি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে ছিলেন।
আমরা যারা শ্রমিক আন্দোলনের কর্মী, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছি আজ আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই কমরেড সুনীল রায়ের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি। সুনীল রায়ের শিক্ষা ও বিদ্যমান শ্রমিক আন্দোলনের প্রকৃত শিক্ষার আলোয় পথ চলতে গিয়ে আমরা যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি, শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন লড়াই-সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই। কমরেড সুনীল রায়ের দেখানো পথেই শ্রেণি সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে।