চাঁদা ফেরতসহ নানা দাবি-অঙ্গিকারে চেম্বার অব কমার্সের নতুন সভাপতির সংবাদ সম্মেলন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এনসিসিআই) ২০২৩-২৫ মেয়াদের নব নির্বাচিত সভাপতি, বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি, মডেল ডি ক্যাপিটাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. মাসুদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বের) দুপুর ১২টায় এনসিসিআই কার্যলয়ে ওই সভা অনুষ্টিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বৈষ্যম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ও আহদের সুস্থ্যতা কামনা করে। সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলেন। বিগত সময়ে ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক ভাবে পরিস্থিতির শিকার হওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে। সরকার পতনের পর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে চাঁদা আদায় করা হয়েছে সেগুলো ফেরত চেয়েছেন, অবিলম্বে ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে লাল কার্ড প্রদর্শন করবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী ও চঞ্চল হত্যার বিচার চেয়েছেন বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে। পরিশেষে আগামীর পথচলায় গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগীতা চেয়েছেন নব নির্বাচিত এই সভাপতি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, বিকেএমইএ ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, রতন কুমার সাহা, মাহবুবুর রহমান, মহসিন রব্বানী, তারেক সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ আবু জাফর, মো. সেলিম হোসেন, সোহেল আক্তার, আশিকুর রহমান, মো. জাকারিয়া ওয়াহিদসহ এনসিসিআই এর অন্যান্য সদস্য ও কর্মকর্তাবৃন্দ ।
সংবাদ সম্মেলনে মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৪ হাজার ছাত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সহস্রাধিক ছাত্র নিহত হয়েছে। সাংবাদিকদের আমাদের পাশে থাকা দরকার। আমাদের কোন ব্যবসায়ীরা রাজনীতির সাথে জরিত না, আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। গত কয়েকদিনে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের কাছে ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা সরকার পতনের পর এই পর্যন্ত যে চাঁদা দিয়ে সমস্ত চাঁদা ফেরত চাই। আমাদের চাঁদা ফেরত না দেয়া হলে আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে শহীদ মিনারে লাল কার্ড প্রদর্শন করবো। এখন থেকে যারা চাঁদা চাইবে সে যতবড় নেতাই হোকনা কেনো। তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বের করে দিবো। আপনারা সাংবাদিকরা ব্যবসায়ীদের সাথে যুক্ত থাকুন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কোন ব্যবসায়ী যদি আমাদের ভুল অভিযোগ দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমরা সেই ব্যবসায়ীকে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স থেকে বের করে দিবো। দেশের মধ্যে আইন পরিবেশ এখনো ফিরে আসেনি। আমরা পুলিশের সাথে বসবো, প্রয়োজনে পুলিশকে সাহায্য করবো। নারায়ণগঞ্জে অনেক বড় একটা সমস্যা ট্রাফিক পুলিশ, যেখানে কালির বাজার থেকে চাষাঢ়া আসতে ৫০ মিনিট সময় লাগে। ট্রাফিক পুলিশকে ঠিক করতে হবে। চেম্বার অব কমার্স কখনোই রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে কাজ করবে না। আমরা সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জে ত্বকী-চঞ্চলসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের হত্যার বিচার চাই। নারায়ণগঞ্জে এক সময় হিন্দু মুসলিম একসাথে থাকতাম। আমরা সেই আগের মতো করে নারায়ণগঞ্জে হিন্দু-মুসলিম সেভাবে থাকতে চাই। সাংবাদিকদের কাছে আহবান থাকবে আপনাদের কলমটা নিরপেক্ষ করেন, আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের রক্ত এখনো শুকায়নি, কিন্তু দালালি করা শুরু হয়ে গেছে। বিগত সময়ের মতো ব্যবসায়ীদের নির্বাচন হবে না, গণতান্ত্রিক উপায়ে সব নির্বাচন হবে। আজকের পর থেকে ব্যবসায়ীরা ভয় পাবেন না।
বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। অথচ শ্রমিকদের আন্দোলনে শ্রমিক নাই। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস শিল্প সরিয়ে একটি দেশে নিতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শ্রীলংকায় যখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হল তখন সেখান থেকে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশে চলে আসে। এখন বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করে কেউ তার দেশে হয়ত এটা নিয়ে যেতে চাইছে। আমি দেশের নাম উল্লেখ করলাম না। গতকাল ইন্ডিয়ার একটি পত্রিকায় এ ব্যাপারে নিউজ ছাপা হয়েছে। তাদের দেশে অনেক অর্ডার যাচ্ছে। তারা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্টসে অরাজকতা করা হচ্ছে। সেসমস্ত এলাকার রাজনৈতিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের এই ক্রান্তিলগ্নে ভূমিকা পালন করতে হবে। শ্রমিক ভাইদের বলব কারও উস্কানিতে পা দেবেন না। এর ফলে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা বিদেশীদের দ্বারা লালিত পালিত হয়ে কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।