বন্যা পরিস্থিতির কারণে না.গঞ্জে সীমিত পরিসরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী পালন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমী পালন করেছে জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বাংলাদেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল ১০টায় নগরীর ২নং রেল গেট এলাকায় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
এদিন সকালে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে শোভাযাত্রায় শহরের সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠনসহ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা অংশ নেন।
এতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার সিপনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান।
শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রমের অধ্যক্ষ পরম পূজ্যপাদ স্বামী একনাথানন্দহী মহারাজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন- মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, এফবিসিসিআই এর পরিচালক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রবীর কুমার সাহা, পানাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমল পোদ্দার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে যেই সাংস্কৃতিক ঐক্য রয়েছে, এই ঐক্যকে বজায় রেখে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আগামী দিনের পথ চলবো। নারায়ণগঞ্জে হিন্দুসহ অন্য যে সকল ধর্মের ভাই-বোনেরা আছেন, আপনারা আজ থেকে সংখ্যালঘু নয়। আমাদের নেতা তারেক রহমান আমাদের নির্দেশ দিয়েছে, সকল ধর্মের ভাই-বোনেদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য। এই সম্পর্ক যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন বজায় থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে, আজ হিন্দু ভাইয়েরা তাদের এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত করেছে এবং বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য তারা যাবেন। এজন্য আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরাও আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সেই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াবো।
এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, কে হিন্দু কে মুসলমান সেটা বড় কথা নয়, আমরা সকল ধর্মের মানুষ মিলে এই বাংলাদেশে বসবাস করি। দেশের কোথায় কি হলো সেটা দেখার বিষয় নয়, তবে নারায়ণগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর কোন আঘাত আসার আগে আমাদের বিএনপির উপর আঘাত আসতে হবে। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জকে একটি অসাম্প্রদায়িক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে। এখানে আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একসাথে বসবাস করবো। আমরা কারো প্রতি কারো হিংসাত্বক মনোভাব রাখবো না। হিন্দু নেতৃবৃন্দদের বলতে চাই, বিভিন্ন মন্দিরের কমিটি নিয়ে আপনাদের মধ্যে কিছুটা বিরোধ আছে। সিনিয়র নেতাদের সাথে বসে এসব সমস্যা সমাধান করবেন। আপনারা একপক্ষ আরেক পক্ষকে কোনোভাবেই ব্যবহার করবেন না।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমান বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিল। ওই ফেসিস্ট হাসিনার মত আমরা বাংলাদেশে কোন ধর্মীয় দাঙ্গা লাগাবো না। আপনারা হিন্দুরা পিছিয়ে থাকবেন না, ভয় পাবেন না; আমরা শহরে যেভাবে চলাফেরা করি আপনারাও সেভাবে চলাফেরা করবেন। আপনারা ভাববেন না আপনারা সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ নাই। আমরা সকল ধর্মের মানুষ একসাথে বসবাস করবো, একসাথে ব্যবসা করব, একসাথে প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করব।
প্রবীর কুমার সাহা বলেন, আমি সেই সকল শহীদ ছাত্রদের আত্মার শান্তি কামনা করি আমাদের সুন্দর একটি দিন উপহার দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে সকল ধর্মের মধ্যে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে সেটা আমি প্রমাণ পেয়েছি। আমি ৬তারিখ নারায়ণগঞ্জ এসেছিলাম। আমি দেখেছি প্রত্যেকটা মন্দির-মসজিদ-গির্জা এবং প্রত্যেকটি স্থাপনা; আমাদের বিএনপির ভাইয়েরা, আমাদের জামাতে ইসলামের ভাইয়েরা, আমাদের হেফাজতের ভাইয়েরা এবং ছাত্ররা মিলে এগুলো পাহারা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত নারায়ণগঞ্জে আগে কখনো এরকম ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এবার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা ছিল ব্যক্তিগত আক্রোশ, এই সুযোগে তারা এই ঘটনাগুলি ঘটিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শান্তি বজায় আছে এবং থাকবে।
বক্তব্য পর্ব শেষে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন অতিথিরা।