শোকের মাসের শুরুতে মহানগর আ.লীগের সভা ও মিছিল
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সভা ও শহরে মিছিলের আয়োজন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর ২ টায় শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে কার্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন ও বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্যদের স্বরনে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
শোক সভায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এড খোকন সাহা বলেন, সেদিন প্রতিরোধ কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জবাসীকে বাচাঁতে যারা মাঠে ছিলো তারাই প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মী। এটা শোকের মাস, আর এই মাসেই ওরা নিষিদ্ধ হবে। আমরা মাঠ থেকে ফিরে যাইনি, আমরা এখনো মাঠে আছি। এই প্রোগ্রাম শুরু করেছিলাম সকালেই কিন্তু এখন দুপুর তিনটা বাজে, অনেকেই এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে এসেছেন। আমি নিজে অনেককে আসতে না করে দিয়েছি। আনোয়ার ভাই অসুস্থ থাকা অবস্থায় আমাদের নানা উৎসাহ উদ্দীপনা দিচ্ছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সবসময় আছি। আমরা ৭৫ এর সৃষ্টি, আমরা আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলেছিলাম, ৭৫ থেকে ৮০ দশকের নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেন। সেদিন ওবায়দুল কাদের আমাদের কথা শুনেছিলেন।
সভায় তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রী মানবতার মা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকতে এদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদী মৌলবাদী শক্তির ঠাই হবে না। ওদের প্রতিহত করার জন্য এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যে কোন পরিস্থিতিতে ওদের মোকাবেলা করার জন্য দলের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। শোক দিবস উপলক্ষে আমাদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু জাতি কে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করেছেন, এই শোক দিবস উপলক্ষে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ রাখলাম।
খোকস সাহা বলেন, আমরা রাজনীতি করি ত্যাগের জন্য ভোগের জন্য নয় এটা সকলকে মনে রাখতে হবে। গত দশ দিনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জামাত বিএনপি শিবিরের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাদের উদ্দেশ্য বলি, দল আপনাদের কথা কখনো ভুলবেনা। যারা শহীদ হয়েছেন আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। যারা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। জামাত শিবির নিষিদ্ধের খবর পেলে খুশি হওয়ার কোন কারন নাই, ওরা পর্দার অন্তরালে গিয়ে দেশের উন্নয়নকে ধংস করার কাজে লিপ্ত হবে, ওরা আবারো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে পারে। ওদের বিরুদ্ধে পাড়ায় মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
খোকন সাহা আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ইচ্ছা ছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করে ঘরে ফিরব। নেত্রী আমাদের কথা রেখেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বলেছেন তোমাদের ছুটি হয়নি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। এই উন্নয়নের লক্ষ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। কিছু স্থানীয় পত্রিকা লেখা হয় যে আমাদের নেতাদের বেল নাই, নেতারা মাঠে নাই। তারা অনেকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিউজ করেন। যেহেতু এতো নিউজ করেন তাহলে কারা কারা সেদিন মাঠে ছিল, এটা নিয়ে ও নিউজ কইরেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আগামি ১৫ দিন নিজ এলাকায় থাকবেন এবং বঙ্গবন্ধুর অনুষ্ঠান করবেন। প্রতি এলাকায় ওদের প্রতিরোধ করবেন। নেত্রীর উন্নয়নকে যতই বাধাগ্রস্থ করা হোক না কেন, নেত্রী থেমে থাকবেন না। সবাই আমাদের নেত্রীর জন্য দোয়া করবেন। তিনি দীর্ঘ আয়ু হলেই দেশেটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হবে। কোটা আন্দোলন একটা সেকেন্ডের বিষয়। এই ছোট বিষয়টাকে নিয়ে আমাদের বাচ্চাদের বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা জানি আমাদের বাচ্চারা ভাংচুর, জ্বালাপোড়া বা মানুষ হত্যা করেননি। ওই মৌলবাদী গোষ্ঠীর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল বিভিন্নভাবে, যেটা এখনো করছে। আমি আমার নেতা কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
সহ-সভাপতি এডভোকেট হান্নান আহমেদ দুলাল বলেন, বিগত দিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে আমাদের নেতা শামীম ওসমান, তার একমাত্র পুত্র অয়ন ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এডঃ খোকন সাহা সহ দলীয় নেতা-কর্মীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তারা যদি প্রতিরোধ না করতো তাহলে নারায়ণগঞ্জ জেলা কে ওরা ধ্বংস করে দিত, ওদের বিরুদ্ধে সকল সময় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের যারা হত্যা করেছে তাদের দেশের মাটিতে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মাহমুদা মালা বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাঁধে বন্ধুক রেখে যারা মানুষ হত্যা করেছেন, সারা দেশ ব্যাপি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে, এই তথাকথিত আন্দোলনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় জননেতা শামীম ওসমান তার একমাত্র পুত্র অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরি ওসমান, আনোয়ার ভাই ও খোকন সাহা দাদা সহ যারা প্রতিরোধে অংশ গ্রহন করেছেন তাদের কে ধন্যবাদ না জানালে নিজে কে অনেক অপরাধী মনে হবে। এই শহরে কিছু লেবাজ ধারী নেতা ও নেত্রী আছেন যারা কখনো দলের দুঃসময়ে কোন কাজে আসে না।
তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করলাম। নেত্রী একদিকে দেশের উন্নয়ন করে, জাতির জন্য কল্যাণকর কাজ করে অপর দিকে ওরা ধ্বংসাক্ত কাজ করে জাতি কে বারবার পিছিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। মহান আল্লাহ সহায় বিধায় শেখ হাসিনা এই জাতি কে একদিন উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
সভায় আরও নেতাকর্মীরা বলেন, শোকের রং কালো হয়। যে ব্যক্তি সাড়ে ১১ বছর জেল খেটে মৃত্যুর মুখে দাড়িয়েও দেশকে স্বাধীন করার কথা ভেবেছেন সেই মহানায়ককে হারানোর মাস এটা। কিন্তু এই মাসে নিত্য করে ফিরছে কিছু মানুষ। আর এতে বিএনপি-জামায়েত মদদ দিচ্ছে। কোটা আন্দোলেনে হাইকোর্ট থেকে রায় হলো। এরপর কিসের এই আন্দোলন। ধন্যবাদ জানাই এমপি শামীম ওসমান ও খোকন সাহাকে। তারা দলের দুর্সময় তারা রাজপথে ছিলেন। সব দলের থেকে আমদের স্লোগান আলাদা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু যখন আমরা বলি তখন আমোদে মধ্যে ভেদাভেদ থোকে না। এই স্লোগানে আমরা ভুলে যাই, আমার কি পেয়েছি আর কি পাই নি। কিন্তু বিএনপিদের এই স্লোগান নাই, আর তাদের এমন ত্যাগী কর্মীও নেই। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই আর হতে পারে না।
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, সহ-সভাপতি শেখ হায়দার আলী পুতুল, রবিউল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব, জি এম আরমান, প্রচার সম্পাদক এডভোকেট হাবিব আল মুজাহিদ পলু, যুব ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির মৃধা, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিস আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর তাঁতীলীগের আহবায়ক চৌধুরী এইচ এম ফারুক সাহেদ,সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকারী কমিটির ৫৫ জন কর্মকর্তা ও সদস্য বৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি বৃন্দ।
সমাবেশ শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহার নেতৃত্বে একটি শোক রেলি বের হয়। রেলিতে নেতা কর্মীরা ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘আমরা আছি লাখো ভাই, শেখ হাসিনা ভয় নাই’ এই স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে। মিছিলটি নগরের বিভিন্ন এলাকা পদক্ষিণ শেষে স্হানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এসে এড. খোকন সাহা আজকের শোক দিবসের প্রথম দিনের কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন।