জিএম আরাফাতকে বন্দর আ.লীগ নেতাকর্মীদের ‘ভর্ৎসনা’, তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ
#মনে করছে, বেয়াদবি করলেই সাধারণ সম্পাদক-সভাপতি হয়ে যাবে: এড. মালা
#এমন লাঞ্ছিত করবো, মান-ইজ্জত যাই আছে; শেষ হয়ে যাবে: খান মাসুদ
#কোন ভাই না কোন বোনের ইন্ধনে সে এগুলো বলছে: এইচ এম শাহেদ
#একটি দাগ দিলে, সেই দাগ অতিক্রম করার ক্ষমতা আপনাদের নেই: জনি
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাতের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে এসব ধরনে কথাবার্তা কিনবা বিরুপ মন্তব্য করলে বন্দরে অবাঞ্ছিতসহ তীব্র প্রতিরোধ করবেন বলে জানান তারা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষে সোমবার (১ জুলাই) বিকেলে ২৪ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড খোকন সাহা।
অনুষ্ঠানে ২৪ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলবুল আহামেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন জনির সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির মৃধা। আরও উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শেখ হায়দার আলী পুতুল, সাংগঠনিক সম্পাদক এড মাহমুদা মালা, দপ্তর সম্পাদক বিদ্যুৎ কুমার সাহা, মহানগর তাতী লীগের আহবায়ক চৌধুরী এইচ এম শাহেদ, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহিন, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা খান মাসুদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে এড. মাহমুদা আক্তার মালা বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেরই ছোট একটি গ্রুপ আনোয়ার ভাই ও খোকন দা’র বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন। ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি হওয়ার পরই তারা এটি শুরু করেছি। আমাদের একটা স্বভাব হলো, আমি যখন কোন কিছু থেকে বাদ পরে যাই; তখন আমি বাদে সবাই খারাপ। তারা কমিটি গঠনের সময় না এসে, এখন বলছে টাকা খেয়ে নাকি কমিটি হয়েছে। আপনাদের আমি অনুরোধ করবো, একদিন ডিএন রোডে অবস্থিত সাধারণ সম্পাদকের বাসায় ঘুরে আসবেন। সভাপতিও নিজের চাকরি করে মোটামোটি অবস্থানে আছেন।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ মহানগরের জন্য আনোয়ার ভাই ও খোকন সাহা ব্যতিত অন্য কাউকে মহানগরের দায়িত্ব দেন নাই। এখন কেউ কি মনে করছে, যে একটু বেয়াদবি করতে পারেলেই মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যাবেন, সভাপতি হয়ে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী জানেন কেনা রত্ন কোথায় বসাতে হয়। তিনি রাজনীতি করান অত্যন্ত সৎ ব্যক্তি দিয়ে। তাই যারা এইসব কথা বলছেন, তারা দয়া করে ঘরে ফিরে যান; নিজের কাজ করেন।
চৌধুরী এইচ এম শাহেদ বলেন, আওয়ামী লীগের একজন নেতা, উনি নাকি সাংগঠনিক সম্পাদক। উনি আনোয়ার ভাইকে নিয়ে কিছু কথা বলেছেন যা আমাদের মনের মধ্যে লেগেছে। নেত্রী আনোয়ার ভাই ও খোকন সাহাকে এই দায়িত্বে বসিয়েছেন। সে আজ পাগল হয়ে গেছে। কোন ভাই না কোন বোনের ইন্ধনে সে এগুলো বলছে। নেত্রী এই দুইজনকে বানিয়েছেন। আপনারা ভাববেন না যে তাদের ধাক্কা দিলেই তারা পড়ে যাবে। তারা রাজপথ থেকে উঠে আসা নেতা। তখন আপনার জন্মও হয়নি।
খান মাসুদ বলেন, একশ্রেনীর কর্মীবিহীন লোক আমাদের মহানগরের দুই মীর্ষ নেতার সমালোচনা করছে। আগামীতে এই বন্দরের মাটিতে এইসব কাজ করার চিন্তা করবেন না। বন্দরের মাটিতে এস যদি আপনারা কোন উল্টা পাল্টা কথা বলেন, তাহলে এমন ধোলাই খানে; যেই ধোলাইয়ের পর আপনারা আওয়ামী লীগের নাম ভুলে যাবেন। বন্দরের কোথাও আপনারা কোন প্রোগ্রাম করতে পারবেন না। এখন আর নেতাদের কথাও শুনবো না, আপনাদের আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। আপনারা আমাদের নেতাদের মেনে প্রোগ্রাম করুন আমরা আছি। আনোয়ার ভাই ও খোকন দাদার বিরুদ্ধে আর কোন কথা বইলেন না ভাই। নাহলে আমরা আপনাকে লাঞ্ছিত করবো। এমন লাঞ্ছিত করবো, আপনাদের মান-ইজ্জত যাই আছে, শেষ হয়ে যাবে। কর্মীদের মনে আপনি কষ্ট দিয়েছেন। আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে আপনাদের সাবধান করে দিলাম।
১৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জসিমউদ্দিন বলেন, জিএম আরাফাত ভাই, আপনিতো বন্দরের কেউ না। তাহলে কেন যেই নেতারা রক্ত-মাংস এক করে পরিশ্রম করে আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করছে; তাদের নিয়ে সমালোচনা করছেন। আপনি কোন সাহসে তাদেরকে বন্দর থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। আরে আপনি তো বন্দরের সন্তানই না। বরং বন্দরের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে আপনি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন। আনোয়ার ভাই ও খোকন সাহা আমাদের নেতা হয়ে আছেন এবং থাকবেন। আমরা বন্দরের নেতাকর্মীরা সব সময় তাদের পাশে থাকবো।
২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মাজিদ বলেন, বন্দরের বাইরে থেকে একজন লোক বন্দরের শান্ত পরিবেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন। যার কারণে আজ উনি সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন তার বিরুদ্ধেই তিনি বাজে কথা বলছেন। রাজাকারের দোষরদের তারা সভাপতি বানাতে চেয়েছিলো। আমরা কিন্তু ভেসে আসিনি। আরাফাত যদি ছাত্ররাজনীতি করে থাকে, আমরাও করেছি। উনি একাই বড় বড় কথা বলতে পারেন না, আমরাও পারি। ওনার স্পর্ধা উনি লঙ্ঘন করেছেন। উনি এই বন্দরে এসে বড় বড় কথা বললে, এর জবাব উনি পাবেই।
২৪নং সাধারাণ সম্পাদক ফারুক হোসেন জনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের জন্য আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের দ্বারা পূর্ণ কমিটি পেয়েছি। এই কমিটির দেওয়ার কারণে কিছু লোক আমাদের আনোয়ার ভাই ও খোকন দাদার বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করছে। একটা কথা ভুলে যাইয়েন না, আওয়ামী লীগ শিষ্ঠাচারের শিক্ষা দেয়। আমাদেরও কিন্তু ধৈয্যের একটা সিমা আছে। আপনারা ভুলে জাইয়েন না যে আমরা শামীম ওসমানের কর্মী। আমরা যদি একটি দাগ দিয়ে দেই, সেই দাগ অতিক্রম করার ক্ষমতা আপনাদের নেই।
এসময় সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে এড. খোকন সাহা বলেন, এটি আমাদের দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। কিছু মানুষের কথায় আপনারা কষ্ট পেয়েছেন ঠিক আছে। তবে, আপনারা শান্ত হন। যারা আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আমি তাদের বলেছি, আমাদের ভুল হতে পারে, আপনারা আসেন। আমরা একসাথে বসে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করি। যারা সমালোচনা করে, এই কমিটি বাতিল করার চেষ্টা করছে, তারা কিচ্ছু করতে পারে নাই। তারা আমাদের কথা না শুনে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ছোটরা ভুল করতে পারে, আমি আর আনোয়ার ভাই ভুল করতে পারি না।