সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Led01অর্থনীতিজেলাজুড়ে

সরকারি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন, বাজার মনিটরিংয়ের অভাব

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে এখনও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় এই তেল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাস্কফোর্সের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের নতুন দাম কার্যকর হবে। তবে ঘাষণার পর ২ দিনেও তেলর দাম অপরিবর্তিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছে ক্রেতারা। নির্দেশনা পর তেলের দাম না কমার পিছনে ভোক্ত অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ব্যার্থতাকে দায়ি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে এমনই তথ্য মেলে নগরীর দিগুবাবুর বাজারে। ২০ ফেব্রুয়ারি তেলের নতুন দাম নির্ধারন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কথা ছিলো ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা না মেনে এখনও খুচরা পর্যায় বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটারে ১৭০ টাকায় এবং ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০৫ থেকে ৮১০ টাকায়। এতে বিপাকে পরছেন মধ্য আয়ের জনগণ।

এবিষয়ে ক্রেতা আক্তার হোসেন বলেন, গতকালও শুনেছি দাম কমবে কিন্তু কমেনি। সরকার তো নির্দেশনা দিয়েছে আরও আগে, কিন্তু এখনো দোকানদাররা বলে তেলের ডিলাররা দাম কমায়নি। আরও ২-১ দিন সময় লাগবে তারপর কমবে।

আরেকজন ক্রেতা বাবুল সরদার বলেন, সরকারের সোজা কথা কি ব্যবসায়িরা মানে ? বিভিন্ন অভিযান পরচিালনার পর দাম কমে, ২-৩ দিন পর আবার আগের মতো। খবরে পড়লাম ২০ তারিখে নাকি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ ২ তারিখ এই ১০-১১ দিনেও কি তারা সময় পায় নাই দাম কমানোর। কিছু জিজ্ঞেস করলেই অনেক দোকানদাররা তো বাজে ভাষায় কথা বলে। তারা বলে ‘নিতে হলে নেন, নাইরে যান।’

দিগু বাবুর বাজারের কিশোর মোহন সাহা স্টোরের মালিক কিশোর মোহন বলেন, আমাদের কাছে আগের দিনেরও অনেক তেল আছে। এখন নির্দেশনা আসলে আমরা নতুন দামে বিক্রি করবো এতে আমাদের ২ পয়সা লোকসান হলে হোক। কিন্তু আমরা যে ডিলারদের থেকে মাল আনি তারা এখনো নতুন দাম নির্ধারন করে নাই। তারা বলে আমরা এখনো ২৭-২৮ তারিখের মাল ডিলিভারি দিতেসি। নতুন মাল আসলে দাম জানিয়ে দেবে।

আরেকজন বিক্রেতা হরিশ চন্দ্র বলেন, নতুন দাম আসছে শুনেছি। এই সপ্তাহে আরও নাকি কমাবে। কিন্তু আমার দোকানে যে তেল আছে এগুলো ১৫ তারিখের আনা, এগুলো এখন ১৬৩ টাকা লিচার বিক্রি করি তাহলে আমার কেনা দামেও হয় না। আমার লস হয়। কোম্পানি নতুন দাম ধরে দেবে কাল-পরশু। ওই পর্যন্ত অপেক্ষ করতেসি। অনেক লোক আসে দাম কমার কথা বলে এখন আমাদের কাছে দাম কম না আসলে আমরা কমে কিভাবে বিক্রি করি?

জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও এটিএন বাংলা নিউজের জেলা প্রতিনিধি আব্দুস সালাম খোকন বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এবং এর সাথে প্রশাসনিক যে সকল কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের। গত এক তারিখ ভোক্ত অধিদপ্তর থেকে কর্মকর্তারা এসে নিতাইগঞ্জে তেলের ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন ১৬৩ টাকায় প্রতি লিটার তেল বিক্রি করার জন্য। এরপরও বাজারে আইনটি মানা হচ্ছে না, এটা হচ্ছে এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যে অভিযান চালানোর কথা সেগুলো তারা কিন্তু বিগত দুই দিনের চালায় নি। সামনে রমজান মাসকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগে বহু মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এটা ভোক্তা অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের একটি চরম ব্যর্থতা, যে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আর এই ব্যর্থতার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। উচ্চ মুল্যে জনসাধারণ এই অতি প্রয়োজনীয় তেল কিনছে। ভোক্তা অধিদপ্তর এবং প্রশাসনিক সংশ্লিষ্ট যারা বাজার মনিটরিং এর দায়িত্বে আছেন তাদের উচিত এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা এবং যারা উচ্চ মূল্যের তেল বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তারা বিনা ভোটের সরকার। সংসদের ৮০ শতাংশের বেশি লোক ব্যবসায়ী। মূলত তারাই সরকার পরিচালনা করে। এই ব্যবসায়ীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ সরকার বা আওয়ামী লীগের নেই। তাই ব্যবসায়ীরা যাই বলে সরকারের সেটা শুনতে বাধ্য হয়। তাই সরকারের নির্দেশনা অমান্য করে বা তাদের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের পছন্দমত যে কোন জিনিসপত্রের দাম কমায় বা বাড়ায়। ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমান দেশের সরকার হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সরকার সিন্ডিকেটের সরকার। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকার যা করার তাই করছে। এর জন্যই মূলত জ্বালানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এর মূল্য আরও বাড়াচ্ছে। জনগণের পেটে লাথি মারার এই নিয়ম যে সরকার শুরু করেছে এর আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।

এবিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সেলিমুজ্জামান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি কাজ করছি। বিভিন্ন তেল কোম্পানিদের সাথে নতুন দামের বিষয়ে কথা বলেছি। তারা নতুন দাম নির্ধারন করেছে। তাছাড়া বাজারেও খবর নিচ্ছি। তারপরও অনিয়ম হলে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ অনুযায়ি আমরা ব্যবস্থা নেব।

RSS
Follow by Email