মৌমিতা নারায়ণগঞ্জে চলতে দেওয়া যাবে না: আইভী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নগরীর যানজট ও ফুটপাত দখল সমস্যা সমাধানে এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রেস ক্লাব ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ও সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন প্রেস ক্লাবের কার্যকরী পরিষদের সদস্য আফজাল হোসেন পন্টি ও জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম।
বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, একাধিক বার বিভিন্ন ফোরামে মেয়র বলেছে যে, মৌমিতা অবৈধভাবে চাষাঢ়া দিয়ে কেন চলবে। কেন তাদের রোড পারমিট বাতিল করা হচ্ছে না। আমরা যারা উপস্থিত আছি, তারা সবাই কি একমত হতে পারি, মৌমিতা নারায়ণগঞ্জে চলতে দেওয়া যাবে না। আমাদের শহরেই তো নারায়ণগঞ্জের অনেক বাস আছে। সেগুলোরই ঠিকভাবে পারমিশন দিতে পারি না, চলতে পারে না। পুরো শহর বাসের নগরী। তাহলে কেন আরেক জায়গা থেকে আরেক জন এসে নিজেদের বাসগুলো এভাবে চালাবে। প্রচন্ড দাপটের সাথে শহীদ মিনারের চারপাশে বাস রেখে দিবে। যানজট তারা তৈরী করবে। নির্বিকারে আমরা শুধু দেখবো আর বলবো রাস্তা বড় করতে হবে, ডিভাইডার ভেঙে দিতে হবে। ডিভাইডার কিন্তু আমরা নিজের ইচ্ছায় করি নাই। সম্ভবত ২০০৬ সালের দিকে ইব্রাহিম ফাতেমী এসপি হিসেবে ছিলেন। উনি ট্রাফিক কোন বসিয়ে ছিলেন রাস্তায়, যাতে রিক্সাগুলো সারিবদ্ধ হয়ে যাতায়াত করে। আমি কোন কিনেও দিয়েছিলাম, উনি নিজেও কিছু দিয়েছিলেন। উনি ৩ কি ৬ মাস এ ব্যবস্থার ট্রায়াল দিয়েছিলেন রিক্সা, গাড়ী ও বাসের লেন তৈরীর জন্য। ৬ মাস পর যখন তা সফল হয়, তখন আমাদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয় যাতে আমরা রাস্তায় একটি পারমানেন্ট লেন করে দেই। এতে করে এক লেন দিয়ে রিক্সা ও বাকি লেন দিয়ে গাড়ি চলার ব্যবস্থা করা হয়। যতদিন এসপি অফিস ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে রাখে, ততদিন শহরে কোন যানজট ছিল না। তাহলে এখন বলা হচ্ছে ডিভাইডার সরিয়ে দেওয়ার কথা। ধরে নেওয়া যাক, গত বছরের রোজার সময়ে এসপি অফিস ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনে রাখায় তখন কোন যানজট ছিল না। বিএকএমইএ‘র সহযোগিতা, মাননীয় এমপি সেলিম ওসমান ভাইয়ের সহযোগিতাও ছিল। তখন এ কথা কেন আসলো না যে, ডিভাইডার উঠাতে হবে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় আজ আমরা এখানে যারা বসে আছি, তারা যদি নিজেদের কাজ সঠিকভাবে করি কোন সমস্যাই আর সমস্যা থাকবে না। ট্রাফিকের কাজ হলো ট্রাফিক মেইনটেইন করা। ট্রাফিক তো এ দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, এমপিদের উপর চাপায় দিতে পারে না। আপনাদের (পুলিশের) কাছে আমরা বার বার চিঠি দেই বৈধ-অবৈধ স্ট্যান্ডের বিষয়ে। ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই সম্ভবত শেষ চিঠি দিয়েছি। একটাও কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রেস ক্লাব থেকে যে প্রেজেন্টেশন উত্থাপন করা হলো, খুবই ছোট্ট অল্পতে বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সব সমস্যা আসে নি, কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ তারা প্রফেশনাল না হয়েও বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সমস্যা তুলে ধরেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি জানতে চাই রাইফেল ক্লাবের সামনে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড কেন থাকবে। একাধিকবার আমরা চিঠি দিয়েছি। প্রেস ক্লাবের প্রেসেন্টেশনের এই স্ট্যান্ড এসেছে। এর চারপাশে আরও কতগুলো স্ট্যান্ড আছে, চাষাঢ়া ঘিরে। এত কিছু থাকতে ডিভাইডার উঠানোর কথা বলা হচ্ছে। আবার সরকার ইজিবাইকের অনুমোদন দিচ্ছে না। তাহলে আমি কিভাবে অনুমোদন দেই। প্রায়ই এদের ধরে নিয়ে জরিমানা করছি। ধরেন, সকলকে নারায়ণগঞ্জে একোমডেশন দিতে হবে। কিন্তু এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
আইভী বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন হকার আন অফিশিয়ালী বসতে দেই নাই। সবসময় নির্দিষ্ট জায়গার কথা বলেছি, আচ্ছা এখানে বসো। হকারি দুই এক জায়গায় করতে হয়, করুক। আগে ওরা ডিআইটিতে বসতো, তাদের ডিআইটির পিছনে বসতে দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু রোড হকারমুক্ত করতে ২০০৩ সাল থেকে যে দিন থেকে পৌরসভার হয়ে এসেছি সেদিন থেকে কাজ করছি। এসপি সাহেব (ভারপ্রাপ্ত এসপি) বলেছেন হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। ৬ শ‘ হকারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে, আমার কাছে লিস্ট আছে। একজন এসপি যখন কথা বলবেন, রেসপন্সিবিলিটি নিয়ে কথা বলবেন। ৬ শ‘ হকারকে পুনর্বাসন করার পরও যে উনি (ভারপ্রাপ্ত এসপি) বলেন হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুখ থেকে যখন এ কথা বের হয়, তখন কি আর হকার উঠবে।
মেয়র আইভী বলেন, আজ আমাদের কারও উত্তেজিত হবার নেই। আমরা যানজট ও হকারমুক্ত শহর করতে সমবেত হয়েছি। আমার পাশে শামীম ভাই বলেছেন কথা বলতে। সমস্যার সমাধান বের করতে আমরা বসেছি, সমাধান হবে। সারা নারায়ণগঞ্জের মানুষ প্রেস ক্লাবে আজকের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে। সকল ভোটার তাকিয়ে আছে যে, আজকের সমাধানটা কি হয়। আমাদের শহরে সমস্যা কিন্তু অনেক। কোন প্রকার ঝামেলা যাতে না হয়, ২ টি সমস্যা সমাধানের জন্য আজকে আমরা বসেছি। অন্য সমস্যার কথা বললাম না, কিন্তু এক সমস্যার সাথে অন্য সমস্যা জড়িত।
আইভী বলেন, পুনর্বাসিত ৬ শ‘ হকারের লিস্ট আছে আমার কাছে। তারা তাদের দোকান বিক্রি করে রাস্তায় বসেছেন। পুরো শহর এখন হকারে ভর্তি। শহরের প্রতিটি রোড হকারে ভর্তি। আমরা এর প্রতিকার চাই। আমার কোন অজুহাত শোনার দরকার নাই। এনসিসির কোন কাজ করতে হবে, কোন জায়গায় উচ্ছেদ করতে হবে তা আমাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে আমি তা করে দিব। কিন্তু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা ট্রাফিক ডিপার্টমেনেটর। এর সাথে সিটি কর্পোরেশনের কোন সম্পর্ক নেই। এসপি (ভারপ্রাপ্ত) সাহেব একটি চমৎকার কথা বলেছেন যে, আমি তো যানজটের জন্য ওই কোয়ার্টারে থাকি না। কেন ভাই ওই এলাকায় কি মানুষ থাকে না। আমরা থাকি না। আমাকে তো বন্দী করে রাখছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ট্রাক দিয়ে বন্দী। মেয়রকে আপনার সবসময় দোষারোপ করেন। আপনি (ভারপ্রাপ্ত এসপি) যদি ওই কোয়ার্টারে থাকতেন, তাহলে কিছুক্ষণ হলেও রাস্তা যানজটমুক্ত থাকতো। আমি অনুরোধ করবো আপনি ওই এলাকায় গিয়ে থাকেন। কারণ ওই এলাকায় ড্রেনের সমস্যা ছিল, পানির সমস্যা ছিল সব সমস্যা করে দিয়েছি। রাস্তা-ঘাট সুন্দর করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ট্রাক স্ট্যান্ড নিয়ে মামলা করা হয়েছে হাইকোর্টে। মামলাতে স্পষ্ট রায় দেওয়া হয়েছে, ডিসি সাহেব ও এসপি সাহেবকে দেওয়া হয়েছে উচ্ছেদ করে ওই জায়গাকে মুক্ত করে জানাতে হবে। আগের যিনি ডিসি সাহেব ও এসপি সাহেব ছিলেন, তাদের সাথে মিটিং হয়েছে। আমরা একটা করে লাইন দিয়েছি। এখন একটা লাইন তো দূরের কথা ৩টা ৪টা করে লাইন করে। মাঝে মাঝে আমি ফোন দেই যে, ভাই আমি তো বন্ধী হয়ে আছি। হকার যত্রতত্র বসতে পারবে না, আমাকে উপস্থিত দুই ভাইয়ের (এমপি সেলিম ও এমপি শামীম) কমিটমেন্ট দিতে হবে আজ। এবং আপনারা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। প্রশাসনকে মেয়র বললেও কথা শুনে না। মেয়রের কথা শুনে মেয়রের পাবলিক। মেয়রের কথা ডিসি-এসপি কমই শুনে। সারা বাংলাদেশে এমপিদেরই কথা প্রশাসন শুনে।
গোল টেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক, নারায়ণগঞ্জ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু, বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর, বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুল কবিরসহ জনপ্রতিনিধি ও সকল শ্রেণীপেশার মানুষ।