অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তের জন্য আমার সংসদ সদস্য হওয়া উচিত: সেলিম ওসমান
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, আমার নির্বাচন করা নিয়ে আপাতত চিন্তা করবেন না। আমার থেকে ভালো মানুষ যদি আসে, অবশ্যই তাকে গ্রহণ করে নিবেন। তবে, এবার আমি মনে প্রানে চিন্তা করে নিয়েছি; আমার অসমাপ্ত যত কাজ রয়ে গেছে, সেগুলো সমাপ্ত করার জন্য আমার আরেকবার সংসদ সদস্য হওয়া উচিত। যদি আমার এলাকার মানুষ চায়। তাছাড়া আমার আপা (প্রধানমন্ত্রী)আছেন, তিনি সিদ্ধান্ত দিবেন। তিনি যা বলবেন তাই হবে। কারণ আমি পেছন থেকেও কাজ করতে জানি।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বন্দর উপজেলার মিনারবাড়ী এলাকার মিরকুন্ডী স্কুলের নবনির্মিত দুইটি ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন আমি বন্দরে আসবো। আমাকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। আমার মৃত্যুর পরে আমার নাশটা বন্দরেই রাখতে বলেছি। ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে আমাদের জয় হবেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদেশের দায়িত্ব নিবেন।
তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহ আমাকে সুযোগ দিয়েছেন, অতিতে কাজ করতে পেরেছি। যদি ঠিক মতো কাজ করতে পারি তাহলে ধন্যবাদ দিবেন, না করতে পারলে আমাকে অপরাধী করবেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সরকারও কাজ করছে, আমরাও কাজ করছি। আমার দাদা, বাবা, আমার বড় ভাইও এই এলাকার চার বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর এই দায়িত্বটা নেয়ার জন্য আমার মা আমাকে আদেশ জারি করেছেন। একটা মানুষ যদি সহযোগীতা পায় তাহলে সে ভালো কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, গত ৫, ৬ তারিখ আমার অস্ত্রপাচার করা হলো। ডাক্তার আমাকে সু-নিশ্চিত করেছিলো, আমি হয়তো ওই অপারেশ থিয়েটার থেকে আর ফিরে আসবো না। আমি বার বার বলি, হারাম খাবো না, খেতে দিবোও না। আমি বলেছিলাম যে, আমি থাকাকালীন বন্দরে কোন কাঁচা রাস্তা থাকবে না। অনেকে আমাকে বলে দানবীর, একদম বাজে কথা। শুধু মাত্র আমি কৃপণ না। কারণ আমি জানি, আমাকে যে কাফন পরিয়ে দেয়া হবে; সেটাতে কোন পকেট নাই। আমার ১৮-২০ ঘন্টা কাজ করতে হয়েছে। কাজ করে আমি চেয়েছি আমার মায়ের আদেশ সম্পূর্ণ করার জন্য। আমি তো জানতামই না যে কি করতে হবে। আমাকে সাহয্য করেছে আমার ছোট ভাই মুকুল, রশিদ ভাই এনারা।
তিনি আরও বলেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি না যে, আবারো সংসদ সদস্য হবো। আমার ভুলত্রুটি থাকতে পারে। জনপ্রতিনিধি মানে জনগনের গোলাম। জনগনের জন্য কাজ করবে। আমার আপা (প্রধানমন্ত্রী), যখনই কোন কাজের জন্য বলেছি; আমার কাগজ কোনদিন বিফলে ফিরে আসে নাই। আজকে যদি শান্তির চর হয়ে যেতো, তাহলে এখানে এত মানুষ থাকতো না। কারণ কেউ বেকার থাকতো না।
শামসুজ্জোহা স্কুলকে কৃষি বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হবে উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, একটা মানুষের কয়টা নাতি-নাতনী হতে পারে। আমি যখন একটা স্কুলে যাই, তখন যখন পাখির বাচ্চার মত ওরা ছুটে আসে, কারো কথা শুনে না,‘দাদু এসেছে দাদু এসেছে’ বলেতে থাকে; তখন এর থেকে বড় সুখ মানুষ আর কি পেতে পারে। পাশেই শামসুজ্জোহা স্কুল রয়েছে। আমি চিন্তা করছি, তবে সময় পচ্ছি না; এটাকে স্কুল এন্ড কলেজের পাশাপাশি কৃষি বিদ্যালয় হিসেবে ডিক্লিয়ারেশন দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে প্রত্যেকে চাষাবাদ করতে পারে। আপনি আমাকে এমপি বলবেন, একজন ব্যবসায়ী বলবেন, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো যদি আপনি আমাকে একজন কৃষক বলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, মাদককে দুরে রাখতে প্রতিটি স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। অভিভাবকরা, প্রতিদিন বাচ্চাদের ঘুম থেকে উঠার পর অন্তুত ৯মিনিট তাদের সময় দিবেন। আমার মা কখনো আমাদের ফজরের আজানের পর ঘুমাতে দেন নাই। কোন অবস্থাতেই দিতেন না। ঘুমের ভান করলে তাল পাখার হাতল দিয়ে বাড়ি মেরে উঠিয়ে দিতো। কিন্তু আজকে দেখি অনেক বাবা মসজিদে গিয়ে বড় বড় কথঅ বলতেছে, অথচ তার নিজের বাচ্চা বেলা পর্যন্ত বাড়িতে ঘুমাচ্ছে। মাঝে মাঝে দুঃখ লাগে, যারা ফজরের ওয়াক্তে মসজিদের সামনের কাতারে নামাজ পরে, জুম্মার সময় তাদের দেখা যায় বাইরে চাদর বিছায়ে নামাজ পরতে। আর নতুন নতুন নামাজিরা শুক্রবার দিন ইমাম সাহেবের পিছনের জায়গা লইয়া ধাক্কা-ধাক্কি করে।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন নির্বাচনে দাঁড়াই, তখন কোন দল ছিলো না। একটাই কথা ছিলো, ওসমান পরিবারের সন্তান সেলিম ওসমান। এরশাদ সাহেব যখন নাসিম ওসমান স্কুল উদ্বোধন করতে এসছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে কোন দল নাই; নারায়ণগঞ্জে একটাই দল ‘ওসমান পরিবার’। আমাদের জন্মই হয়েছে মানুষের উপকার করার জন্য। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ডাকলেন। ডেকে বললেন, তোমাদের নারায়ণগঞ্জের থেকে রপ্তানির ব্যবস্থা করো, নয়তো মানুষের কষ্ট হবে। মানুষ কর্মসংস্থান পাচ্ছে না। পুরো নারায়ণগঞ্জে আজ ৫২ লাখ লোক গার্মেন্ট এর সাথে জরিত।
সেলিম ওসমান বলেন, শান্তিরচর যেটা একটা ইকোনমিক জোন। সেটা নাকি দখল করে ওমুক বাবার দরবার, স্কুল বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারা যদি এটাকে না বাঁচান, তাহলে পুলিশ ইউএনও কিভাবে রক্ষা করবে। আজ কষ্ট লাগে বন্দরে সরকারি ভাবে, বা আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে যত গুলো স্কুল আছে সেখানে ৪০ পার্সেন্ট শিক্ষার্থী নাই। আবার নাকি ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। আমি জানি বন্দরে ৪০-৫০ হাজার সু-শিক্ষত ছেলে আছে যারা চাকুরির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে অনুরোধ রাখলাম, এগিয়ে আসো তোমরা। তোমাদের ছোটদের এগিয়ে নিয়ে যাও।
মিরকুন্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মো আক্তারুজ্জামান বাবুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম কুদরত এ খুদা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহাম্মেদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এম এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আফজাল হোসেন, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, নারায়ণগঞ্জ কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. রুমন রেজা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মিরকুন্ডী স্কুলের নবনির্মীত দুইটি ভবনে সমস্ত ব্যায় নিজ অর্থায়ন থেকে দিয়েছেন এমপি সেলিম ওসমান। জানা গেছে, একটি ৪তলা ও একটি ১তলা ভবন নির্মানে ব্যায় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।