মঙ্গলবার, মে ৬, ২০২৫
জেলাজুড়েরাজনীতিসদর

২০ রোজার মধ্যে বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ২০ রোজার মধ্যে এক মাসের বেতনের সমান ঈদ বোনাস ও সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে মানব বন্ধন করেছে জেলা গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন। শুক্রবার (২২ মার্চ) সকাল ১১ টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও শহরের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা শাখার আহ্বায়ক এম এ শাহীন, বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইদ্রীস আলী, সহ-সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আঃ হাই শরীফ, গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’ জেলা শাখার সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন, জেলা শাখার সদস্য তোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈদ-উল ফিতরের ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের কাঙ্খিত ঈদ বোনাস ও সকল বকেয়া পাওনা ২০ রোজার মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে। কেননা ঈদের একটু আগেভাগে শ্রমিকরা টাকা না পেলে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির টিকিট বুকিং, পরিবার পরিজনের জন্য নতুন কাপড়চোপড় কেনা ও হাটবাজার করা সম্ভব হয় না। এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়ার কথা বলে ঈদের চাঁদ উঠা পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বিলম্বে পরিশোধ করার জন্য শিল্প কারখানার মালিকদের সুযোগ করে দিয়েছে। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর এই দায়িত্বহীন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু কারখানার মালিক বারো মাসই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। মাসের পর মাস বেতন-ভাতা বকেয়া রাখে। ফলে সারা বছর শ্রমিকদের ধারদেনা করে চলতে হয়। এসব মালিকরা ঈদকে কেন্দ্র করে সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়। শ্রমিকরা আশায় থাকে ঈদের আগে সকল বকেয়া পাওনা ও ঈদ বোনাস এক সাথে পেলে ধারদেনা কমিয়ে একটু হালকা হবে কিন্তু ঈদ মূহুর্তে গিয়ে অনেক মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।

তাঁরা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের মার্কেটিং ও ঈদ উৎসব উদযাপন করতে বিদেশে পাড়ি জমায়। অন্যদিকে শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে আপজনদের সহিত মিলিত হয়ে ঈদ উৎস পালন করার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। বেতন-বোনাস না পেয়ে ঈদের দিনেও না খেয়ে থাকে চোখের জলে তাঁদের বুক ভাসে। আমাদের দেশের গার্মেন্টস মালিকরা সবচেয়ে বেশি বিলাসী জীবন-যাপন করে অথচ শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়ার বেলায় বিত্তহীন হয়ে পড়ে। বেতন-বোনাস নিয়ে গড়িমসি বা কোন অজুহাতে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত করা কিংবা ঈদের আগে শ্রমিক ছাঁটাই বরদাস্ত করা হবে না। বেতন-বোনাস থেকে কোন শ্রমিককে বঞ্চিত করার দুঃসাহস দেখালে সেই মালিকের বাড়ি ঘেরাও করে সকল পাওনা আদায় করা হবে। শিল্পের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার ও গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ কে আগেভাগেই দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় বেতন-বোনাস নিয়ে শিল্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায় দায়িত্ব মালিকদের’ই বহন করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দেশের মন্ত্রী এমপি’সহ সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারি-কর্মকর্তারা এক মাসের বেতনের সমান ঈদ বোনাস পায় অথচ দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যে শ্রমিক তাঁদের এক’ই হারে বোনাস দেয়া হয় না। অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকদের নাম মাত্র বোনাস দেয়া হয়। এক দেশে দুই নিয়ম চলতে পারে না। ২০ রোজার মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ অপরাপর সকল শ্রমিকদের এক মাসের বেতনের সমান ঈদ বোনাস ও সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ ঈদের ছুটির আগে মার্চ মাসের বেতন প্রদান করতে হবে। তাঁরা আরও বলেন, শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে শ্রমিকরা চরম সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে শ্রমজীবি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। শ্রমিকদের দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য আগামী জাতীয় বাজেটে শ্রমিকদের রেশন দেয়ার জন্য আলাদা বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাষাড়া শহীদ মিনারের গেইটের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

RSS
Follow by Email