সোমবার, জুলাই ৭, ২০২৫
Led03রাজনীতি

১১ মেয়ে ও ১৩৫ শিশুর আত্মত্যাগ ভোলেনি রাষ্ট্র : উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার ১১ জন মেয়ে এবং ১৩৫ জন শিশু শহীদ হয়েছে, এবং সরকার তাদের পরিবারের চোখের জল মুছতে বদ্ধপরিকর।

রবিবার (৬ জুলাই) সকালে নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় ছয় বছর বয়সী শহীদ শিশু রিয়া গোপ ও সিদ্ধিরগঞ্জে শহীদ শিশু সুমাইয়ার পরিবারের খোঁজখবর নিতে এসে তিনি এসব কথা বলেন।

শারমিন মুরশিদ আবেগের সঙ্গে বলেন, “যে বাচ্চাগুলো শহীদ হয়েছে, আমরা তাদের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের মনের ভেতর ধারণ করেছি। ব্যস্ততার অজুহাত দেবো না, নানা ব্যস্ততার জন্য আমরা ছুটে আসতে পারিনি। কিন্তু এবার পুরো জুলাই মাসকেই ডেডিকেটেড করেছি, জুলাই আন্দোলনে যারা চলে গেছে তাদের কাছে গিয়ে বলা যে আমরা তোমাদেরকে ভুলিনি এবং তোমাদেরকে ভুলবো না।” তিনি রিয়া গোপের মাকে সান্ত্বনা দিয়ে জানান, রিয়ার নামে একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে, যা তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবে। তিনি বিশ্বাস করেন, যতবার বাচ্চারা খেলতে যাবে, রিয়ার নাম দেখবে এবং তার আত্মত্যাগের গল্প জানতে চাইবে।

তিনি তার দুটি প্রধান আগ্রহের কথা তুলে ধরেন: “শহীদ নারীযোদ্ধারা যেন রাষ্ট্র নির্ধারিত অধিকার পূর্ণভাবে পান এবং তাদের পরিবারগুলো এখন কেমন আছে, সেই সংকটগুলো বোঝা ও সহায়তা করা।” তিনি শহীদ সুমাইয়ার তিন ছোট ভাই, তার মা ও সন্তানের নিরাপত্তা, লেখাপড়া এবং ভবিষ্যতের জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি আরও যোগ করেন, তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সম্পদ ও সক্ষমতা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়েও তিনি খতিয়ে দেখছেন।

শারমিন মুরশিদ জানান, ১১টি শহীদ নারীযোদ্ধার পরিবার রয়েছে এবং তাদের জীবন ও আত্মত্যাগ নিয়ে একটি গবেষণা ও প্রকাশনা প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, “মেয়েরা অনেক গল্প বয়ে বেড়ায়, অনেক সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে, যা সামনে আসে না। আমরা চাই না, তারা হারিয়ে যাক। তাদের গল্পগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।” তিনি আরও মনে করেন, এই শহীদ পরিবারের সন্তানদের যারা যত্ন করে বড় করবে, তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা বা রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার থাকা উচিত।

উপদেষ্টা বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরলস কাজ করছে। তিনি আশ্বস্ত করেন, “২৪’র জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে, সে সকল শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে রাষ্ট্র ও দেশের মানুষ।”

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শারমিন মুরশিদ বলেন, “আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজেদের ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কাজ শুরু করেছি, যা সাধারণত এত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় না। তবে বিচার দ্রুত করতে গিয়ে অবিচার যেন না হয়, সেটিও মাথায় রাখতে হবে।” তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, “রাষ্ট্র কারও সঙ্গে অন্যায় করবে না। আর যদি কোনো ভুল হয়, তা সংশোধনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা উন্মুক্ত সরকার চালাই—ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারেন, গালও দিতে পারেন, কিন্তু সেই গালের সঙ্গে সমাধানের পরামর্শটাও থাকুক—এটাই কাম্য।”

ঢালাও মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ভুল হয়েছে এবং দ্রুত কাজ করতে গিয়েই কিছু ত্রুটি হয়েছে। তবে তিনি জানান, ডিসি সাহেবরা এখন এসব ভুল সংশোধনের কাজ করছেন।

উভয় সফরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ সকল স্তরে শহীদ পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

RSS
Follow by Email