হাসপাতালে নারী-শিশুর লাশ জিম্মি, ডিসির এক ফোনেই মুক্ত
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিল পরিশোধ না করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ ঘণ্টা ধরে জিম্মি করে রাখা এক নারীর লাশ উদ্ধার এবং তার মুমূর্ষু নবজাতককে পরিবারের কাছে হস্তান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তাঁর দ্রুত উদ্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পদক্ষেপ নেওয়ায় অবশেষে অসহায় পরিবারটি তাদের মৃত স্বজনকে ফিরে পায়।
জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার কালুখালি উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামের রিংকু শরীফের মেয়ে পিংকি শরীফ শুক্রবার সকালে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশে অবস্থিত বেসরকারি বিএনকে হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার বিল পরিশোধ না করায় লাশ আটকে রাখে। অসহায় পিতা রিংকু শরীফ মাত্র ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে অনুরোধ জানালেও লাভ হয়নি।
শুক্রবার রাতে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে আসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ জানান।
অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি দ্রুত বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল হাসানকে জানান। ডা. হাসান এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং রিংকু শরীফের আর্থিক কষ্টের কথা তুলে ধরেন। এরপর দ্রুত পরিস্থিতি বদলে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাত ১০টার দিকে পিংকির মরদেহ ও মুমূর্ষু নবজাতক কন্যাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
শনিবার অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি জানিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি সত্যিই একজন ভালো ও মানবিক ডিসি। তার কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয়।” স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মঈনুল হাসানও এই উদ্যোগের মূল কৃতিত্ব ডিসি জাহিদুল ইসলামকেই দেন।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা লাইভ নারায়ণগঞ্জবে মুঠোফোনে বলেন, “ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। যেহেতু বিষয়টি আমার দায়িত্বপূর্ণ জেলার বাইরে ঘটেছে, তাই আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি স্যারকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিনীত অনুরোধ করি।”
তিনি আরও বলেন, “দায়িত্বের বাইরে হলেও যে কোনো মানবিক কাজ করে যে আত্মিক প্রশান্তি পাওয়া যায়, তা কোটি টাকা খরচ করেও পাওয়া সম্ভব নয়।”
এদিকে, পিংকির পিতা রিংকু শরীফ জানান, নবজাতক কন্যাটিও রাতে মারা যায়। তিনি মা ও মেয়েকে একসঙ্গে গ্রামের বাড়ি কালুখালিতে দাফন করেছেন। তিনি মানবিক সহায়তার জন্য ডিসি জাহিদুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, পিংকিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও দালালচক্রের প্রলোভনে তাকে বিএনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।