রবিবার, জুন ২২, ২০২৫
Led04রাজনীতি

‘হালুয়া-রুটি’ খেতে আসা ব্যবসায়ীদের বিএনপিতে স্থান হবে না: এড. সাখাওয়াত

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের দোসর এবং ‘হালুয়া-রুটি’ খেতে আসা ব্যবসায়ীদের বিএনপিতে কোনো স্থান হবে না। তিনি সম্প্রতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ’র বিশাল আপ্যায়নের সমালোচনা করে তার আওয়ামী লীগের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং সিটিজেন ব্যাংকের মালিকানার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আনিসুল হকের পার্টনার, সে ব্যক্তি কি আপনাদের স্বার্থ দেখবে?’

শনিবার (২১ জুন) দুপুরে ধামগড় ইউনিয়নের আমুর বটতলায় আয়োজিত, মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে, দোয়া মাহফিল ও খাবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “গত ১৫ বছর আমরা কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করি নাই। আমরা কিন্তু আপনাদের পাশেই ছিলাম আর আপনারাও আমাদের পাশে ছিলেন। আপনারা আমাদের সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন বলেই আমরা শক্তিশালী ছিলাম। রাজপথে হরতাল, মিছিল ও আন্দোলন সংগ্রাম করতে পেরেছি।”

তিনি বলেন, বিএনপি থেকে যারা এমপি মনোনয়ন পাবে, তাদেরকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ক্যাটাগরি: যারা বিগত ১৬ বছর রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরি: যারা ক্লিন ইমেজের অধিকারী এবং এলাকায় জনসমর্থন রয়েছে। তৃতীয় ক্যাটাগরি: দলের নেতাকর্মীদের সাথে সু-সম্পর্ক এবং তাদের প্রতি কমিটমেন্ট রক্ষা করা, ও তাদের সকল প্রকার সমস্যা সমাধান ও পাশে থাকা।

তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “আজকে যারা ব্যবসায়ীরা বিএনপির মনোনয়ন নিতে চান, তারা কি এই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়েন? আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নমিনেশনের পরীক্ষা গত ৫ই আগস্টের মধ্যেই সমাপ্ত। গত ৫ই আগস্টের পূর্বে যারা যে পরীক্ষা দিয়েছে, সেটার ওপর নির্ভর করে নমিনেশন হবে।”

সাখাওয়াত হোসেন খান আরও যোগ করেন, “আমাদের সাথে কেন্দ্র নেতৃবৃন্দদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তাদের একই কথা – যারা মাঠে ছিল, ইমেজ ভালো, নেতাকর্মীদের সাথে সু-সম্পর্ক রয়েছে, তাদেরকেই মনোনয়ন দিয়ে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো হবে। যারা জনগণকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদেরকে জাহির করার চেষ্টা করছেন, তাদেরকে বলে দিতে চাই আপনারা ভুল করছেন। বিএনপিতে তিন ক্যাটাগরি রয়েছে, সেই ক্যাটাগরিতে তারা পড়ে না। সুতরাং তাদের নির্বাচন করার কোনো অধিকার নেই, তাদের বিষয়ে আমাদের চিন্তা করার কোনো লাভ নাই।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই সুন্দর নারায়ণগঞ্জ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের মধ্য দিয়ে আমরা সেই সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই। বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।”

সাখাওয়াত হোসেন খান অভিযোগ করেন, “গত ১৫ বছরে ওই সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানরা নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের জনপথ হিসেবে গড়ে তুলেছিল। এই বন্দরের মানুষের জায়গা সম্পত্তি দখল করা হয়েছিল। কারা দখল করেছিল তা আপনারা কিন্তু সবাই জানেন। আমরা এই ধরনের নারায়ণগঞ্জ আর চাই না। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জের ও বন্দরের মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করবে।”

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ – কোনো মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুকে বিএনপিতে স্থান দেওয়া হবে না। যারা বিএনপিতে আছেন তাদের প্রতি সতর্কবার্তা দিলাম। যদি এমন কেউ থাকেন যারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও মানুষের উপর জুলুম করেন, তাহলে আজ থেকে ভালো হয়ে যান। না হলে আপনাদের জায়গা হবে জেল আর আপনারা বিএনপি করতে পারবেন না।”

তিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তী সময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে তাৎক্ষণিক সময় যারা ব্যর্থ হয়েছিল, বাংলাদেশের বিপদের ওই সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। ২৫ মার্চ কাল রাতে যখন পাকিস্তানিরা নিরীহ বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল, সেই সময় শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের হাতে ধরা দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। আর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা পালিয়ে গিয়ে ভারতে নিজেদের জীবন রক্ষা করেছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “সেই সময় বিপদগ্রস্ত বাঙালি যখন কোনো দিক নির্দেশনা পাচ্ছিল না, তখন সেনাবাহিনীর অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিল কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে নাই। ওই সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদম মধ্যম সারির মেজর ছিলেন। তিনি মধ্যম সারির হলে কী হবে, তার বুক ভরা ছিল দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সাহস। দেশের মানুষ ও দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে তিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে এবং তার পরিবারের প্রতিও মায়া না করে সেদিন তিনি চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন।”

সাখাওয়াত খান বলেন, “শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, তিনি যুদ্ধ করেছিলেন, পালিয়ে যাননি। তিনি জেড ফোর্স গঠন করেছিলেন এবং একটি সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীন করেও তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি, তিনি কিন্তু ব্যারাকে ফিরে গিয়েছিলেন। আর ১৯৭৫ সালে দেশী ও বিদেশি চক্রান্তর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ড যখন ধ্বংসের পথে, তখনই তিনি সিপাহী জনতা বিপ্লব করে জিয়াউর রহমানের হাতে দেশের ক্ষমতার ভার দিয়েছিলেন।”

তিনি বলেন, “তিনি কিন্তু সরাসরি ক্ষমতা নিতে চাননি, সিপাহীরাই তার হাতে ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় এসে দেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছিলেন। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি এদেশের মানুষ ততদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।”

ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহিন আহমেদ, হুমায়ূন কবির, বন্দর থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ পনেজ, যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান রিপনসহ নেতৃবৃন্দ।

RSS
Follow by Email