স্বৈরাচারদের ভাল-মন্দ সব কিছু বর্জন করুন
হাবিবুর রহমান বাদল: অন্তর্বির্তকালিন সরকারের দুইমাস পাঁচদিন শেষ হলেও যে প্রত্যাশা নিয়ে জুলাই বিপ্লবে প্রায় দুহাজার ছাত্রজনতা প্রাণ দিয়েছিল। সেই বিপ্লবকে সফল করতে স্বৈরাচারের গ্যাস সেল আর বুলেটের আঘাতে কেউ অন্ধ, কেউ পঙ্গু আবার কেউ যন্ত্রনায় কাৎরাচ্ছে তাদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ত্রিশ হাজারের বেশি আহতরা এখন স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে চাইছে। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের আন্দোলনকে বেগবান করেছে দেশের সাধারন মানুষ। তবে একথা সত্য বিগত ষোলবছর এদেশের রাজনৈতিক দলগুলি হাজার হাজার মামলার শিকার হয়েছে। হমলা মামলা আর গুম খুনের মধ্য দিয়ে জেল জুলুমের তোয়াক্কা না করে সরকার পতনের ক্ষেত্র তৈরী করেছে। তবে এটাও সত্য আবু সাঈদের মত বুলেটের সামনে দাড়িয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জীবন দেয়ার মানসিকতা দেখাতে পারেনি। যা শহীদ আবু সাঈদসহ কয়েকজন মধ্য জুলাইতে বুলেট বুকে নিয়ে আন্দোলনের বারুদের মুখে আগুনের সলতা লাগিয়ে দেশের আপামর জনতাকে মাঠে নামতে উজ্জীবিত করেছে। আবু সাঈদের হত্যার দৃশ্য দেখে কোন বিবেকবান মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি। ছাত্রদের আন্দোলনে রাজপথে নেমে এসেছে সকল পেশার মানুষ। এমনকি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দেখেছি রিক্সা চালক ভাই তার দিন শেষের আয় দিয়ে কলারুটি কিনে আন্দোলনকারীদের মূখে তুলে দিয়েছে। ঘরের কুলবধুরা সাধ্যমত ছাত্রদের সন্তান স্নেহে ঘুখে খাবার তুলে দিয়েছে। মা তার সন্তানকে আন্দোলনে যেতে উৎসাহিত করেছে। যে শিশু জানেনা এই আন্দোলন কিসের জন্য সেও জুলাই আন্দোলনের অংশিদার হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্রদের আত্মত্যাগ আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আগে কখনো এভাবে মাঠে নামেনি। এবার তাদের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। এ আন্দোলন কোটা আন্দোলনে শুরু হলেও জনতা মাঠে নেমেছে দেড়দশকের ক্ষোভ থেকে। লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎকারী হিটলারের প্রেতত্মার স্বৈরাচারী মনোভাবের সাথে ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে। আইনের শাসন প্রতিষ্টা, দ্রব্যমূল্য লাগামহীন, স্বৈরাচারীর দোসরদের লুটপাট দলবাজি আর দখলবাজিতে অতিষ্ট হয়ে ছাত্র জনতা মৃতু্য অবধারিত জেনেও রাজপথে নামে। পাঁচ আগষ্ট কথিত লৌহমানবি পালিয়ে যায়। তার দোসররা ছুটাছুটি করতে থাকে পালানোর আশায়। দুইমাস পাঁচদিন চলে গেলেও অন্তর্বতিকালিন সরকার শহিদদের রক্ত যে কারনে তার হিসাব চাইতে শুরু করেছে জনতা। আইনশৃংখলার তেমন উন্নতি হয়নি। দ্রব্যমূল্য এমন হচ্ছে যেন খাওয়ার জন্য নয়, দেখার জন্য। দলবাজি দখলবাজি মামলাবানিজ্য থেকে শুরু করে যা চলছে তা যদি অব্যাহত থাকে তবে এ চব্বিশর সাথেই স্বৈরাচারকে টেক্কা দিতে পারবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশও মানছে না। আলজাজিরার এক রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জের কতিপয় নেতার নাম ধরে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত এমনটাই দাবী করেছে সামাজিক মাধ্যমে। এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থার কথা শুনিনি। দেশে অন্ততবর্তিকালিন সরকার অথচ নব্য বিএনপি নেতাদের দাপটে খোদ বিএনপির জনপ্রিয়তায় প্রশ্ন তুলছে জনতা। পনের বছর পদপদবীর কারনে মামলার শিকার হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে অথচ জুলাই আন্দোলনে অনেকেই দুরত্ব বজার রেখে চলেছে। ৫ আগষ্ট থেকে যেন বিলাই বাঘ হয়ে গেছে। আন্দোলনে নিজেদের অবদান বিশাল এই তত্ব নিয়ে ব্যাস্ত সবাই। কোন সেক্টরই তারা ছাড়বেনা আওয়ামী লীগের সন্তাসীদের মত। স্বৈরাচারের দোসররা পদপদবীদের প্রায় সবাই শতকোটি টাকার মালিক। তাদের ষড়যন্ত্র থামেনি। নতুন করে এ সরকারকে ব্যার্থ করতে বিএনপিকে কিনতে পারে তারা। অতীতে তো আজকের ক্ষমতাসীন আর গলাবাজদের আপোষ করেই চলতে দেখেছি।
সুতরাং আওয়ামী স্বৈরাচারদের ভালো মন্দ সব বর্জন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন। ভালটা বর্জন করতে বলছি এজন্য যে ওদের ভালোর মধ্যেও উদ্দেশ্য ছিল আর থাকবে। সেনাবাহিনীর ভুমিকায় আঠার কোটি মানুষ গর্বিত। (স্বৈরাচারের দোসরদের বাদে)। পুলিশ এখনো জনতার পাশে ঐ অর্থে নামেনি। দেশ রক্ষায় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যেমন ভুমিকা পালন করেছে তেমনি চাঁদাবাজ দখলকারিদের বিরুদ্ধে শাড়াসী অভিযান চায় দেশবাসী। পাঁচ আগষ্ট থেকে পনের অক্টোবর পযন্তর্ বিত্তবৈভব আর অর্থবিত্তের খবর নিলেই সব বেরিয়ে আসবে। এত আত্মহুতি ত্যাগ আর রক্ত কিছু নামধারী রাজনৈতিক নেতার কারনে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন বোধক হোক এটা কারো কাম্য নয়।
লেখক: হাবিবুর রহমান বাদল
সম্পাদক, দৈনিক ডান্ডিবার্তা