স্ত্রীকে জবাই করে হত্যার চেষ্টা, অভিযুক্ত স্বামীর শাস্তির দাবি মহিলা পরিষদের
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: খানপুরে প্রাক্তন স্ত্রীকে জবাই করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে, মো. সেলিম সোহাগকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
মর্মান্তিক ঘটনার বিষয়ে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় যে, প্রাক্তন স্বামী কর্তৃক গলাকেটে এক নারীকে হত্যার চেষ্টাকালে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে মুমুর্ষ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের খানপুর (৩০০ শয্যা বিশিষ্ট) হাসপাতালে ভর্তি করে। এর আগে, গত ১০ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টায় খানপুরে ওই ঘটনা ঘটে।খবর পেয়ে মহিলা পরিষদের একটি তদন্ত টীম বুধবার ১১ মার্চ দুপুর ২টায় ভুক্তভোগী নারীকে দেখতে এবং খোঁজ নিতে হাসপাতালে যান।
টিমের সদস্যরা হলেন জেলার সদস্য রাশিদা বেগম, প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ সুজাতা আফরোজ, সদস্য কাউসার আক্তার পান্না ও শহর কমিটির সদস্য সুফিয়া বেগম।
মহিলা পরিষদের এক বার্তায় তারা উল্লেখ করে জানান, তার অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। একটু একটু কথা বলতে পারছে। তদন্ত টিমের সদস্যরা ভুক্তভোগী ও তার খালার সাথে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন। সোহাগ বিবাহিত জীবনের শুরু থেকেই তুচ্ছ কারনে ভুক্তভোগীকে শারীরিক নির্যাতন করত এবং ব্যবসার জন্য টাকা চাইতো। চায়ের দোকান করার জন্য কিস্তিতে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ করে সেই নারী সোহাগকে দেয়। তাছাড়া ভুক্তভোগী শহরের আনোয়ারা গার্মেন্টসে চাকরি করে। প্রতি মাসের বেতনও স্বামীকে দিয়ে দিত। তারপরও সোহাগের মন ভরতো না, নির্যাতন চলতেই থাকে। এক পর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে ভুক্তভোগী নারী সোহাগকে ডিভোর্স দেয়। সোহাগ দেনমোহর পরিশোধ করেনি, এমনকি ঋণের টাকাও পরিশোধ করেনি। তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে, জোর করে সন্তান দুটিকেও তার কাছে রেখে দেয়। দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় ভুক্তভোগীকে সন্তানদের দেখে আসার সুযোগ দেওয়া হয়। সন্তানের মা তাদের জন্য প্রতিমাসে টাকা প্রদান করে।
ঘটনার আগের দিন আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সন্তানদের জন্য টাকা নিয়ে সে সাবেক শ্বশুরবাড়িতে যায়, শ্বশুর -শাশুড়ি টাকা না নিয়ে তাকে অপমান করে। বড় মেয়েকে দিতে চাইলে সে বলে- টাকা নিলে বাবা রাগ করবে। ভুক্তভোগী ফিরে আসে।
এ খবর জানার পর সোহাগ পরদিন সকালে রাস্তায় ওত পেতে থাকে। অফিস যাওয়ার জন্য সকাল সাড়ে ৬টায় বের হলে ভুক্তভোগীকে পথ আগলে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তার বুকের উপরে উঠে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে দেয়ার চেষ্টা করলে ভুক্তভুগী নারীর চিৎকারে আশেপাশের লোক ছুটে এলে এই পালিয়ে যায়। ততক্ষণে তার গলার অনেক অংশ কেটে যায়, রক্তাক্ত নারী ছটফট করতে থাকে। পথচারীরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টায় সে বেঁচে যায়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে সোহাগ এবং তার বাবা বিল্লাল হোসেনের নামে মামলা করা হয়েছে। তারা পলাতক রয়েছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার কাছে মহিলা পরিষদের পক্ষে থেকে জানতে চাওয়া হলে, দ্রুত তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান। সোহাগ ও তার পরিবারের সকল সদস্য পলাতক রয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রীনা আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক রহিমা খাতুন এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা এবং সকল শিশু ও নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতন মামলার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। যাতে কেউ আর এরকম ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।