বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Led04আড়াইহাজারজেলাজুড়েফতুল্লাবন্দররূপগঞ্জসদরসিদ্ধিরগঞ্জসোনারগাঁ

সোমবার গণহত্যা দিবস, বাঙালির বিভীষিকাময় সেই রাত

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সোমবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালির ইতিহাসের কালরাত, মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। এই দিন রাতের বেলায় পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুমিয়ে থাকা বাঙালিদের হত্যা করা হয়।

মূলত, বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এর জন্য যে অভিযানের নীলনকশা প্রস্তুত করা হয়, তার নাম অপারেশন সার্চলাইট। এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সেই আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তাঁর কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট। কিন্তু তাদের এই চেষ্টাও দমিয়ে রাখতে পারে নি বাঙালিদের। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত হয় স্বাধীণতা। জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।

স্বাধীণতা লাভের অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের কথা ভুলে নি বাঙালিরা। দেশজুড়ে এই দিনটি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৫ মার্চ এ গণহত্যা দিবস পালনের লক্ষ্যে এবছরেও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আগামী ২৫ মার্চ রাত ১১টা থেকে ১১টা ১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। এছাড়া প্রশাসন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচী পালন করবে।

RSS
Follow by Email