বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
Led01

সোনারগাঁয়ে সারজিসের হুংকার ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা করলে আরেকটা গণবিপ্লব হবে’

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, খুনি হাসিনা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের টিস্যুর মতো ব্যবহার করেছে। তাদের বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে গেছে। আমাদের একটি লড়াইয়ের আন্দোলনে খুনি হাসিনা ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। তার থেকে আমাদের অসংখ্য শিক্ষা নেওয়ার আছে। নিজে পালানোর আগে পরিবারকে সেফট এক্সিট দিয়েছে। অথচ সে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করে বিপদের মুখে রাস্তাঘাটে ফেলে পালিয়ে গেছে।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত ক্যাম্পেইনে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস বলেন, পনেরো-ষোলো বছরে যখন আপনাদের কঠিন সময় ছিল তখন কোনো নেতাকে আপনি পেয়েছেন, আবার কোনো নেতা বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থেকে কিংবা দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এমন অনেক নেতাকর্মী ছিল যাদের বিগত ১৬ বছরে খুঁজে পাননি। তারা এখন নতুন করে বিভিন্ন রূপে এই বাংলাদেশে এসেছে। তারা এখন মাথায় হাত বোলাচ্ছে। যাদের আপনাদের কঠিন সময়ে পাশে পাননি। অনুরোধ করি, এখন সুবিধাজনক সময়ে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার মতো এই অমানসিকতা দেখাবেন না। যদি দেখান- তাহলে হাসিনা যেভাবে নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে পালিয়েছে- আপনাদের অবস্থাও একই হবে।

তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আসছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা নাহিদ ইসলাম যিনি এই অভ্যুত্থানের ঘোষক, তাকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি যেন পুরো বাংলাদেশকে আবার আমরা সামনের সারিতে থেকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। সেজন্য আমাদের নাহিদ ইসলাম যেন ওই ক্ষমতার মন্ত্রণালয় ছেড়ে আবারও জনতার কাতারে এসে দাঁড়ান। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত ১৬ বছর যে চর্চাগুলো ছিল আমরা এখন আবার সে চর্চাগুলো নতুন করে দেখতে পারছি। স্পষ্ট কথা যারা এইসব চর্চাগুলো করে এসেছে তাদের রক্তে ওই চর্চা একদম মিশে গিয়েছে। সেই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে তাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে, যারা এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া মানে কেন্দ্রীয় কয়েকজন না, তারা এই সোনারগাঁসহ সারা দেশের মানুষ। সারা বাংলাদেশে অভ্যুত্থানে যারা সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সামনে থাকতে হবে।

সাজরিস বলেন, এ বাংলাদেশ চাঁদাবাজি ছিল, চাঁদাবাজি হচ্ছে। সিন্ডিকেট ছিল, সিন্ডিকেট হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সোনারগাঁয়ের শিল্প নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব যা ছিল তাই আছে। বিভিন্ন প্লট থেকে শুরু করে যতো টাকার ভাগবাটোয়ারা হতো এখন তার চেয়ে কম হয়না বরং আরও বেশি হয়। মনে রাখতে হবে অভ্যুত্থানের লড়াইয়ে ৫-৬ জুনে আমরা ৫০০ জনও রাজপথ ছিলাম না। কিন্তু ৫ আগস্টে আমরা ৫ কোটি মানুষ পুরো বাংলাদেশের রাজপথে নেমেছিলাম। এ জন্য সময় দিতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আগামি নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহারের চেষ্টা করলে দেশে আরেকটা গণবিপ্লব হবে। ফ্যাসিস্ট বিরোধী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল সকল শ্রেণীপেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখনো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল,পুলিশ ও বিচারক সুবিধার আশায় খুনিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে৷ এদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছাত্ররা ক্ষমতা মুখী নয়, ক্ষমতার চেয়ে জনতাই তাদের কাছে মূল্যবান।

জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও শাকিল সাইফুল্লাহর সঞ্চালনায় এ ক্যাম্পেইনে আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সোনারগাঁয়ের শহীদ মেহেদীর বাবা ছানাউল্লাহ ও শহীদ ইমরানের মা কোহিনূর আক্তার এবং আন্দোলনে নির্যাতিত ছাত্র শাকিল আহমেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের শত শত শিক্ষার্থী ও নেতারা।

RSS
Follow by Email