সোনারগাঁয়ে মীম হত্যা: “অন্য বউকে ডিভোর্স দাও” – এই চাপেই খুন!
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সোনারগাঁয়ে চাঞ্চল্যকর সায়মা আক্তার মীম (২০) হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নিজের কথিত স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন প্রধান অভিযুক্ত মো. রায়হান। জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেছেন, মীম তাকে তার ‘অন্য স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে ও আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় বিয়ে করতে’ চাপ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান।
বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নূর মহসিনের খাস কামরায় রায়হান এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। নারায়ণগঞ্জ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. কাইয়ুম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত রায়হানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে, নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর, গত ১৪ অক্টোবর বিকেলে সোনারগাঁ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের কাইকারটেক ব্রিজসংলগ্ন একটি ঝোপ থেকে স্কচটেপে মোড়ানো বস্তাবন্দী অবস্থায় মীমের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। স্থানীয়দের কাছ থেকে দুর্গন্ধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
নারায়ণগঞ্জ নৌপুলিশের পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, লাশ উদ্ধারের মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই স্বজনরা মীমের পরিচয় শনাক্ত করেন। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত অভিযান চালিয়ে ওই দিন গভীর রাতে, রাত দেড়টার দিকে কুমিল্লা থেকে অভিযুক্ত রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাবনার সুজানগর এলাকার সায়মা আক্তার মীমের সঙ্গে কুমিল্লার রায়হানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সূত্রেই তারা প্রায় এক বছর ধরে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকার আমতলায় ফিরোজ মিয়ার বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করছিলেন। এই সময়ে মীম অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়েন। কিন্তু, দুই মাস আগে রায়হান গোপনে আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করেন। মীম বিষয়টি জানতে পেরে রায়হানকে তার ওই স্ত্রীকে তালাক দিয়ে মীমকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করার জন্য তীব্র চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এই কলহের জেরেই রায়হান পূর্বপরিকল্পিতভাবে গত ১০ অক্টোবর রাতে মীমকে কাইকারটেক ব্রিজসংলগ্ন বালুর মাঠে নিয়ে যান। সেখানেই হিজাব দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মীমকে হত্যা করেন। এরপর রায়হান নিহতের হাত-পা স্কচটেপে পেঁচিয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে বস্তাবন্দী করে ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন ঝোপে ফেলে দেন।
পুলিশ বলছে, রায়হানের জবানবন্দিতে এই পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ উঠে এসেছে, যা মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনেছে।