সোনারগাঁয়ে বৈরী আবহাওয়ায় লিচু চাষে বিপর্যয়, হতাশ চাষী-ব্যবসায়ীরা
# ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ‘কৃষি অফিসের কোন সহায়তা পাননি’
#গাছের পরিচর্যা, পোকামাকর নিধনে পরামর্শ ও সামগ্রী দিয়েছি: কৃষি কর্মকর্তা
#কয়েকটা লিচু বাগান জেলা প্রশাসনের আন্ডারে নিয়েছি: ইউএনও
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সোনারগাঁয়ের লিচু বাগানে পাকতে শুরু করেছে বিখ্যাত কদমী লিচু। লিচু পাড়তে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগানের চাষী ও ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে এ জাতের লিচু। তবে শীলবৃষ্টি ও তীব্র তাপদাহের দরুণ ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। লিচুর ফুল ও মুকুল ঝরে পড়ায় আশানুরূপ ফলন হয়নি। সেই সাথে ফলের স্বাদ ও আকারে পরিবর্তন আসায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষীরা।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, পানাম, নোয়াইল, হারিয়া, বারদী, সেনপাড়া, দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, সোনারগাঁ পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগড়াপাড়া, সনমান্দি, সাদিপুর ইউনিয়নের খাসনগর, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, লোকশিল্প জাদুঘর, গোবিন্দপুর, গাবতলী, বালুয়া দিঘীরপাড়, কৃষ্ণপুরা, তাজপুর, ইছাপাড়া, দুলালপুরসহ ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ১০৮ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক লিচু বাগান রয়েছে। এসব বাগান গুলোতে প্রায় ৭শ’ মেট্রিক টন লিচুর ফলন হয়।
উপজেলার বিভিন্ন লিচুর বাগান ঘুরে জানা যায়, চাষীরা বাগানে কদমী, চায়না-৩, মোজাফফরপুরী, এলাচি, পাতি জাতের লিচু চাষ করে থাকেন। বর্তমানে সোনারগাঁয়ে সব থেকে বেশী চাষ হয় কদমি লিচু। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন পূর্বের তুলনায় অনেক কম হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের লিচুর বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। তাদের দাবি লেবারদের খরচ নিজের পকেট থেকে বহন করতে হবে। এমন বিপর্যয়েও কৃষি অফিসের কোন সহায়তা পাননি বলে অভিযোগও করেন তারা।
বাগান মালিক ও মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীরা জানান, রোদ ও শীলবৃষ্টির কারণে ওষধ কাজ করে নাই, ফলনে ব্যাপক বিপর্যয়। এবার মনে হচ্ছে লেবার খরচ বাসা থেকে এনে দিতে হবে। আবহাওয়া একবার খড়া, এরপর শীলাবৃষ্টি, একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমরা কোন সহযোগীতা পাইনি। এবার কদমি লিচুর আকারটাও ভালো হয়নি। লিচু অনেক বড় বড় হয়, একটা ছড়ায় ২০-৩০টা লিচু হয়। কিন্তু সেখানে এবার ২-৩টা হইছে। গত বছরের চেয়ে এই বছরের অনেক খারাপ হয়েছে। সময় মতো বৃষ্টি হলে আরও ভালো হইতো। ১২-১৩ লাখ টাকার বাগান ২-৩ লাখ টাকাও তুলতে পারছি না।
লিচু চাষিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এই বছর অবস্থা খারাপ। লিচু ঝড়ছে, পোকা হচ্ছে। স্টাফের যে খরচ আছে, সেগুলো ঠিক মতো দিতে পারছে না মালিক। পোকামাকড়ের জন্য যে ওষধ দিয়েছে, অতিরিক্ত রোদ ও তাপের কারণে সেগুলো কাজ করে নাই। এবার লিচুর সাইজ ছোট, দাম ৪ থেকে ৫টাকা। কাস্টমার পর্যন্ত ঘ্যাণ ঘ্যাণ করে লিচুর সাইজ দেখে। কিন্তু প্রতিবার লিচুর পিস আমরা ৭ থেকে ৮ টাকা বিক্রি করি। এবার মালিকরা টাকা দিতে পারছে না।
এব্যাপারে সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, সোনারগাঁয়ের লিচু আগে আসে বাজারে। লিচুর বাগান গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ১শ’ এক হেক্টরের মতো জমি ছিলো, এবার সেটা ১শ’ সাত থেকে আট হেক্টর জমিতে হয়েছে। গত বছর ৭শ’ মেট্রিক টন ফলন হয়েছিলো। কিন্তু এই বছর আমরা আশাবাদী ছিলাম ৭শ’ থেকে ৭শ’ ৫০ মেট্রিক টন যাবে, যেহেতু আমাদের ৫ হেক্টর জমি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এবার আমাদের আবহাওয়া কিছুটা বৈরী ও তাপদাহ ছিলো। এতে অনেক লিচু ঝড়ে গেছে। পোকা মাকড়ের কারণে ঝড়ে পরছে কিনা এগুলো নিয়ে পরামর্শ দিয়েছি। লিচুর ফলন শেষ হলে গাছের একটা পরিচর্যা করতে হয়, সেটার বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছি। উপজেলায় কিটনাশক স্প্রে করার স্বল্প কিছু মেশিন আছে, চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো আমরা দিয়েছি। সরকারিভাবে চাষিদের জন্য কৃষি অফিসের আলাদা কোন বরাদ্দ হয়নি। আমাদের লিচু চাষিদের কিছু চাহিদা বর্তমান এমপি স্যারের কাছে আমরা দিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন পরের বছর কৃষি খাত থেকে আমাদের লিচু চাষিদের জন্য কিছু বরাদ্দ রাখবেন।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, সোনারগাঁয়ের লিচু খুব বিখ্যাত। প্রচলিত ও অপ্রচলিতভাবে সবাই এখানে লিচু চাষ করে থাকে। তাপদাহ খরার ও বৃষ্টিতে যেমন পরিপুষ্ট হওয়ার কথা ছিলো তেমনটা হয়নি এবারের লিচু। তাই বাগান মালিকরা হতাশ। যদি কোন চাষি বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে আমরা কৃষি ডিপার্টমেন্ট থেকে যদি কোন প্রণদোনা আসে তাহলে আমরা সহযোগীতা করবো।
তিনি আরও বলেন, ট্যুরিজমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা একটি অ্যাপ খুলেছি। কয়েকটা লিচু বাগান জেলা প্রশাসনের আন্ডারে নিয়েছি। কেউ যদি চায় তাহলে লিচু বাগানে গিয়ে ছবি তুলতে পারে, লিচু পাড়তে পারবে, কিনে নিয়ে যেতে পারবে। এতে করে আমাদের এখানে যে ভালো লিচু হচ্ছে সেটা তারা জানতে পারছে।