সিদ্ধিরগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াসউদ্দিন ‘আইনের শাসন ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও মিথ্যা অপপ্রচারের’ প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সিদ্ধিরগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গিয়াসউদ্দিন তার বক্তব্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ১৬ বছর জনগণের সমর্থন ছাড়া প্রহসনমূলক নির্বাচন দেখিয়ে, বল প্রয়োগের ক্ষমতায় বসে ছিল। এ সময় তারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, দেশের অর্থসম্পদ চুরি, লুন্ঠন ও পাচার করেছে।” তিনি বলেন, রাজনীতি করার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশের মানুষ ও কল্যাণের জন্য কাজ করা, কিন্তু শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতি কলুষিত হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, “দেশের ভালো মানুষ এখন রাজনীতি করতে অনিহা প্রকাশ করে, রাজনীতি করতে লজ্জাবোধ করে, রাজনীতিবিদ পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। কারণ শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রী, এমপি ও রাজনীতিবিদরা এমনভাবে রাজনীতিকে কলুষিত করেছে যে, রাজনীতিবিদরা আজকে মুখ দেখাতে পারে না। অনেক রাজনীতিবিদকে চাঁদাবাজ, ধান্ধাবাজ, দখলবাজ ও লুটপাটকারী দুর্নীতিবাজ বানিয়েছে। অনেকের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সন্ত্রাস বানিয়েছে। বিরোধীদলকে দমন করার জন্য অস্ত্র তুলে দিয়ে নিরস্ত্র মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে। রাজনীতিবিদদের যেমন চরিত্রহরণ করেছে তেমনি তাদের অসৎ হতে বাধ্য করেছে।”
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, “ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে গেছে। পাঠ্যপুস্তকে যে সমস্ত বিষয় সম্পৃক্ত করেছে আপনারা জানেন, আমরা গল্প খর্ব করি সকল ধর্ম নিয়ে যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপরায়ণ মানুষ। যেখানে ধর্ম বিরোধিতা রয়েছে সেগুলো পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করতে বাধ্য করেছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের জীবন যাতে ধ্বংস হয়ে যায় সেজন্য অটোপ্রমোশনের ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ করে দিয়েছে। তারা পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। তারা তো দেখছেই যে পড়াশোনা করলেও পাশ করছে, না পড়লেও পাশ করছে। একটা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার শিক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অথচ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সন্তান আত্মীয়স্বজন বিদেশে থাকে। তার পার্লামেন্টের মেম্বাররা সবাই বিদেশে পড়াশোনা করায়। কারণ তাদের কাছে রয়েছে সম্পদের পাহাড়। তারা মনে করত তাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে এসে এই দেশের মানুষের উপর মাদবরি করতে পারে।”
তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-ওলামাদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে বলেন, “শেখ হাসিনা আমাদের দেশকে একটি দেশের কাছে বিক্রি করে বন্ধক রেখে কাজ করত। সেজন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ওলামায়ে কেরামদের পছন্দ করত না। এই কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা, মক্তব শিক্ষার উপর কঠোর স্টিমার রুলার চালিয়েছে। মাদ্রাসার বিরুদ্ধে এমন বক্তব্য দিত মনে হতো সেখানে শুধু জঙ্গি তৈরি হয়। মাদ্রাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নাটক সাজাত তারা নাকি জঙ্গি। অনেক প্রাণ তারা নষ্ট করেছে। নিরপরাধ মানুষ কে জেলে রেখেছেন। অতীতে কখনো ওলামায়ে কেরামদের প্রতি এমন অত্যাচার হয়নি।”
মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, “আমি জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ৫৩ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করতে দেয়নি। ৩ বার নিজেরা নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে নষ্ট করেছে। মানুষ যখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার যখন কোথাও যাওয়ার জায়গা পাবে না। তখন মানুষ আইনের কাছে যাবে। কিন্তু এই আইনের শাসনকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা।”
সভায় সিদ্ধিরগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।