সিদ্ধিরগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমাবেশ ও মিছিল
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: সিদ্ধিরগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকাল ৫টায় সিদ্ধিরগঞ্জ চৌধুরীবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় এ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাসদের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে এ সমাবেশে বাসদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সমন্বয়ক সেলিম মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, বাসদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সদস্য নির্মল বর্মন, তৌহিদুল ইসলাম সুজন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে। বাংলাদেশের মানুষ এক অপ্রতিরোধ্য লড়াই আর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে এক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল এই জুলাই মাসে। সে সময় মানুষ স্লোগান তুলেছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, লুটাপাট—দূর্নীতি, গুম—খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে। মানুষ চেয়েছিল এসব থেকে মুক্ত একটা সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু বছর না পেরোতেই মানুষের সেই আশা ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসছে। এক বছর পার হলেও সরকার এখন পর্যন্ত আহত—নিহতদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারল না, যা গোটা জাতির জন্য দুঃখজনক। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে সারা দেশে মব সন্ত্রাস সংঘটিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই মবকে নিয়ন্ত্রণ এর চেষ্টা না করে বরং কিছু ক্ষেত্রে উসকানোর ঘটনাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এই মবের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে আছে। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী শক্তি ছিলেন এদেশের নারীরা। অথচ সেই নারীদের উপরে আক্রমণ নেমে এসেছে সবার আগে। উগ্র ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তি সারা দেশেই নারীদের স্বাধীন চলাফেরার উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, হামলা হয়েছে আদিবাসীদের উপর ও মাজারে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে। এসকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধ এই জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের চেতনার সাথে যা সাংঘর্ষিক।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, একই সাথে পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের মতো এই সরকারের নানা কুশীলবদের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আসছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তোষণ ইত্যাদি নানা কিছু ঘটিয়ে এরা জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটের বিপরীতে হাঁটা শুরু করেছেন। নেতৃবৃন্দ সরকারের এক বছরের কাজের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের কাজে মনযোগ না দিয়ে সরকার এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থে বন্দর ইজারা, রাখাইনে করিডোর, অস্ত্র কারখানা নির্মাণের অনুমতি ও স্টার লিংকের সাথে চুক্তি করে দেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্তে জড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘ্ন হতে পারে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানান। একই সাথে অবিলম্বে সুষ্ঠু, অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করারও দাবি করেন।