নারায়ণগঞ্জ রাজনীতি ও সঠিক ইতিহাস
খোকন সাহা: ১২ বৎসর/১৩ বৎসর যাবৎ প্রায় প্রতি ইংরেজী মাসের ৭ তারিখে নারায়ণগঞ্জের স্বঘোষিত বুদ্ধিযোদ্ধা দাবীদার ব্যক্তিরা ৭ জন লোকের সমাবেশ করে, ১০ জন বক্তা হাজির করিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় নারায়ণগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্যদের নাম উল্লেখ করিয়া মিথ্যা তথ্য বিবর্জিত বক্তব্য প্রদান করিয়া ইতিহাস বিকৃতি করিয়া আসিতেছে, যাহা দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। কুচক্রী মহলের এহেন বক্তব্য নারায়ণগঞ্জের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ প্রতিবাদ করে আসিতেছে। তথাকতিত মহলটির কাজ হইতেছে- নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করা ও জিয়াউর রহমান/এরশাদের মত ইতিহাস বিকৃতি করা। তাদের পড়ালেখার মান এতকম ভাবতে অবাক লাগে। তারা নিজেদের চেহরাটা কখনোও আয়নায় দেখে না। তারা প্রগতিশীল লেভাস ধরে প্রতিক্রিয়া শীলদের হাত শক্তি শালী করে চলছে। তাদের বুঝা উচিৎ তারা কিংবা তাদের পূর্ব পুরুষগন ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা অংশ গ্রহণ না করে এমন কি মুক্তিযোদ্ধের পূর্বে আন্দোলনে অংশ না নিয়ে এবং ৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধের পরে দেশ গড়ার কাছে অংশ না নিয়ে কথা বলে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্তি করার কাজে লিপ্ত।
গত ৭ই মার্চে ১টি মঞ্চে একজন বক্তব্য শুনলাম, উক্ত সভার সভাপতি ব্যক্তি। জনাব রাফিউর রাব্বি ৬ দফা সমর্থন নিয়ে মহা ভুল তথ্য দিলেন যাহা সঠিক তথ্য বিবর্জিত। মৃত ব্যক্তি নিয়ে কথা বলা সঠিক না। আমি জানি গত ৭ই মার্চের রাব্বি সাহেবদের সভায় উপস্থিত কার কার পিতা ঐ সময় আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে পি.ডি.এম. করেছিলেন। ১৯৬৬ সালের নারায়ণগঞ্জের ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি-প্রয়াত এ.কে.এম শামসুজ্জোহা সাহেবের সভাপতিত্বে জনসভা হয়। সভা বালুর মাঠে হয় নাই হয়েছে, টাউন হল মাঠে (বর্তমানে যে স্থানে জিয়া হল) ঐসভাতে বঙ্গবন্ধু ৬ দফাকে বাঙ্গালী জাতির মুক্তি সনদ হিসাবে ঘোষনা করেছিলেন। সভায় পরের দিন “দৈনিক ইত্তেফাক” পত্রিকার শিরোনাম ছিল “দশ কোটি মানুষের এ মুক্তি সংগ্রাম প্রতিরোধের ক্ষমতা কাহারও নাই। নারায়ণগঞ্জের অভূতপূর্ব জন সমাবেশে শেখ মুজিবের ঘোষনা। জনসভার পরের প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়-পাট ব্যবসায়ী, সিটি আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগের পঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে মাল্য ভূষিত করা করেন। ৬ দফায় প্রতিক হিসাবে বঙ্গবন্ধু ৬টি শান্তি কপোত উড়িয়ে দেয়।
সভাশেষে ৬ দফা প্রতীক হিসাবে ৫টি মশাল জ্বালাইয়া সংগ্রামের শপথ গ্রহণ করা হয় এবং ঐ দিন নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিঃ পূর্বে সভা শুরু হয় এবং রাত ৮টা পর্যন্ত সভার কাজ চলে। এটা ছিল দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশিত খবরের অংশ সকলের একটি কথা মনে রাখা উচিত। সত্য চিরদিন সত্য, সত্যের জয় সব সময়।
আমি সব সময়ে বলি- এই শহরের ৫০ বছরের উপরের ইতিহাস আমি জানি, জানি স্বাধীনত উত্তোক্টর নারায়ণগঞ্জের কে.কি করছে, লুটপাট করা করেছে। কার পিতা কোন নেতার চামচা করতো, শহরের কারা কারা রিলিফের সামগ্রী আত্মসাত করেছে, কে কে ঐ সময় কালোবাজীর সাথে যুক্ত। মনে সান্তনা পাই এইভাবে যারা কখনোও আওয়ামী লীগ না করে, কখনো বাম/দক্ষিণ পন্থী/উগ্র পন্থী ডানপন্থী রাজনীতি করেছে তারা সঠিক না জেনে বক্তব্য/বিবৃতি প্রদান করেন কিংবা তারা রাজনৈতিক ভাবে হতাশায় নিম্মজিত। নারায়ণগঞ্জের সন্তান হিসাবে সবার প্রতি অনুরোধ আমাদের সবার বয়স ৬০ উর্দ্ধে। আমাদের সংযত হয়ে কথা বলা প্রয়োজন। নতুবা ষড়যন্ত্রকারী, অপপ্রচারকারীরা এক সময় নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে আস্তা কুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। আসুন আমরা ইতিহাসকে সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করি।
লেখক: প্রবীন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ