মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
Led01বন্দররাজনীতি

সাবেক চেয়ারম্যান মুকুলের ওপর হামলা: বজলুসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বন্দরের হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টিআই কাজের সাব-ঠিকাদার ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২৯ জুন) রাতে মোস্তাকুর রহমান বাদী হয়ে সোনারগাঁয়ের বিএনপি নেতা বজলুর রহমানসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করে বন্দর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলা নং- ৪৬(৬)২৫, ধারা- ১৪৩/ ৩৪১/ ৩২৩/ ৩২৪/ ৩২৫/ ৩০৭/ ৩৮৫/ ৩৭৯/ ১১৪/ ৫০৬/ ৫০০ পেনাল কোড-১৮৬০। এর আগে রবিবার (২৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্দর থানার হরিপুরস্থ ৪১২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

মামলার এজাহারভুক্ত অভিযুক্ত করা হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার কুতুবপুর এলাকার মৃত মতিউর রহমান মিয়ার ছেলে বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলু (৫৫), একই এলাকার মৃত আলী মিয়ার ছেলে রাসেল (৪৪), আলী আক্কাস মিয়ার ছেলে কামাল ওরফে কেরা কামাল (৪৪), ফজলুর রহমানের ছেলে গোলজার (৪৮), কাশেম মিয়ার ছেলে নাদিম (৩৮), মৃত আবুল বাশারের ছেলে আব্দুল করিম নোমান (৩৫), মৃত আক্তার হোসেনের ছেলে আকাশ (২৫), মৃত সিরাজ উদ্দিন মিয়ার দুই ছেলে সেলিম (৪৫) ও শামীম (৪২), মৃত মগবুল হোসেনের ছেলে শাহজালাল (৪০), মৃত ছালিম উদ্দিন মিয়ার ছেলে হযরত আলী (৫৬), রফিক মিয়ার ছেলে রাজ মিয়া (৫৫), সাদেক আলীর ছেলে সাইদুর ওরফে সাইফুল (৪৪), মৃত লতিফ মিয়ার ছেলে হানিফ (৪২), ফজলুর রহমানের ছেলে আক্তার (৪৫), মিছির আলীর ছেলে ইসমাঈল (৫৮), বশির উদ্দিন মিয়ার ছেলে খালেক (৫৮) এবং একই এলাকার আলী আক্কাস (৩৬) সহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২ জুন) মেসার্স দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ হাজীগঞ্জ ফতুল্লা ইউপি টেন্ডারের মাধ্যমে হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টিআই কাজের কার্যাদেশ পায়। প্রায় ৩০ লাখ টাকা পিজি (পারফরম্যান্স গ্যারান্টি) জমা দিয়ে বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই জের ধরে সোনারগাঁও থানার কুতুবপুর এলাকার বজলুর রহমান নেতৃত্বে উল্লিখিত সন্ত্রাসীসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন মেসার্স দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার (২৯ জুন) দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় সাব-ঠিকাদার ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান মুকুল (৬৮) এবং মামলার বাদীসহ সোবহান ও কাউছার বন্দর থানাধীন হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য যান। এসময় অভিযুক্তরা অতর্কিতভাবে তাদের গাড়ির চারদিকে ঘিরে গতিরোধ করে। একপর্যায়ে গাড়িতে থাকা অবস্থায় ১ নম্বর অভিযুক্তের নির্দেশে উল্লেখিত সকল অভিযুক্তসহ অজ্ঞাত অভিযুক্তরা বেআইনি জনতাবদ্ধে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুকুল ও বাদীর কাছে পূর্বের দাবিকৃত চাঁদা পুনরায় দাবি করে। তারা বলে, দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে দেবে না।

বাদী ও মো. আতাউর রহমান মুকুল এবং তাদের সঙ্গীরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ১৩ নম্বর অভিযুক্ত সাইদুর ওরফে সাইফুল তাদের দুজনকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নামায়। ২ নম্বর অভিযুক্ত রাসেল তার হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আতাউর রহমান মুকুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করে। ৩ নম্বর অভিযুক্ত কামাল ওরফে কেরা কামাল তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মুকুলের মাথার ডান পাশে কপালের উপরে আঘাত করে মারাত্মক জখম করে। ৪ নম্বর অভিযুক্ত গোলজার মুকুলের গালের বাম পাশে আঘাত করে মারাত্মক জখম করে। ১৩ নম্বর অভিযুক্ত সাইদুর ওরফে সাইফুল তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আতাউর রহমান মুকুলের ডান পায়ের পাতায় হাড়ভাঙ্গা গুরুতর জখম করে।

পরবর্তীতে অভিযুক্তরা তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সকলের ওপর আক্রমণ করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে। ১১ নম্বর অভিযুক্ত হযরত আলী, ১২ নম্বর অভিযুক্ত রাজ মিয়া ও ১৮ নম্বর অভিযুক্ত আলী আক্কাস সাবেক চেয়ারম্যানমো. আতাউর রহমান মুকুলের গায়ে পরা পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলে তার সম্মানহানি করে। ৭ নম্বর অভিযুক্ত আকাশ আতাউর রহমান মুকুলের একটি ব্যবহৃত আইফোন মোবাইল (মূল্য আনুমানিক ১,৫০,০০০/- টাকা) সহ মানিব্যাগের ভেতর থাকা ১,২০,০০০/- টাকা নিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে খুন ও জখমের হুমকি দিয়ে চলে যায়।

পরে স্থানীয় লোকজন থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরবর্তীতে থানা পুলিশের সহায়তায় আশেপাশের লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আতাউর রহমান মুকুলকে নারায়ণগঞ্জ মেডিনোভা ও সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।

এ ব্যাপারে বন্দর থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) লিয়াকত আলী গণমাধ্যমকে জানান, এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত অভিযুক্তদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

RSS
Follow by Email