বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৪, ২০২৫
Led04গণমাধ্যম

সাংবাদিক প্রীতির প্রচেষ্টায় আরও এক রেমিটেন্স যোদ্ধার লাশ ফিরল দেশে

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সাহসী নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতির সহযোগিতায় সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পটুয়াখালীর জহিরুল ইসলামের (২৭) লাশ দেশে ফিরেছে। বুধবার (২৩ জুলাই) ভোর ৪টা ২৫ মিনিটে কার্গো বিমানের BS382 ফ্লাইট যোগে রিয়াদ থেকে তার মরদেহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

জানা গেছে, জহিরুল ইসলাম ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি কর্মসংস্থানের খোঁজে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি কর্মস্থল থেকে পলাতক ছিলেন এবং তার কোনো নিয়োগকর্তা ছিল না। ফলে তার মরদেহ দেশে ফেরত আনার খরচ বহন করার মতো কেউ ছিল না।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর হতদরিদ্র আব্দুর রশিদ মৃধার ছেলে জহিরুল ইসলামের পরিবার নারায়ণগঞ্জের পাগলা বৈরাগীবাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া। লোকমুখে খবর পেয়ে জহিরুলের পরিবার সোনিয়া দেওয়ান প্রীতির কাছে তাদের সন্তানকে শেষবার দেখার আকুতি নিয়ে আসেন। প্রীতি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, গত ৩০ জুন রিয়াদের হাইল নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জহিরুল ইসলামের মরদেহ হাইল বাগা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে।

সৌদির রিয়াদ থেকে দূতাবাস কর্মকর্তা মো. আরশাদ জানান, “সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি আমাদের একাধিক দূতাবাস কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে জানান যে, ৩০ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মো. জহিরুল ইসলামের (পাসপোর্ট নং- A03016593) মৃতদেহটি যে কোনো মূল্যে সরকারি খরচে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য তিনি সহযোগিতা চান। কিছু আইনি জটিলতা থাকায় আমরা তাকে দ্রুত সহযোগিতা করতে পারছিলাম না।”

তবে সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি তার অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যান। তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে সকল আইনি জটিলতার সমাধান করে মৃতদেহটি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখেন। মো. আরশাদ আরও বলেন, “তিনি একজন সাহসী নারী, এবং আমি ও আমার টিম যথাসাধ্য তাকে এই মানবিক কাজে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।”

লাশ দেশে পৌঁছানোর পর প্রীতি জহিরুলের পরিবারের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দেন। এছাড়া, দাফনকার্য সম্পাদনে সহযোগিতার জন্য লাশ বহনের জন্য সরকারি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থাও করে দেন তিনি। এসময় দাফন-কাফনের প্রয়োজনে মৃত জহিরুলের পরিবারের হাতে ৩৫,০০০ টাকার একটি চেকও তুলে দেওয়া হয়।

এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক কাউসার সরকার, সাংবাদিক সাব্বির শেখ এবং মৃতের পরিবার।

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি বলেন, “নিয়োগকর্তা না থাকা, কর্মস্থল থেকে পলাতক থাকা সহ মৃত্যু নিয়ে বড় ধরনের একটি আইনি জটিলতা থাকায় খুব সহজে মৃতদেহটি দেশে আনা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য বাংলাদেশী প্রবাসী নারী-পুরুষ কর্মী মারা যাচ্ছেন সৌদিতে। সবার লাশ সরকারি খরচে দেশে পাঠানোর মত ফান্ড সরকারের থাকে না। এছাড়া সবাই এই সিস্টেমগুলোই জানে না। তবে শেষ পর্যন্ত জহিরুলের মায়ের কাছে তার বুকের ধনকে শেষবারের মত দেখার সুযোগ করে দিতে পেরেছি, সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখো কোটি শোকরিয়া এবং রিয়াদ দূতাবাস সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সকল কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আসলে তারা সবাই সরকারি চাকরি করেন ঠিকই, কিন্তু তাদের মাঝে দেশপ্রেম আছে বলেই তারা আমাকে কাজটিতে ঐকান্তিক সহযোগিতা করেছেন।”

প্রীতি আরও জানান, পরবর্তীতে তিনি মৃত জহিরুলের হতদরিদ্র পরিবারকে আর্থিক অনুদান আদায় করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

উল্লেখ্য, প্রবাসে নানা কারণে নিহত রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মৃতদেহ সরকারি খরচে দেশে আনা সহ মানবিক এই নারী সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি এ পর্যন্ত সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্যাতিত অসংখ্য নারী কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। পাশাপাশি প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যায় তিনি বরাবরই তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছেন। বিশেষ করে তিনি প্রবাসী নারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিকসহ কর্মস্থলে তাদের অধিকার আদায় ও তাদের কল্যাণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করে চলেছেন।

RSS
Follow by Email