সাংবাদিকতা আদর্শের পেশা হলেও পত্রিকায় যা প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা ব্যবসা: গিয়াসউদ্দিন
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বিগত সময় সকল বিভাগেই স্বৈরাচারের দোসর ছিল, ঠিক তেমনি প্রেসক্লাবেও কিছু স্বৈরাচারের দোসর আছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য এ কথা বলেন তিনি।
সভায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতি অভিযোগ করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, বিগত সময় সকল বিভাগেই স্বৈরাচারের দোসর ছিল, ঠিক তেমনি প্রেসক্লাবেও কিছু স্বৈরাচারের দোসর আছে। সেটা এখানের সাংবাদিকরা খুব ভালোভাবেই জানেন। না জানার ভান করে থাকলে চলবে না, এটাই প্রেসক্লাবের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। সাংবাদিকদের মধ্যেও কিছু সাংবাদিক অস্ত্র হাতে সেদিন মাঠে ছিল। আপনারাই বলেছেন সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। অনেকের অভিযোগ আমাদের দল থেকে কিছু লোক বিপথগামী হয়েছে। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর পর এখন দেশে যে সময় তৈরি হয়েছে, সেখানে সবাই যে ফেরেশতা হয়ে যাবে কিংবা সন্ত্রাসী ছিল তার বিপরীত হয়ে যাবে এই ধারণা সঠিক নয়। নৈতিকতা বিরোধী কাজের কারণে তাদের কোমর ভেঙে গেছে, তারা এখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কোন কাজ করতে পারে না। অনেক পুলিশ অফিসার পালিয়ে গেছে অথবা গ্রেফতার হয়েছে নতুন বা চাকরিতে যোগদান করেনি।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, ৫ তারিখের পর নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় বহু মামলা হয়েছে। আপনারা যদি মনে করেন এই মামলা কারা করছে সেটা বিএনপি জানে তাহলে এই ধারণা ভুল। যারা মামলা পড়ছে তাদের পাশে যদি আমরা থাকতাম, সেই মামলা পাওয়ার পর তাদের জীবনের অর্ধেক শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এখন যে মামলাগুলো হচ্ছে সেগুলো কেমন মামলা হচ্ছে আপনারা জানেন। প্রেস ক্লাবের প্রতি আমাদের কেন অভিযোগ থাকবে না? মামলা দিল অন্য কেউ এবং আপনার প্রেসক্লাবের সদস্য দাঁড়িয়ে বিএনপির সভাপতির নাম যখন বললেন তখন গোটা বিএনপিকে আপনার সামনে এসে দাঁড় করিয়েছেন, আপনার প্রতিপক্ষ বানিয়েছেন। চিল কান নিয়ে পালিয়েছে বলে নিজের কান না খুঁজে চিলের পিছে দৌড়াবেন, আপনারা তো এই শ্রেণীর মানুষ না। মামলা হওয়ার পর আপনারা যদি অনুসন্ধান করে দেখতেন এই মামলার পেছনে কে আছে, তাহলে আপনাদের প্রতি আমাদের এই অভিযোগের বিষয়টি থাকতো না।
গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিক স্বৈরাচারী সরকারের দোষক ছিল। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে কিছু কিছু সাংবাদিক আমাদের দলের নেতাদের নাম এফ আই আর এ লিখে দিয়েছে। অনেক সাংবাদিক আমাদের লোকজনদেরকে ডিবির সাথে গিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। সেগুলো আমরা ভুলে যাবার আপনারা না জেনে আমাদের উপর দোষারোপ করবেন, এটাতো নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দদের করা বাঞ্ছনীয় না। আপনাদের আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। আপনারা অনেক নিউজ করেন, কিছু নিউজ আমার পক্ষেও থাকে বিপক্ষেও থাকে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে নিউজ করার পর, আমি কি কোন সাংবাদিককে ফোন দিয়েছিলাম? অথচ এমন সময় গেছে যখন স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে একটা কথাও আপনারা বলতে পারেন নি। সাংবাদিকদের ওপর মামলা হুমকি ও মারপিট করা হয়েছে। আমাদের দলের ভেতরেও তো সবাই ভালো আছে এমনটা নয়, তবে আমরা যখন দলের কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধের তথ্য পেয়েছি সাথে সাথে একশন নিয়েছি। অনেকের আমার কথা ভালো না লাগতে পারে কিন্তু আমার মনে যা আছে আমি সেটা খুলে বলতে চাই, আমি মুনাফিক না।
স্থানীয় প্রত্রিকার প্রতি অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ স্থানীয় পত্রিকা গুলো যথেষ্ট ভালো সেবা দেয়। ৫ তারিখের পর কিছু খবরের কাগজে দেখা যায় কোন এক নেতাকর্মীর অনেক অপরাধের তথ্য তুলে ধরেছে, আবার অনেক পত্রিকায় তাকে ফেরেশতা তুল্য বানিয়ে দিয়েছে। এগুলোতে আমাদের মধ্যে বিরুপ ধারণা হবে না কেন? তবে আমি এটা স্বীকার করি লোকাল পত্রিকার সাংবাদিক এবং প্রেসক্লাব এক না। তবে এই পত্রিকা গুলো আপনাদের মান সম্মান কতটুকু নষ্ট করেছে এটা একবারও ভেবে দেখেছেন? আমরা আহ্বান জানাই এই গুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। প্রয়োজন আর আপনারা বসেন, কোন সাংবাদিক এই পেশার জন্য কতটুকু যোগ্য সেটা যাচাই-বাছাই করেন। সাংবাদিকতা হলো একটি আদর্শের পেশা, তবে পত্রিকায় যেটা প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা একটি ব্যবসা। আমাদের দলের মধ্যেও যেমন ভালো খারাপ আছে, আপনাদের মধ্যেও কিছু ভালো খারাপ আছে। তাদের বাছাই করে শুধু ভালোদের নিয়ে একটি সংগঠন করা উচিত। ভালোদের এই নারায়ণগঞ্জ কে ভালো রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং খারাপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, তবে প্রেস ক্লাবটি হচ্ছে সবথেকে সম্মানীয়। এখানে কি সাংবাদিকের এই বিষয়গুলো বিবেচনা না যায় না? আমাদের প্রেসক্লাব যদি সম্মানিত হয়, তাহলে আমরাও গর্ব করে অন্যান্য জেলার প্রেসক্লাবের সাথে তুলনা করে কথা বলতে পারব। আবার আপনারাও চাইবেন কোন নেতা যেন গডফাদারের না হয় দেশ ছেড়ে না পালায়।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রুমন রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ, মোস্তফা করীম, সিনিয়র সাংবাদিক অহিদুল হক খান, আফজাল হোসেন পন্টিসহ নেতৃবৃন্দ।