বুধবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Led01রাজনীতি

সন্তানের সৎ পথে উপার্জন গর্বের বিষয়, অবৈধ পথে নয়: গিয়াসউদ্দিন

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ‘দেশ ভালো তখনই হবে যখন সমাজে ভালো মানুষদের প্রতি সম্মান দেওয়া হয়। ভালো মানুষদের কদর বৃদ্ধি পেতে হবে। একজন ভালো মানুষ রিক্সাচালক হতে পারেন। মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভালো মানুষ হতে পারেন। তারা সহজ সরল জীবন যাপন করেন। সেই মানুষটা ভালো, তাকেই সম্মান দিতে হবে। আমরা যখন ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করি, তখন সমাজের বড় চোর, দুর্নীতিবাজ, ঘুষ খোরদের বের করে প্রধান অতিথি করি। তার কাছে টাকা আছে, তাকে প্রধান অতিথি-বিশেষ অতিথি বানালে তার থেকে সাহায্য নিয়ে মসজিদের কাজ করা যাবে। এমন মানুষদের অমরা প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মান দেই। খারাপ লোকেরা ভাবতে শুরু করেন, তারা সম্মান পাচ্ছেন শুধু টাকার কারণে। সে অন্যায় পথে টাকা কামানোর পথে আরও ধাবিত হয়। কিন্তু আমাদের ভালো মানুষদের যথাযথ সম্মান করতে হবে। তখন আমাদের সন্তানরা ভাববে, আমি যদি সৎ পথে চলি তাহলে সমাজের সম্মানের অধিকারী হবো।’

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় শিক্ষা কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এই কথা বলেন। এর আগে, সানারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের ৫৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে গিয়াসউদ্দিন বলেন, মাদ্রাসা, স্কুল কলেজসহ নানান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন আমাদের সন্তানকে ভর্তি করি, তখন স্বপ্ন দেখি ছেলে মেয়ে পড়াশুনা করে ভালো মানুষ হবে। ঐ ছেলে মেয়ে যখন শিক্ষিত হয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে, প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা হয় তখন তারা ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে। সেই সময়ে আমরা বাবা-মায়েরা গর্ব করে বলি, আমার ছেলে বাড়ি করেছে, গাড়ি কিনেছে। আমরা সন্তানদের উপর থেকে শাসনের চাবুক নামিয়ে ফেলি। ছোটবেলা নিজের ছেলে-মেয়ে যখন কোন বড়ই-পেয়ারা গাছ থেকে ফল চুরি করে তার জন্য কঠিন শাস্তি দেয়া হয়। যখন রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে, চুরি করে, ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে, চাঁদাবাজি করে তখন আমরা পিতারা গর্ব করি। এত টাকা কি করে অর্জন করলি, অল্প সময়ে কিভাবে আসলো এই সম্পদ এই প্রশ্ন করি না সন্তানকে। ঘুষখোর সন্তানের জন্য খুব প্রশংসা করি। আবার, সন্তান যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয় তখন আমরা দুঃখ করি। আমরা বলি, জীবণে কিছুই করতে পারে নাই। অথচ, সন্তান সৎভাবে উপার্জন করে এটাই ছিল গর্বের বিষয়। চোর, বাটপারকে নিয়ে গর্ব করি আমরা। এই কারণে সমাজের চেহারা পরিবর্তন হচ্ছে। শিক্ষিত মানুষ যত বাড়ছে, খারাপ মানুষের সংখ্যা ততই বাড়ছে। খারাপ মানুষের সংখ্যা বাড়লে দেশ ভালো হবে কিভাবে। আমাদের ভালো ও শিক্ষিত মানুষ তৈরী করতে হবে।

তিনি বলেন, সমাজের পুরুষরা সন্তানের জন্য টাকা পয়সা খরচ করি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সন্তানের ভালো ভবিষ্যতের পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান তার মার। কাজের জন্য আমরা বেশিরভাগ পুরুষ ঘরের বাইরে থাকি। সন্তানের লেখা-পড়া, খাওয়া দাওয়া, আচার-আচরণ সহ সকল দায়িত্ব নেন মা। মায়েরা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করে দেয়। ভালো খাবার সন্তান, পরিবারের স্বজনদের খাইয়ে অবশিষ্টাংশ নিজে গ্রহণ করেন। কাজেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে মায়েদের প্রতি, আমাদের মেয়েদের প্রতি। তাদেরকে যদি আদর যত্নে রাখতে পারি, আমাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্ব আরও সুন্দরভাবে পালন করতে পারবেন। আমাদের সন্তানেরা ভালো মানুষ হতে পারবে, শিক্ষায় অগ্রসর হতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা পুরুষরা পরিবারে ছেলের সকল আবদান শুনি। অথচ স্ত্রীর, মেয়ের কোন কথা শুনি না। আমি কামাই করি, আমি যা বলবো স্ত্রীর তা শুনতে হবে এটাকে বলে স্বৈরশাসন। পরিবারে প্রথম গণতন্ত্র দিতে হবে। এর উপর সমাজের গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে। ষোল বছর সৈরাচারী সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারা আমাদের দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। অযোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। যার শিক্ষা-দিক্ষা নেই সে কিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির প্রধান হয়। তার লজ্জা থাকা দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসায় রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সকল মানুষের। এইখানে যেন কোন রাজনীতি ঠাই না পায়। আমার দলের কেউ যোগ্য না হলে এই সকল প্রতিষ্ঠানে যেন না আসতে পারে। যারা যোগ্য তারাই নেতৃত্ব দেবে। যোগ্যদের নেতৃত্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সুন্দর হয়ে উঠবে।

RSS
Follow by Email