বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
Led01বিশেষ প্রতিবেদন

সড়ক-ফুটপাতে নানা ভোগান্তি, সমাধানের অপেক্ষায় নগরবাসী

# পুরো শহরটাই পুরান ঢাকার মতো হয়ে গেছে: রফিকুল ইসলাম জীবন
# বিগত সরকোরের এমপি-মন্ত্রী-মেয়র সমস্যা সমাধানে কাজ করেনি: টিপু
# আমরা একটা অপরিকল্পিত নগরবাসী হিসেবে বসবাস করছি: হাফিজুল ইসলাম
# এ সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত করছি: ডিসি
# প্রতিটা বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখেই কাজ করছি: এনসিসির প্রশাসক

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নগরীর সড়ক যানজট মুক্ত ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরেই। জনগণ, প্রশাসন, এমনকি দুই মরেুর রাজনীতিবিদদের একই টেবিলে বসিয়েও সেই যাদুতে সমাধান হয়নি এই ভোগান্তির। সংশ্লিষ্ঠরা বলছে নগরীর সড়ক ও ফুটপাত অবমুক্ত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। তবে এই ভোগান্তির সমাধান কবে হবে সেই অপেক্ষোর প্রহর শেষ হচ্ছে না নগরবাসীর।

সরেজমিনে দেখা যায় এখনো নগরীর ব্যস্ত সড়কগুলোর মাঝেই বাস থামিয়ে তোলা হচ্ছে যাত্রি, ফুটপাতে পার্কিং স্পট বানিয়ে রাখা হয়েছে মটোরসাইকেল, হকারাও বানিয়েছে তাদের ব্যবসায়িক জোন, প্রধান সড়কের প্রায় অর্ধেক গিলে রেখেছে ফলের দোকান ও বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং, সাথে আছে অবৈধ অটো-সিএনজির অসংখ্য স্ট্যান্ড, যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে ময়লার স্তুপ। এগুলো ছাড়াও কিছুদিন পর পর গ্যাস-বিদ্যুতের লাইনে কাজের নামে রাস্তা কাটাও যেন নিত্যদিনের চিত্র। এতে নগরীর প্রায় অধিকাংশ সড়ক-ফুটপাতে চলাফেরা করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে লাইভ নারায়ণগঞ্জকে দেয়া এক বক্তব্য নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন বলেন, আসলে পুরো শহরটাই পুরান ঢাকার মতো হয়ে গেছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন কিছু নগর পরিকল্পনা নেয়া দরকার। নগরের প্রায় প্রতিটি সড়কে হকারদের দখলে। প্রথম থেকেই হকারদের সমস্যাটা আমরা সমাধান করতে পারলাম না। সেটা এখন আরও বেশি বেড়েছে। তাও মেয়র থাকতে কতটুকু কাজ হতো, এখন সেটাও হচ্ছে না। আগে তো হকাররা তাও ফুটপাত দখল করতো, এখন তারা তিন স্তরে বসছে। ৫ আগস্টের পর শহরে হকার তিন গুণ বেড়েছে। এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে একসময় শহরটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। সিটি কর্পোরেশন ও তার অদম্য গতি নিয়ে কাজ করতে পারছে না, আগে কাউন্সিলর ছিল তারাও কিছু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতো। এখন সেটাও হচ্ছে না। নির্বাচন আসলে এই মুহূর্তেই হওয়া দরকার। যেমন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা লিংক রোডটা করা হলো। দেখা যায় সাইনবোর্ড থেকে চানমারী পর্যন্ত আসতে লাগে ২০ মিনিট কিন্তু চানমারি থেকে চাষাঢ়া আসতে লাগে এক ঘন্টা। তাহলে এত টাকা দিয়ে লিংক রোড সংস্কারের কাজ তো লাভ হলো না। রাস্তার মাঝখানেই একটা মসজিদ পড়ে গেছে। সেটা সরানো যাচ্ছে না এবং চাষাড়ার মাঝখানে কাজ করাও যাচ্ছে না। এই নগরীর এই সমস্যাগুলো দেখার আসলে কেউ নেই।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, এই নগরকে পরিকল্পনাহীন ভাবে সাজানো হয়েছে। বিগত সরকোরের এমপি-মন্ত্রী-মেয়র কেউ সমস্যা সমাধানে কাজ করেনি। তারা নিজেদের উন্নয়নে, লোটপাট, জালিয়াতি কিভাবে করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করেছে। শহরের প্রধান সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই কেন পানি জমবে। কিছু দিন আগেই কালির বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনার সরকার শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা দেশটাকেই বিগত ১৭ বছরে জঞ্জাল বানিয়ে দিয়ে গেছে।

জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, যানজটের জন্য দায়ী কে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যানজট সমাধানের নামে সিটি কর্পোরেশন শুধু অটোরিকশা চালকদের ধরছে। কিন্তু চাষাড়া থেকে মন্ডলপাড়া পর্যন্ত সমস্ত ফুটপাতে মোটরসাইকেল দখল করে রেখেছে। এই যে রাস্তার পাশে প্রাইভেট কার এবং শহরকে মোটরসাইকেল পার্ট করা আছে এদেরকে আমরা কিছু বলছি না ট্রাফিক পুলিশ ও কিছু বলছে না। নগরীর প্রতিটা পয়েন্ট এখন এক একটা স্ট্যান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুন্সিগঞ্জের লোকেদের নারায়ণগঞ্জ একটা পয়েন্ট হয়ে গেছে। তারা এখান দিয়েই যাতায়াত করছে। সিটি কর্পোরেশন যানজট নিরসনের নামে অটোরিকশা চালকদের ধরে ৩ হাজার টাকা করে রাখছে। এই অর্থদণ্ডটাও এক ধরনের চাঁদাবাজির রূপ নিচ্ছে। কয়েকমাস ধরে পাইপ লাইন নামে চাষাড়ার রাস্তার বেহাল দশা করে রেখেছে। ডিসি কাকে দিয়ে কি দায়িত্ব পালন করায় সেটা জানি না কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসন মিলেই এই সমস্যার সমাধান হবে এছাড়া কোনো বিশেষ সরকার বা কোন বিশেষ প্রশাসন এসে স্থায়ীভাবে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, আমরা তো সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত করছি। তবে এই সমস্যাগুলো সমাধান করার দায়িত্বটা সিটি কর্পোরেশনের। সিটি কর্পোরেশনের ইতিমধ্যে একে একে করে সবকিছু নিয়ে কাজ করছে। কিছুদিন আগেও তারা যানজট বিষয় কাজ করছে সেখানে আমরা ফোর্স দিয়েছি। এটা মানতে হবে যে নারায়ণগঞ্জে মানুষের তুলনায় রাস্তা সংখ্যা খুবই কম। আমরা রিকোয়েস্ট করছি রাস্তার বিষয়টা দেখার জন্য। নতুন নতুন রাস্তার কিছু কিছু প্ল্যান নিয়েছে। আশা করছি এই বিষয়গুলোর সমাধান হয়ে যাবে।

সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, সব সমস্যাগুলো তো একসাথে কাজ করা সম্ভব না। তবে প্রতিটা বিষয় আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখেই কাজ করছি। ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন যানজট বিশাল অভিযান পরিচালনা করেছি। আগামীতেও এমন ভাবেই কার করবো। তবে পরিবর্তিত এই সময় আমাদের কাজ করতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা আমাদের মতো সকল বিভাগকে নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

RSS
Follow by Email