রবিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫
Led03মতামত

সংস্কৃতি বনাম সংস্কার

তৈমূর আলম খন্দকার: সংস্কার ও সংস্কৃতি, পরষ্পর বিপরীত মুখী হলেও একটি অপরটির সম্পূরক। “সংস্কৃতি” এমন একটি বিষয় যা রাজা বা শাসনকর্তার আদেশে নয়, পার্লামেন্টের আইনে নয় বরং দিনে দিনে গড়ে উঠা মানুষের জীবন যাত্রার আলোকরশ্মির প্রতিচ্ছবি মাত্র। Culture means overall way of life of a particular group of people in a social system.

মানুষের জীবন যাত্রায় যখন ব্যতিক্রম পরিবেশ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ গনমানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা যখন চরম ভাবে বাধাগ্রস্থ হয় অর্থাৎ মানবতার পরিবর্তে দানবতা যখন প্রাধান্য পায় তখনই সংস্কারের দাবী উঠে এবং দাবীটি যদি প্রবল থেকে প্রবলতর হয় তখন ইতিহাসের পাতায় এটাই “আন্দোলন”। আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত না হলে আন্দোলন বিফল হওয়ার ইতিহাস বিরল; “জুলাই ৩৬” যার অন্যতম উদাহরণ। রাজনৈতিক দলগুলি ১৭ বৎসরে শত প্রচেষ্টার পরও ঐক্যের যে সফলতা দেখাতে পারে নাই; অআখ্যাংকিত সহশ্রাধিক বুলেট যে সফলতা এনে দিয়েছে, সে সফলতার মুকুটে মুকুটায়িত হয়েছেন ড: ইউনুছ; যিনি ব্যক্তিগত ভাবে হয়েছেন প্রত্যাশিত/অপ্র্যতাশিত লাভবান, অথচ সুযোগ পেয়েও জাতিকে প্রত্যাশিত ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন নাই- যেমনটি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ১৯৫২ (মাতৃভাষা) এবং ১৯৭১ (স্বাধীনতা) এবং তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে ১৯৯০ ইং সনে। ২০২৪ইং সনে তত্বাবধায়ক আদলে অন্তবর্তীকালীন সরকার আলোর মুখ দেখলেও ড: ইউনুছ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দ্যেগের পরিবর্তে পছন্দনীয় দল ও ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহনে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। শুধু মাত্র বন্দুক যুদ্ধ ও ভারতীয় সেনা বাহিনীর বোমা বর্ষনে বাংলাদেশ যেমন স্বাধীন হয় নাই; ঐক্যবদ্ধ জনমতই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শক্তি। ঠিক তেমনি “জুলাই -৩৬” সফলতার পিছনে ছিল ৫-১০% শাসক গোষ্টির চলমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে ৯০-৯৫% বাঙালীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ। সুষম বন্টনের দাবীতে ৬ দফা প্রনীত হয়েছিল যা মুক্তিযুদ্ধে সফলতা আনে। জুলাই-৩৬ইং মনস্তাতিক মূল প্রত্যাশা ছিল বৈষম্য বিরোধী একটি বাংলাদেশ। কিন্তু ড. ইউনুছ সরকার বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুষ্ঠিবদ্ধ সার্বজনীন ঐক্যের পরিবর্তে হাতে গোনা মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

বাংলাদেশে রাজনীতি, সমাজনীতি, নির্বাচন, প্রশাসনিক/ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, অর্থনীতি প্রভৃতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে “সংস্কার” এখন সময়ের দাবী। এদেশে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার মূল করন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর পদ্ধতি, অর্থাৎ System Loss। “ছলচাতুরীর” মাধ্যমে জনগনের আশা আকাংখার প্রতিফলনের পরিবর্তে ক্ষমতাসীনের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নোংরা পদ্ধতিই এদেশে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার মূল কারন- যার জন্য গনতন্ত্র ও রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ ধারন করতে বারংবার ব্যর্থ। এর ব্যর্থতার প্রধান কারিগর এদেশের রাজনৈতিক নেতা ও দলের অভ্যন্তরিন সংস্কৃতি। বড় দলের নমিনেশন পদ্ধতি সম্মানজনক নহে, ফলে পুজিপতিরা রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছে মোটা অংকের বাজেটের বিনিময়ে । সারা বৎসর দেখা না গেলেও নির্বাচন আসলেই পুজিপতিরা জনদরদী সেজে মাঠে নামার সুযোগ নেয়।
কোথায় কোথায় সংস্কার দরকার সে বিষয়ে ড. ইউনুস বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে- যেখানে সর্বস্তরের জনগোষ্ঠির অংশ গ্রহন নিশ্চিত হয় নাই। তিনি পরামর্শ গুটি কয়েক রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখন সীমাবদ্ধ রেখেছেন; কারন যারা গর্জে উঠলে গদি টলমল হতে পারে, তাদের মধ্যে আলোচনা বা পরামর্শ করাকে এখন তিনি নিরাপদ মনে করছেন। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য একটি জাতি ও রাষ্ট্রকে সময়োপযোগী করার জন্য সংস্কার অত্যাবশ্যক। গতানুগতিক রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি (নির্বাচন পদ্ধতি সহ) ও ঘুনেধরা রাজনীতি থেকে জনগন মুক্তি চায় বিধায় গ্রহন যোগ্য সংস্কার জাতির দাবী যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হবে আর্শীবাদ। কিন্তু লোকে বলে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলই সংস্কারের প্রধান প্রতিবন্ধক । কথা বার্তায় মনে হচ্ছে- নির্বাচন দেরী হলে ক্ষমতায় যাওয়ার বিলম্বতা বুমেরাং হওয়ায় আশঙ্কা থেকেই এ মনভাব তাদের কাজে ও কর্মে নানা ভাবে প্রকাশ বলে জনমনে ধারনা।

দীর্ঘদিন শুনে আসছি যে, “নিজের থেকে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়”। কিন্তু এই শ্লোগানের বাস্তবতা কোথায়? পরিস্থিতি দেখে মনে হয় ক্ষমতায় টিকের থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে কোন কুট কৌশল ও রক্তের হোলি খেলাই কি রাজনীতি? বাংলাদেশের রাজনীতি প্রতিশোধ পরায়ন। এ কারনে ক্ষমতাশীলরা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না এবং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য ক্ষমতাসীনদের ভূমিকা পৃথিবীর যে কোন নি:জ্জর্¦তাকে হার মানায়। ক্ষমতাহীনরা যে কোন পদ্ধতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুদ্ধ-অশুদ্ধ, নৈতিক-অনৈতিক পদ্ধতি গ্রহনে বদ্ধ পরিকর, কারন ক্ষমতশীনদের দেয়া ভূয়া মামলা ও নির্যাতন স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিরোধীদের জীবন কন্টকাপন্ন হয়ে উঠে। এ বাস্তবতা নির্বাচন পদ্ধতিকে অস্বচ্ছ ও নিন্দনীয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিরোধী দলকে রাষ্ট্র কোন Space বা নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে। একারনেই সকলে ক্ষমতায় থাকার জন্য বদ্ধ পরিকর। ঔপনিবেশিক আমলে লর্ড ক্লাইব যে আমলাতন্ত্র চালু করেছিলেন- সে অবস্থা এখন আরো জোরদার হয়েছে। বিবেক নয় “Yes Boss” পদ্ধতিই আমলাতন্ত্রের মুলনীতি।

ক্ষমতা পরিবর্তন পদ্ধতি দেশবাশীর গলার কাটা। এই বিষযুক্ত কাটা অপসারনের জন্য একটি সুষ্ঠ, গ্রহনযোগ্য ও অংশগ্রহন মূলক স্বচ্ছ নির্বাচনই একমাত্র ঔষধ। এ ঔষধে নিরাময় হওয়ার জন্য তিনটি Steck Holder যথা ১। জনগনের মনমানসিকতা ২। রাজনৈতিক দল এবং ৩। নির্বাচন পদ্ধতির উপর সংস্কার হওয়া অত্যাবশ্যক। পূর্বের সরকারের মত ইউনুস সরকার ও নির্বাচন কমিশন যতই সুন্দর সুন্দর কথা বলুক না কেন ভোট প্রদানে জনগন নিজেরা যদি তাদের মন মানসিকতায় স্বচ্ছতা আনতে না পারে তবে নির্বাচনে জন আকাংখা পূরন হওয়ার কেন সম্ভবানা থাকে না। জনগোষ্ঠির একটি অংশ (হউক রাজনৈতিক দলীয় বা নির্দলীয়) নির্বাচনকে দু’হাতে টাকা কামানোর একটি উপলক্ষ মনে করে। অভাব ও স্বভাব এ-দুটোই বর্তমানে গ্রহন যোগ্য নির্বাচনে অন্তরায়। এক দিকে নির্বাচিত একটি সরকার গঠনে জনগনের দীর্ঘ দিনের অভিপ্রায়, অন্য দিকে নির্বাচনের জন্য অনেকই ওৎপেতে থাকে অর্থ উপার্জনের জন্য- যা বর্তমানে নির্বাচনী ব্যবস্থার একটি কালো সংস্কৃতি (Sub-Culture) হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। এ সংস্কৃতিকে পুজি করে দেশের পুজিপতি, শিল্পপতি, ব্যাংক লুটেরাদের দখলে এখন স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন সহ সকল প্রকার নির্বাচন। ফলে শিল্পপতি/পুজিপতি/ভূমিদস্যুদের হাতে এখন রাজনীতির একছত্র নিয়ন্ত্রন। দলের শীর্ষ নেতাদের Maintain করে White Color পুজিপতি/শিল্পপতিরা।
মোটাদাগে বাংলাদেশের রাজনীতির তিনটি ধারা, যথা ডান (ধর্ম ভিত্তিক), বাম (সমাজতান্ত্রিক বা প্রগতিশীল) এবং মধ্যপন্থী (জাতীয়তাবাদী)। জাতীয়তাবাদী দল গুলিই মূলত ৫৩ বৎসর বাংলাদেশকে শাসন করছে। “জাতীয়তাবাদ” দেশপ্রেমের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু যার দেশে প্রেম আছে তিনি লুটপাট, চাঁদাবাজী, দখলবাজী এমনকি মানি লন্ডারিং করতে পারে না, কারন একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদীর মন মানসিকতা তাকে দেশ বিরোধী কাজ করার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। জুলাই- ৩৬ এর চেতনায় দেশ এগিয়ে যাওয়ার কথা- কারন এ চেতনার মূল উদ্দেশ্যে- “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি”। জাতীয়তাবাদের সঙ্গা যদি এমন হয়- “পামু আর খামু” (অর্থাৎ যা পাবো তাই খেয়ে ফেলবো বা দখল করবো), তবে জুলাই-৩৬ এর পর দেশে যা হচ্ছে তা নিয়ে কথা বলার বা সমালোচনা করার অবকাশ নাই। কিন্তু হালে চাঁদাবাজী ও দখলদারিত্বে জুলাই পূর্ববর্তীদের হার মানিছে। ১/১১ সময় আমার দীর্ঘ দিনের জেল পার্টনার রিয়াল এ্যাডমিরাল (অব:) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন- “আমরা দখল করেছি বাসষ্ট্যান্ড, বেবী-টেক্সি ষ্ট্যান্ড আর লঞ্চ ঘাট, অন্যদিকে জামায়েতে ইসলামী দখল করেছে ইউনিভারসিটি”। তাঁর এ-তথ্যে প্রমান করে যে- দখলদারীত্বের ব্যাপারে কেউ পিছিয়ে নেই, কারো নজর নিম্ন মূখী, কারো নজর উর্দ্দমূখী। তবে রাজনৈতিক দলগুলি ঐক্যবদ্ধ ভাবে সিলেটে সাদা পাথর চুরি ও লুট করেছে, সেখানে চোরে চোরে মামাত ভাই হওয়ায় ঐক্যের কোন ঘাটতি হয় নাই বলে কোন বিভেদ দেখা যায় নাই। চাঁদাবাজ দখলদারিত্বের কৃতিত্ব নিয়ে জাতীয় পত্রিকার ভাষ্যমতে দেশের জনপ্রিয় দলটির নিজেদের মধ্যে খুন হয়েছে অর্ধসহস্রাধিক নেতাকর্মী। দল থেকে বহিস্কার করেও চাঁদাবাজী ও দখলদ্বারিত্ব থামানো যাচ্ছে না- কেহই হার মানছেনা বলে ধারনা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মনে হয় পূর্ববর্তী সরকারের মত- দল যেন তার নিজের নিয়ন্ত্রন নিজেই হারিয়ে ফেলেছে। এ-মন্তব্য প্রতিনিয়ত মিডিয়াতে প্রকাশ পাচ্ছে। পথিক পথ হারালে গন্তব্য সুদূর পরাহত হয়ে পরে। এ দৃষ্টান্ত বেশী পূর্বের নয়, মাত্র বছরখানিক পার হয়েছে মাত্র।

রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এরিষ্টল বলেছেন- “Politics is an art of compromise” রাজনীতিতে একহাত পিছনে বা দু পা সামনে হাটা কোন দোষের বিষয় নয়; কিন্তু আত্মসর্ম্পন করা নৈতিকতা বির্বজিত। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে ১৯০৫, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ কে অবমূল্যায়ন বা ভূলে যাওয়া আত্মসমার্পন ছাড়া কিছুই নয়। ধর্মের ভিত্তিতে যদি ১৯৪৭ইং সনে পাকিস্তান স্বাধীন না হতো তবে পূর্ব বঙ্গ হতো কাস্মীরের মত ভারতের একটি করদ বা অঙ্গ রাজ্য। মানবজীবনে ধর্মীয় মূলবোধকে অস্বীকার করা যায় না। মানুষ এক প্রকার জীব/প্রানী। কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসনই মানুষকে জীব-জানোয়ার থেকে আলাদা করে রেখেছে। যারা ধর্মকে অবহেলা করে তাদের নিকট থেকে কল্যানকর কিছু আশা করা যায় না। ফলে ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার কারনেই ১৯৭১ইং সনে “বাংলাদেশ” নামক একটি স্বাধীন ভূ-খন্ড পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। শুধুমাত্র ভাষা নয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রধান কারন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য মূলক আচরন। ১৯৭১ই সনের মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালীর নৈতিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস মজবুত করেছে; ফলে এ নিয়ে বিন্দুমাত্র বির্তক- একটি জাতির জাতি স্বত্বার সাথে উপহাস ছাড়া আর কি হতে পারে? জৈবিক চাহিদার চেয়ে সংস্কৃতিক চাহিদা কম গুরুত্বপূর্ণ নহে, তবে “মূলধারা” কে বাদ দিয়ে নয়। প্রয়োজন জন আকাংখার টেকসই সংস্কার, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিবে।

প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানী করার সংস্কৃতি বৃটিশ চালু করেছিল, ১৯৪৭ইং এর পর থেকে যা প্রতিষ্ঠিত করেছে পরবর্তী স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকার। এ সংস্কৃতি যদি এখনো অব্যহত থাবে তবে দেশ স্বাধীন করতে বারংবার গনমানুষ এতো রক্ত কেন দিলো? মাতৃভাষার আন্দোলনে জনতার উপর গুলি চালিয়ে ১৯৫২ সনে সরকার ও পুলিশ যে যুক্তি দেখিয়েছিল- এখনো পুলিশ Forwarding সে একই যুক্তি অব্যহত আছে। জুলাই পুর্ববর্তীতে রাজনীতিবিদদের হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে কোমড়ে দড়ি বেধে কোর্টে নিতো। এখনো তাই করছে। সম্প্রতি যুবলীগের এক নেতা হ্যান্ডকার্প পড়া অবস্থায় পিতার জানাজা পড়ার ছবি ভাইরাল হয়েছে। যুবদলের অনেক নেতার এ ধরনের ছবি গত ১৬ বৎসর দেখেছি এবং ইতিপূর্বেও দেখেছি, দেখেছি বুলেট বিদ্ধ অনেক নিথর দেহ। আমার সাথে অনেক মামলার জেল পাটনার নারায়ণগঞ্জ যুবদল নেতা মমিনউল্ল্যাহ ডেভিটের গুলিতে ঝাঝড়া হওয়া লাশ ঢাকা মেডিকেল মর্গ থকে আমি গ্রহন করে বুলেটের নির্মমতা উপলব্ধি করেছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের পূর্বেও গরুরমত পিটিয়েছে এবং বৈষম্য বিরোধী ব্যানারে গঠিত ইউনুস সরকার আমলেও সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের নির্যাতনের প্রশ্নে পুলিশ কতুটুকু নির্মম হতে পারে- তার ভূক্তভোগী আমি নিজেও। রাজপথে মিছিলে বহুবার পুলিশের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছি। তখন খুশী হয়েছে তৎকালীন সরকার দল এবং সরকারের নিকট নিজেকে তরিৎকর্মা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতেই সরকারের ইন্দনে পুলিশ রুদ্র মূর্তি ধারন করে প্রমোশন ও লোভনীয় পোষ্টিং এর জন্য। তবে সব সরকারের চরিত্র এক ও অভিন্ন। “যে যায় লঙ্কায় সে হয রাবন”। সংস্কার দরকার ড. ইউনুস সরকারের নিজের অন্তরে। তিনি যদি নিজ কর্মে সংস্কার আনতে পারে তবেই প্রস্তাবিত সংস্কার আলোর মুখ দেখবে। দৃশত: ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে, শাসক বদল হয়েছে, কিন্তু প্রতিপক্ষকে নির্যাতনের সংস্কৃতির পরিবর্তন হয় নাই এবং এ প্রজন্মে হওয়ার কোন সম্ভবনাও দেখছি না। কারন এক পক্ষ অপর পক্ষকে তির্জক ভাষায় “দেখে” নেয়ার হুঙ্কার চলছেই এবং এর পিছনে “কারনও” আছে; “কারন” গুলি দূর্বল নয় বরং প্রবল এবং প্রতিহিংসা মূলক।

চাঁদাবাজী, দখলবাজী ও মব সন্ত্রাসের রেকর্ড ইউনুস সরকার আমলে বিগত সব সরকার আমলে সকল রেকর্ড ভঙ্গন করেছে। Morning Shows the Day. দিনটি কেমন যাবে তা সকালবেলাই উপলব্ধি করা যায়। একটি গ্রহনযোগ্য সুষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব মূলক নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই অর্ন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে ছিল। ২০১৪ ভোটার বিহীণ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে আওয়ামীলীগ ছাড়া কোন প্রার্থী ছিল না। ২০১৮ইং সনে বিরোধী দলের সাথে ১৭ পদের ব্যাঞ্জাজের খানাপিনা ভূরি-ভোজের মাধ্যমে ডাইলগ হলেও দিনের ভোট রাতে হয়েছে। ২০২৪এর নির্বাচন সম্পূটাই ছিল ভাওতাবাজী, যার পুরস্কার শেখ হাছিনা পেয়েছে। ড. ইউনুস সরকার যদি চাঁদবাজী দখলবাজী ও মব বন্ধ করতে না পারে তবে ২০২৬ এর নির্বাচন হবে সর্বকালের নিকৃষ্টতম- একতরফা নির্বাচন, যার বিজয় মিছিল বেলা ১০টায় দেখা যাবে। তাই সংস্কার হতে হবে মুখে মুখে বা কাগজে কলমে নয়, বরং অনুশীলনে। এবারও যদি চর দখল ও মব-বাজীর নির্বাচন হয় তবে শেখ হাসিনার মত ড. ইউনুস হবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ; জাতি হবে হতাশ, ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী প্রত্যাশা করবে আর একটি সফল বিপ্লব । আবারো জোর দিয়ে বলছি- “সংস্কার” গতানুগাতিক কথা মালার ফুল ঝুড়ি নয় বরং ইহা অনুশীলনের বিষয়। গতানুগতিক বস্তাপঁচা রাজনীতির পরিবর্তে একটি সময়পোযোগী কল্যান মূলক ও জনমূখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রবর্তন এখন সময়ের দাবী।

লেখক: তৈমূর আলম খন্দকার, কলামইষ্ট ও সিনিয়র আইনজীবী।

RSS
Follow by Email