রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Led01জেলাজুড়েপরিবহন

সংকটে বাস সংশ্লিষ্টরা, যাত্রীদের অভিযোগ ‘বাড়তি ভাড়া’

#সব মিলিয়ে আমরা ভালো নেই: কাউন্টার ম্যানেজার

#পুলিশ নিয়ম মতো সিদ্ধিান্ত নিলে যানযট থাকতো না: বাস চালক

#সমস্যাটাকে আননন্দ হিসেবে নিচ্ছি: যাত্রী

#জ্যাম-যাত্রী হয়রানি রোধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: টিআই করিম

 

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: দড়জায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী আগামী সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হবে। সেই হিসাবে কোরবানির ঈদের বাকি মাত্র দুদিন। তাই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। তবে, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের সাময়িক জ্যাম ও বাসের বাড়তি ভাড়ার কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

অন্যদিকে, যাত্রী সংকটের কথা জানাচ্ছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। আর রাস্তাঘাটে জ্যামের জন্য পুলিশকে দুষছেন বেশ কয়েকজন বাস চালক।

সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাচঁপুর বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, বাড়ি ফেরার জন্য যাত্রীদের আনাগনা প্রচুর। অনেকে নির্বিঘ্নে নিজ গন্তব্যের পরিবহন পেলেও, অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে দাড়িয়ে আছেণ বাসের অপেক্ষায়। তবে, কিছু কিছু বাস কাউন্টারের চিত্র ভিন্ন, সেখানে নেই যাত্রীর চাপ। ভাড়া আগের মতো হলেও যাত্রী নেই বলে জানান কাউন্টারের লোকেরা।

আহসান পরিবহনের ম্যানেজার শ্যামল বলেন, গতবারের চেয়ে যাত্রী তুলনা মুলক অনেক কম। বর্তমানে আগের অবস্থা নাই। দৈনিক আমার কাউন্টার থেকে ১৫-২০জন যাত্রী যাচ্ছে।

কাচঁপুর বাস টার্মিনালের কাউন্টার ম্যানেজার জাহিদ হাসান বলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি তেমন ভালো না। এবার তো মানুষের ছুটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। রোজার ঈদের মতো একবারে ছুটি দিলে আমাদেরও একটু লাভ। এখন দেখা যাচ্ছে ১০টি সিট বুক হলে ২০টা খালি যাচ্ছে। সারা বছর আমরা উত্তরবঙ্গে যাত্রীদের ৪০০টাকা করে পাঠাইছি। সরকারি ভাড়া আছে ১১০০টাকা। তেলের দামও বাড়তেছে। এখন ৪০০টাকার জায়গায় আমরা ২০০টাকা বেশি চাইলে তারা বলে এত বেশি কেন। সব মিলিয়ে আমরা ভালো নেই। দিন শেষে আমাদের পেটে লাথি। আমাদেরও তো পরিবার আছে।

স্টার লাইন পরিবহনের এক বাস চালক বলেন, পুলিশের গাফলতির কারণে রাস্তায় যানযট বেশি। পুলিশ নিয়ম মতো সিদ্ধিান্ত নিলে এতটা যানযট থাকতো না। গত ১০ বছর যাবত আমি বাস চালাচ্ছি, কখনো এত দেড়ি হয় নাই, যতটা আজকে হইছে। যাত্রীরা তো রাগ করবেই।

সাইনবোর্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন সাদেক। তিনি বলেন, জ্যামের কারণে মানুষ সময় মতো নিজ গন্তব্যে পৌছাতে পারছে না, এটা হচ্ছে বড় সমস্যা। যেহেতু আনন্দ নিয়ে যাচ্ছি, তাই এই সমস্যাটাকে আননন্দ হিসেবে নিচ্ছি। গতবার পরিস্থিতি একটু ভালো ছিলো। কারণ এবার তো বিভিন্ন স্থানে গরুর হাট বসেছে। তাই জ্যামটাও বেশি। উত্তর বেঙ্গের দিকে যেসকল যাত্রীরা যাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে দিগুনেরও বেশি বাড়া নৌযা হচ্ছে।

আল আমিন নামের এক যাত্রী বলেন, আমি নেত্রকোনা যাবো। এসে দেখি সবখানেই জ্যাম, তাই যেতে পারছি না। প্রায় সব গাড়িতেই ভাড়া বাড়তি। মা-বাবার সাথে ঈদ করবো, তাই ভোগান্তি পোহাচ্ছি।

আরেক যাত্রী শিল্পি আক্তার বলেন, অনেকক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে আছি, যেতে পারছি না। ভাড়া বেশি। এছাড়া রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। আগে দেড়শ টাকা দিয়ে কুমিল্লা যেতাম, এখন লোকাল বাসেই সারে তিনশত টাকা চাচ্ছে।

আরেক যাত্রী যোবাইদা মোশারফ বলেন, আগে বিদেশে থাকতাম, এই প্রথম বাড়িতে যাচ্ছি। ভোগান্তির কোন শেষ নেই। এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টার ঘুরতেছি, তাও বাস পাইনি।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের নারায়ণগঞ্জের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে শিমরাইল, মদনপুর, মোগরাপাড়া সহ মেঘনা পর্যন্ত যানজট এড়াতে ইউর্টান, ইউলোবসহ আলাদা লেন নির্মাণ করায় পূর্বে যেখানে যানজট হতো এবার তার আর সম্ভবনা নেই। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পুরিন্দাবাজার পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে স্ট্যান্ড ও চার লেন উন্নতি করণ প্রকল্পের কাজের জন্য যাত্রামুড়া, বরাব, রূপসী, তারাব কর্ণগোপ এলাকা যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিকের টিআই করিম বলেন, ঈদুল আজহার উপলক্ষে যাত্রী যাতে তার পরিবারের সাথে গিয়ে ঈদ করতে পারে তাই মাননীয় পুলিশ সুপার স্যার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। কেথাও যাতে জ্যাম না লাগে, যাত্রী যাতে হয়রানির শিকার না; সেই জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়নসহ সিনিয়র অফিসারগণ রয়েছেন। যাতে করে সমস্ত গাড়ি দ্রুত গতিতে চলতে পারে। মাঝ পথে গাড়ি নষ্ট হলে যাতে দ্রুত সরানো যায় তাই রেকারের ব্যবস্থা আছে। এখন পর্যন্ত সব কিছু ভালো ভাবে চলছে। কোথাও কোন জ্যাম বা দুর্ঘটনার সংবাদ আমরা পাইনি। গত ঈদের চেয়ে এই ঈদে যাত্রীর চাপ একটু কম। কোথাও কোন যাত্রী হয়রানির সংবাদ পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্ট সাথে সাথে ওই স্থানে পৌছে যাবে।

এছাড়া, যাত্রীদের হয়রানি রোধে সকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিচালনা করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। বাড়তি ও ভাড়ার তালিকা না থাকায় ৪ টি বাস কাউন্টারেক ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আজ থেকে ঈদের শেষ চারদিন এ অভিযান চলবে বলে জানান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহসানুল আলম।

এদিকে, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১৪ জুন) রাতে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বন্দরের জাঙ্গাল এলাকা থেকে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকা পর্যন্ত ঢাকামুখী লেনে প্রায় ৯ কিলোমিটার জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। শিমরাইল ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) একেএম শরফুদ্দিন বলেন, রাত সাড়ে ১০টার আগে কোনো ভারী যানবাহন যেন ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য মহাসড়কের মাতুয়াইল এলাকায় ডিএমপি থেকে একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর ফলে এই সময়ের আগে চলে আসা ভারী যানবাহনগুলো আটকে রাখার কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

RSS
Follow by Email