শীতের আগমণে নগরীতে পিঠা বিক্রির ধুম
# শহরে বসেছে অর্ধশতাধিক দোকান
# ‘শীতে গরম গরম পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা’
# ‘পিঠা খেলে ছোটবেলার সেই স্মৃতি মনে পড়ে’
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: অগ্রহায়ণের শেষ হতে না হতেই জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যাচ্ছে শহরের ওলি-গোলি, পরিবেশ বেশ ঠান্ডা হয়ে উঠছে। আর শীত বাড়ার সাথে কদর বাড়ছে মুখরোচক শীতের পিঠার। বাসা-বাড়িতে সকালের কিংবা সন্ধ্যার নাস্তায় থাকছে মজার মজার পিঠা। শহরে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পাশে ভাসমান পিঠার দোকানও গড়ে উঠেছে। বিকাল থেকে পিঠা কেনাবেচা শুরু হলেও, সন্ধ্যা থেকে জমে উঠে এসব পিঠার দোকানে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেখানে ভিড় জমছে মানুষের। ভাপা, চিতই, চাপটি, পাটিসাপটার মতো পিঠার স্বাদ উপভোগ করা যাচ্ছে এই দোকানগুলোতে।
শুধু সড়কের পাশে নয়, পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বাহারি সব পিঠাপুলি নজর কাড়ছে সকলের। বিকেল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা হয়ে বেশ রাত পর্যন্ত বিক্রির ধুম পড়ে। প্রায় সময়েই মানুষদের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে বা বসে পিঠা খেতে দেখা যায়। নগরীর চাষাড়া, ডিআইটি, মিশনপাড়া,মেট্রোহল, খানপুর হাসপাতাল রোড, কালিরবাজার, দ্বিগুবাবুর বাজার, কলেজ রোড, জামতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় পিঠার ভাসমান দোকান দেখা গেছে। দোকানের এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক হবে। চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলের পিঠাই সবচেয়ে বেশি মিলছে এই দোকানগুলোতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিঠা রান্নার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোকানিরা। একের পর এক পিঠার অর্ডার আসা মাত্রই চুলা থেকে নামিয়ে গরম গরম পিঠা পরিবেশন করা হচ্ছে। আকৃতি ভেদে ভাপা পিঠায় ২০-৩০ টাকা, চিতই পিঠায় ১০ টাকা, ডিম চিতই পিঠায় ২৫-৩০ টাকা, চাপটি পিঠায় ১০ টাকা, তেলের পিঠা ও পাটিসাপটা পিঠায় ৩০-৪০ টাকা রাখা হচ্ছে। চিতই পিঠা ও চাপটি পিঠার সাথে টক-ঝাল স্বাদের হরেক রকমের ভর্তা দেয়া হচ্ছে। শুটকির ভর্তা, সরিষা ভর্তা, মসলার ভর্তা, ধনিয়া ভর্তা, ইলিশ ভর্তা, বাদাম ভর্তা, ডাল ভর্তা, কাচামরিচ ভর্তা, টমেটো ভর্তা, আমড়ার ভর্তাসহ প্রায় ১০-১৫ রকমের ভর্তা পরিবেশন করা হচ্ছে কিছু কিছু দোকানে। ভোজন রশিকদের মধ্যে কেউ কেউ ভর্তা দিয়ে তৃপ্তির সাথে চিতই-চাটপি উপভোগ করছেন। কেউ কেউ আবার গরম ভাপা পিঠা মুখে নিয়ে ধোয়া ছাড়ছেন।
ক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগিই ভাপা পিঠা পছন্দ করেন ও যারা টক-ঝাল ভালো লাগে তাদের পছন্দ চিতই পিঠা, এমনটাই বলছেন দোকানিরা। তাদের সাথে কথা হলে জানান, বেশিরভাগ দোকানিরা শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রি করে থাকেন। অন্যান্য সময়ে অনেকেই তরকারি বিক্রেতা, ভ্যান চালক, কাপড়ের ক্ষুদ্র বিক্রেতা বা অন্য কোন পেশার সাথে জড়িত। শীতের মৌসুমে মানুষের পিঠার প্রতি অনেক আগ্রহ থাকে বলে তারা পিঠা বিক্রির উদ্যোগ নেন। এইবারও শীতের মৌসুমে পিঠা বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিকেল বেলার দিকে দোকান খোলা হলে ক্রেতারো আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যার দিকে ক্রেতাদের চাপ বাড়তে থাকে।
ডিআইটিতে চিতই পিঠা বিক্রি করেন বিল্লাল হোসেন। কথা হলে তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, সারা বছরই চিতই পিঠা বিক্রি করা হয়ে থাকে। ভর্তা দিয়ে চিতই, ডিম চিতই, মশলা চিতইয়ের আয়োজন তার দোকানে। পিঠার সাথে আরও থাকছে আমড়া, ধনিয়া, শুটকির ভর্তা। শিশু-কিশোর, দিনমজুর, রিকশাচালক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পিঠা খেতে ভিড় করেন দোকানে। সারা বছর দোকানে ক্রেতাদের চাপ থাকলেও, শীতকালে পিঠায় মানুষের আলাদা আকর্ষণ থাকে বলে দোকানে ভিড় বেশি হয়। ক্রেতাদের আগ্রহে পিঠা রান্নার জন্য নয়টা চুলা বসানো হয়েছে। কোন হিসেব না রাখলেও দৈনিক পাঁচ‘শর মতো পিঠা বিক্রি হয় বলে ধারণা বিল্লাল হোসেনের।
পিঠা খেতে আসা মাসুদ লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, শীতে গরম গরম পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। বাসার জন্য নিয়ে অনেক সময়ে চিতই নিয়ে যাওয়া হয়। বাচ্চারা ডিম চিতই খেতে অনেক পছন্দ করে। শুটকির ঝাল ভর্তা দিয়ে চিতই খেতে মুরব্বিদেরও ভালো লাগে। আমি নিজেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে এখানে আসি।
এদিকে, ভ্যান গাড়িতে করে পিঠা বিক্রি করেন শফিকুল ইসলাম। বছরের নয় মাস ডাব বিক্রি করেন, আর তিন মাস শীতের পিঠা বিক্রি করেন। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, শীতকালে মানুষের পিঠায় এক বিশেষ আকর্ষণ থাকে। এনিয়ে পিঠা বিক্রির চিন্তা। আমার গাড়িতে তেলের পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা ও ভাপা পিঠা বিক্রি করি। তেলের পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা বাড়ি তেকেই রান্না করে আনি। ভাপা পিঠা গাড়িতেই করে বানানো হয়। চাউলের গুড়িতে গুড় দিয়ে পিঠা রান্না করা হয়। একসাথে তিনটা পিঠা রান্না করা যায়। সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। ভাপা পিঠায় মানুষ অনেক পছন্দ করছে। কেউ মিষ্টি বেশি খেতে পছন্দ করলে গুড় বাড়িয়ে দেই। অনেকেই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে খায়, অনেকে বাসার জন্য নিয়ে যায়।
পিঠা কিনতে এসে সিদ্দিক নামে এক যুবক লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, যখন ছোট ছিলাম, বছরের এই সময়তে পরীক্ষা শেষ হতো। মা-বাবার সাথে নানুর বাড়ি যেতাম। নানু ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, পুলি পিঠা,দুধ পিঠা রান্না করে খাওয়াতেন। ঘরে একটা উৎসব তৈরী হতো। এখন পিঠা খেলে ছোটবেলার সেই স্মৃতি মনে পড়ে। শহরের বাসা-বাড়িতে পিঠা নিয়ে বড় আয়োজন খুব একটা হয় না। পিঠার দোকান থেকেই বেশিরভাগ সময় পিঠা নেই।