শিক্ষার্থীদের সেলিম ওসমান ‘আপনাদের যারা নামাইছে তারা বিএনপি-জামায়াত, ওরা নেশাখোর’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: বন্দরে সহিংসতা বিরোধী প্রতিবাদ ও জনসচেতনামূলক সমাবেশে করেছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ। বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বন্দর উপজেলার মদনপুর বাসস্টান্ড এলাকায় ওই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমান। এ সময় চলমান সহিংসতাকে কেন্দ্র করে বন্দরের নেতাকর্মীদের রুখে দাঁড়ানোসহ নির্বাচন কেন্দ্রীক নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। ওই স্বাধীনতা পাওয়ার পরও মুনাফেক রাজাকার আল বদররা বঙ্গবন্ধুকে ৭৫ সালে হত্যা করে। হত্যার পর আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলো। আমিও তাদের কাছে আসামি ছিলাম, এখনো ৩৬টা সিগারেটের ছেকা আমার বুকের ভিতরে আছে। নাসিম ওসমান নববধূকে রেখে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের জন্য পুনরায় যুদ্ধে গেলেন। সেক্রেফাইজ করতে হলে মানুষের মনোবল চাই। কত বড় সাহস হলে আমার পুলিশের সামনে তারা তান্ডব চালাতে পারে, পুলিশের গাড়ি জ্বালায় দিতে পারে। মদনপুরে বাড়ি বাড়িতে মহিলারা মরিচ বাটা দিয়া আমাদের ছেলেদের সাহায্য করেছে তাদের প্রতিহত করার জন্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থাকবো, এই দেশকে ভালোবাসতে শিখেন। মেট্টোরেল বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা কি উনার সম্পত্তি ছিলো? নাকি আপনার আমার সম্পত্তি ছিলো? এটা ভাঙ্গায় আমাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে নাই কিন্তু উনার চোখ দিয়ে পানি পড়েছে।
তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রী বাসভবনে হামলা করার চিন্তুা করা হয়েছিলো। কিন্তু উনি আজকে আহতদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দেখা করছেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিহতদের আর্থিক সহায়তা করছেন। আমার বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলেও আছি না থাকলেও আছি। উনার সাথে ২১ বছর ছিলাম বলেই আমরা এখানে বক্তব্য দিতে পারছি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, একুশ বছর রাজাকার আল বদর আমাদের সংসদটা দখল করে রেখেছিলো। আপনারা যদি এখন আলসামো করে, তাহলে মিটিং মিছিল দিয়ে কিছু হবে না। পত্রিকায় ছবি উঠবে। আমি বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বলবো, আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকেন। মনে রাখবেন লাঠির কাছে এমএ পাশ নাই, সে যত বড় সন্ত্রসীই হোক না কেনো। শুধু ক্যামেরায় ছবি দেখানোর জন্য মিটিং মিছিল কইরেন না। আপনি বাড়িতে বসে থাকেন তাতে সমস্যা নাই। কিন্তু যারা প্রতিহত করতে পারবেন, তারাই আসবেন।
বন্দর উপজেলার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের ব্যাপারে সেলিম ওসমান বলেন, উপজেলার চেয়ারম্যানের ব্যাপারে আমি বললে তো দোষ হয়ে যাবে। মেয়ে মানুষের মামলায় আজকে তিনি ফেরারি আসামি। তাহলে আমার এলাকা কন্ট্রোল করবে কে। সুতরাং আপনাদের বলবো এই সমস্ত রাজাকার-বাটপার যাতে বন্দরে অবস্থান না নিতে পারে। এলাকায় এলাকায় আপনারা বের হন, এবং রাজাকার আলবদরদের লিস্ট করতে হবে। সরকারি ভাবে হোক বা না হোক। বন্দরে রাজাকারদের লিস্ট হবে এবং তারা এই বন্দরে বসবাস করতে পারবো না, কারণ বন্দর অনেক শান্তিপ্রিয় জায়গা। আমাদের লজ্জা করা উচিৎ একজন মুক্তিযোদ্ধাকে রেখে, আমরা একটা হারামির টাকা। মসজিদে মসজিদে টাকা নিয়েছেন, কিসের মুসলমান আপনার। এগুলো হলো হারামের টাকা, এই এলাকার ছেলেপেলেদের নষ্ট করার টাকা এগুলা, নইলে টাকা কি মুড়ির মোয়া? আমরা কি নির্বাচন করি নাই। একটা উপজেলা নির্বাচন করতে কি ১৫-২০ কোটি টাকা লাগে? এখনো কোন ব্যাক্তি তার বিপক্ষে কোন মামলা করেন নাই। আমি শুনেছি, তিনি (উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ) ও তার ছেলে ইনভেস্ট করেছে। সালাম যদি সরে যায় তাহলে তার পুত্র এককভাবে চেয়ারম্যান হবেন।
উপ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আমি যাকে চাইবো সেই চেয়ারম্যান হবে। আমি বলবো উপজেলার নির্বাচনে যেভাবেই হোক আমরা আদায় করবো, যাতে পুণরায় এটার নির্বাচন হয়। একটা বাটপার দিয়ে বন্দর চলতে পারে না। বন্দর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চিন্তুা আছে, শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ নিয়ে স্বপ্ন দেখে। তার একটা বড় প্রমাণ নাসিম ওসমান শীতলক্ষ্যা সেতু, ফেরী, বন্দরে কোন কাঁচা রাস্তা নাই। ব্যবসা বানিজ্য ভালো চলছে।
সেলিম ওসমান বলেন, চেয়ারম্যান ইলেকশন ইমিডিয়েট ব্যবস্থা করবেন। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি একক ভাবে অনুরোধ করলাম আলী হোসেন কে। শুধু মুছাপুর না, যাতে সমগ্র বন্দরবাসী তাকে সাহায্য করে। মাইরের উপর ঔষধ নাই। উনি (উপজেলার চেয়ারম্যান মাকসুদ) হলো মালে আর আমরা হইলাম মাইরে। এখন যে কোন সময় নির্বাচন হতে পারে, নির্বাচন হওয়ার পরে, আমরা উপজেলার নির্বাচনকে আবার চাইবো। দরকার পরলে বন্দর থেকে সবাই ইলেকশন কমিশনে যাবো। কেনো তাকে নির্বাচিত করা হলো, আমরা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি নাই। কে করেছে সেটা স্পস্ট হয়ে যাবে। আরেকজন ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছে,মার্কা মাইক কিন্তু একদিন দেখি নাই ফু দিতে। আপনি কি মনে করছেন আপনে ভাইস চেয়ারম্যান হবেন আমি এমপি থাকাকালীন। ‘বহুত দূর দিল্লিকা লাড্ডু’ যারা খাইছেন মজা পাইছেন। একলা একলা গিয়ে উপজেলায় বসছেন। আমাদের ইউপি চেয়ারম্যানরা বলেছেন যে, উপজেলার চেয়ারম্যানদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই। এতো বড় একটা উপজেলা অফিস আর সেখানে আইসা একটা রাজাকারকে বসায় দিবেন। বসানো পর কি হইছে দেখছেন তো মদনপুরে। এতো ক্ষতি হয়েছে এগুলা কার ক্ষতি? আমার, শেখ হাসিনার না,জনগণের ক্ষতি।
কোটা আন্দোলনে সহিংসতা নিয়ে তিনি বলেন, আমার ছাত্র ভাইয়েরা ভালো থাকনে আপনারা আপনাদের দাবি মানা হয়ে গেছে। এবার প্রস্তুত থাকেন জনগণ নেমে গেছে। আপনাদের যারা নামাইছে তারা জনগণ ছিলো না, ওরা ছিলো বিএনপি জামায়াত। ওরা ছিলো এডিক্টেট নেশাখোর। যারা নেশা ছাড়া কিছু বুছে না।
বিএনপি-জামাত নিয়ে সেলিম ওসমান বলেন, এগুলাকে টাকা দেয়ার জন্য আমাদের অনেক ব্যবসায়ী ঘাপটি মেরে বসে আছে। আপনারা নিশ্চই শুনেছেন সরষের মধ্যে ভূত থাকে। ধৈর্য ধরতে হবে, আমরা বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা সরষে থেকে ভূত বের করবো। একটা ভূত দিয়ে গেলাম আপনাদের কাছে। ওই ভূত যেনো আর চেয়ারে বসতে না পারে। এই ভূতকে প্রত্যাক্ষ্যান করেন।
জেলা পরিষদের মেম্বার ও ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুম আম্মেদকে উদ্দেশ্য করে সেলিম ওসমান বলেন,আজকে আমি যখন গাড়ি থেকে নামি, তখন মীর জাফর-মোস্তাকের থেকে বড় হারামি আমাকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়ায় ছিলো। যে আজকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো, তিনি নাকি আবার আওয়ামী লীগ করেন। ওদের থেকে সাবধানে থাকেন। উপনাদের অনেক পয়সা তাহলে বন্দর ছেড়ে চলে যান।
জন সভায় বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রশিদের সভাপতিত্বে ও মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী এম.এ সালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহম্মেদসহ বিভিন্ন অংঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।