বুধবার, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Dis_leadLed01Led05বিশেষ প্রতিবেদনসদর

শহীদ মিনারে ভয়ংকর রূপে কিশোর আতঙ্ক, মারামারি যেন নিত্যদিনের চিত্র

# শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডী কার্ড ঝুলিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে: অভিভাবক
# পুলিশ ভয় পাওয়ার অবস্থা না.গঞ্জে নেই,তাদের নিরাপত্তায় ছাত্ররা ডিল করবো: মুনা
# যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করবো: ডিসি
# টহল টিম আছে তাদের অবগত করবো: এসপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: স্বল্প ছুটির দিন কিংবা বিশেষ দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করে অনেকেই। আশে পাশের বিনোদন মূলক জায়গা গুলো থাকে পছন্দের লিষ্টে। নারায়ণগঞ্জের প্রাণ কেন্দ্র শহীদ মিনার তারই মধ্যে অন্যতম একটি স্থান। বাহারি খাবারের মধ্যে স্ট্রিট ফুডসহ দেশীয় খাবারের সন্ধান মিলে এখানে। কিন্তু বর্তমানে পবিত্র এই শহীদ মিনার আতঙ্কের জায়গায় পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে বিপাকে পড়ছে পরিবার-বন্ধু বান্ধবী নিয়ে ঘুরতে আসা জনসাধারণ। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে প্রশাসনের সক্রিয়তা কম থাকায়, প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে অসুস্থ মানসিকতার কিশোর আতঙ্ক, বাধছে মারামারি মতো ঘটনা। আইনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নারায়ণগঞ্জে যৌথ বাহিনীর একাধিক অভিযান লক্ষ্য করা গেলেও, শহরের বিষফোড়ায় রূপ নিয়েছে শহীদ মিনারের কিশোর আতঙ্ক।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে রাত অব্দি দলে দলে আসর জমায় কিশোর বয়সী তরুনরা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনিই বিভিন্ন কারণে বিশৃঙ্খলা বাধতে দেখা যায় তাদের। কিছু কিছু তরুন ছাত্র না হওয়া সত্বেও গলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডী কার্ড ঝুলিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়ায়। প্রাথমিকভাবে একই গ্রুপের মধ্যে বাধে বাকবিতণ্ডা, একপর্যায়ে সেটা রূপ নেয় মারামারিতে। চাইলেও কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও গলায় আইডী কার্ড দেখিয়ে ছাত্র নেতা দাবি করে পাল্টা মারমুখি আচরণ করে তাদের সাথে। প্রায় সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে আহত হওয়ার মতো ঘটনাও লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিশেষ করে হেনস্তার শিকার হয় তরুণী, নারী ও মিনারে আগত শিক্ষার্থীরা। একই দৃশ্য লক্ষ করা গেছে নগরীর বাবুরাইল লেক, জল্লারপাড় লেক, ৫নং ঘাট নদীর পাড়, কেন্দ্রীয় ঈদগা মাঠসহ নবীগঞ্জ ঘাট এলাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশ্ববিদ্যাল শিক্ষার্থী জানায়, দু-একদিন পর পরই মারামারি দেখা যায়। ভয়ে কেউ সামনেও জায়না। যেই প্রতিবাদ করবে সেই বিপদে পড়বে। সেদিন স্ব চোখে দেখলাম একদল বখাটে শহীদ মিনারের পশ্চিমপাশে উপরের আড্ডা দিচ্ছে। তাদের নিজেদের মধ্যেই তর্কাতর্কি হয়। এক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে মারামারি বেধে যায়। এক কিশোর দৌড়ে গিয়ে লুচিটিক্কার দোকান থেকে মাংস কাটার ছুড়ি নিয়ে আসে আরেকজনকে মারার জন্য। এরা যে কোন সময় অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু এসব কান্ডে প্রশাসনের কোন দেখা পাওয়া যায়না।

শহীদ মিনারে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকানদার জানায়, এখানে মূলত বহিরাগতরা এসে আতঙ্ক ছড়ায়। আমরা এখানে ব্যবসা করি চাইলেও কিছু করতে পারি না। পরে দেখা যাবে আমাদের কোন ক্ষতি করে বসবে। এতো ঘটনা ঘটে গেলেও প্রশাসনের লোকজন এখানে আসে না। ৫ তারিখের পর থেকে সবাই এখন ছাত্র পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। যারা ছাত্র না, তারাও ছাত্র পরিচয় দিয়ে এসব কর্মকান্ড করছে। বাবা-মা বা পরিবারের শিক্ষার কারণেই এসব করে বেড়ায় বলে মন্তব্য করেন এই দোকানদার।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে শহীদ মিনারে কিশোরদের আনাগোনা বেড়েছে। কেউ কেউ আন্দোলনের ফায়দা লুটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডী কার্ড বাজার থেকে ছাপিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই আছে পড়াশোনা করেনা। যারা আন্দোলনে ভূমিকায় ছিলো তারাও এখন শহীদ মিনারে পরিবেশের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বখাটেদের মধ্যে কিছু আছে বিভিন্ন ফেসবুক পেইজের নামে নিজেদের সংবাদকর্মী পরিচয় বহন করে এদের নেতৃত্বে দেয়।

নাম প্রকাশ না করে এক সংবাদকর্মী জানায়, আন্দোলনে ফেসবুকে লাইভ দিয়ে নিজেদের সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে বেড়ায় কিছু কিশোর। যাদের সাংবাদিকতার নূন্যতম চর্চা ও জ্ঞান তারা ধারণ করেনা। কিন্তু তাদের এসব কর্মকান্ডে মূল ধারার সংবাদকর্মীদের নাম খারাপ করছে ছাড়া। এতে করে মানুষের মধ্যে সাংবাদিকদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। যারা নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আছেন তাদের এসব বিষয়ে কঠোর হওয়ার আহ্বান থাকবে।

বখাটে কিশোরদের বর্তমানে বড় হাতিয়ার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের নামে ফায়দা লুটে নানান অপকর্মে লিপ্ত হয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরী করছে তারা। এতে করে আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছেন সাধারণ মানুষ।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মনির হোসেন (ছদ্মনাম) জানান, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে একটা বিপ্লব কায়েম করেছে ছাত্ররা। এই আন্দোলনে আমার সন্তানরাও ছিলো। আমিও ছিলাম। কিন্তু এই আন্দোলনের নামে এখন যাচ্ছেতাই করা হচ্ছে। একদল কিশোর আছে যারা পড়াশোনা জানেনা কিন্তু নিজেকে ছাত্র পরিচয় দিয়ে বেড়ায়। প্রতিদিনই শহীদ মিনারে অপকর্মের সাথে লিপ্ত হবে। প্রশাসনের এখানে মূক্ষম ভূমিকার আশা করছি আমরা। প্রশাসন যদি এখন কিছু না করে তাহলে যে কোন সময় কোন অঘটন ঘটতে পারে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জের সংগঠক ফারহানা মানিক মুনা এ প্রতিবেদককে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধু ছাত্রদের প্লাটফর্ম বিষয়টা এমন না। শুধুযে ছাত্র হতে হবে এমন না। এখানে যদি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও যদি কোন সন্ত্রসী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হয় সেটাও মেনে নেয়ার মতো না। অপরাধের জন্য তাদের বিচারের আওতায় আসতে হবে। এখানে কোন সিল বা ট্যাগ রক্ষা করবে এমনটা আমরা বিশ্বাস করিনা। ৫ তারিখের আগে দেখেছি ছাত্রলীগের গুণ্ডা বাহিনী কিভাবে শহীদ মিনারকে দখল করেছে সেটা আমরা দেখেছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বেলায় বেলায় নিয়ম করে মারামারি হচ্ছে শহীদ মিনারে। বাহির থেকেও নিয়ে এসে শহীদ মিনারে মারা হচ্ছে। আমি মনে করি এগুলো যারা করছে প্রশাসনের জরুরী ভিত্তিতে শনাক্ত করে শহীদ মিনারকে নিরাপদ স্থানে নেওয়া দরকার। কিন্তু শহীদ মিনারকে নিরাপদ স্থানে নিতে গিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখাও যাবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন যতদিন তাদের সর্বশক্তি দিয়ে সক্রিয় না হচ্ছে ততদিন আমাদের এগুলো মোকাবিলা করতে হবে। এখন পুলিশ ভয় পাবে সেই অবস্থা নারায়ণগঞ্জে ও বাংলাদেশর নাই। যদি পুলিশের নিরাপত্তার কোন প্রসঙ্গ থাকে তাহলে সেখানে আমরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ডিল করবো। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ডিল করা তো আমাদের কাজ না। আমরা আগেও দেখেছি কিশোরদের নানান রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে। কিশোরদের গ্যাংয়ে রূপান্তর করার একটা প্রবণাতা ছিলো। তাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রশাসন যদি এখন কাজ না করে তাহলে কিশোরদের আমরা রক্ষা করতে পারবো না। যারা কিশোরদের গ্যাংয়ে রূপান্তর করতে চায় তাদের খুঁজে বের করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কিশোরদের যাতে কেউ গ্যাংয়ে রূপান্তর করে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনকে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে হবে।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন,বিভিন্ন পার্ক গুলাতে সিটি কর্পোরেশনসহ নিদির্ষ্ট সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাদের আসলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা উতিৎ। তবে আমাদের পুলিশের যা যা করা যায় আমরা করবো। শহীদ মিনারে আমাদের যে টহল টিম আছে তাদের অবগত করবো এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়ার জন্য।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, আমরা এই বিষয়ে সোচ্চার আছি। দ্রুত এই বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহন করবো। আগামী রবিবারের মধ্যে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করবো।

RSS
Follow by Email