শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Led01ধর্ম

শরতের শেষ বেলায় একদিনে নবমী-দশমী, মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দূর্গার বিদায়ের ঘণ্টা

# সর্বচ্চো নিরাপত্তার দেওয়ার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি:এডি. এসপি চাইলাউ
# মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু
# পুষ্পাঞ্জলির পর দর্পন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে উমা দেবীকে বিদায়
# একই দিনে তিথি হওয়ায় নবমী এবং দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত
# সিঁদুর খেলে দুর্গাকে রঙিন মুখে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিবাহিত নারীরা

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: এবার ভিন্ন এক নবমী এলো শরৎ’র শেষ বেলায়। নগরীতে ঢাক, ঢোল উলুধ্বনি বাজলেও বিষাদের সুর ছিলো ভক্তদের হৃদয়ে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসবের ইতি হচ্ছে আজই। আগামীকাল শুধু প্রতিমা বিসর্জন। এরই মধ্যে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। আর সেজন্য ভক্তদের মধ্যে আছে বিষাদের ছায়া। মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে গেছে মায়ের বিদায়ের ঘণ্টা। হাসিমুখে দেবী দুর্গাকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভক্তরা।

নারায়ণগঞ্জে শারদীয় দুর্গা পূজার নবমীতে সকালে মন্ডপে মন্ডপে শুরু হয় দেবীর আর্চনা। ধর্মীয় আচার শেষে দেবীর অঞ্জলী নিবেদন করেন ভক্তরা। চন্দ্রের নবমী তিথিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা পালন করেন মহানবমীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। তবে এবার কিছুটা ব্যাতিক্রম হয় সময়ের। শাস্ত্রমতে শনিবার সকাল ৬টা ১৩ মিনিটে মহানবমীর তিথি শেষ হয়, ৬টা ১৪ মিনিটে শুরু হয় দশমী তিথি। এজন্য নবমী দিনই দশমীর পূজা করেন সনাতনীরা। তবে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে রবিবার সন্ধ্যা থেকে।

এদিকে, ফুল, দূর্বা, ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘিসহ যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার পূজা শেষে অঞ্জলী দেয় ভক্তরা। এ সময় দেবী দূর্গার আশীর্বাদ প্রার্থণা করেন তারা। পুষ্পাঞ্জলির পর দর্পন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে বিদায় জানানো হয় উমা দেবীকে। একদিন আগেই দেবীর কৈলাশ যাত্রা শুরু হওয়ায় কষ্টের ছায়া ভক্তদের মাঝে।

এক পুরোহিত জানান, চব্বিশ ঘন্টা পর্যন্ত তিথী থাকে, সেটা না থাকার কারণে। চন্দ্রাংশে চন্দ্র ও সূর্যে যে সমন্বয়টা হয়, তার জন্য তিথীটা ছোট ও বেড়ে যায়। তবে এবার একটু কমে গেছে। সে কারণে এমন লগ্নে পূজাটা হয়েছে। আমরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করি, এখন দেবী আমাদের হৃদয়ের বিষয়ে উপলব্ধি করে সে প্রার্থণা পূরণ করেন। দশমীর তিথি আগামীকাল ভোর ৪টা পর্যন্ত আছে। যেহেতু দিনের বেলা দশমীর বিহিত পূজা করতে হয়, সেজন্য নবমীর পূজার পরেই দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জান যায়, সনাতন ধর্মমতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। তিথি অনুযায়ী সন্ধিপূজা আয়োজিত হয়েছে গতকাল শুক্রবার। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। এসময় মূলত দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয়। এই সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর, আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এই দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন কেবল বিসর্জনের পর্ব। নবমীর রাতে উৎসবের রাত শেষ হয়। আর দশমী রাতে মণ্ডপে মণ্ডপে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে। তবে এবছর একই দিনে তিথি হওয়ায় নবমী এবং দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মন্দিরে পূজা দিতে আসা দেওভোগের বাসিন্দা মৌ রাণী দাস বলেন, আমাদের সব কষ্ট দূর করে তিনি (দেবী দুর্গা) চলে যাবেন। এক বছর পর মা আবার আসবেন। আগামী বছর আবার আমাদের মাঝে এসে শান্তি বিলিয়ে দিয়ে যাবেন এই কামনা করি।

এদিকে পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। দশমীর আরও আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আছে সিঁদুর খেলা, মাকে মিষ্টি দান এবং এরপর প্রতিমা বিসর্জন। তবে পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে, শনিবার দশমী পূজা হয়ে গেলেও রবিবারে করা হবে প্রতিমা বিসর্জনসহ বাকি আনুষ্ঠানিকতা।

সিঁদুর খেলে দুর্গা মাকে রঙিন মুখে বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিবাহিত নারীরা। দুর্গা পূজায় সবশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। এটি শুরু হয় বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মাধ্যমে। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে-অপরকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। তারা এই সিঁদুর মাখিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান। দুর্গাকে নিয়ে যাওয়ার আগে সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর আঙুলে লেগে থাকা বাকি সিঁদুরটুকু তারা একে-অপরের মুখে মাখেন। এই সিঁদুর মাখার রীতি অনেক সময় দশমী ঘরে পালন করা হলেও অনেকে আবার নিজেদের ঘরেই খেলে থাকেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এই সিঁদুর খেলা। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করেন, নাচ-গান করেন। আর প্রত্যাশা করেন, সারাটা বছর যেন এমন আনন্দেই কাটে।

বিবাহিত নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ স্পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সাথে করে শাঁখা-সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে দশমী উদযাপন করেন। এই উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা। এই সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সকলেই মণ্ডপে ভিড় করেন নেচে গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিতরা গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার শিখন লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, বিজয়া দশমীর দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে প্রতিমা বিসর্জনের কথা বলা হয়েছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়ে ৩নং মাছ ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হবে।

RSS
Follow by Email