রূপগঞ্জে হত্যাচেষ্টা মামলায় চুরা মেহেদী ১১ মাস পর আটক
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: রূপগঞ্জ টাটকীতে গত বছরের ২৪ জুন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাচেষ্টা ও ডাকাতি মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মো. মেহেদী ওরফে চুরা মেহেদী (২৪) কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারীর পর মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেল ফতুল্লা কাস্টমস অফিস এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
ঘটনাটি রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা (নং- ৩১(৬)২৪; জিআর নং-২৭৯/২৪, ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৫৪/৪২৭/৩৭৯/৩৮০/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০) হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছিল। ওই মামলায় ভিকটিম মো. নূর আলমের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৪ জুন বিকাল সাড়ে ৪টায় পূর্ব শত্রুতার জেরে অভিযুক্ত শাহিন ওরফে ডিশ শাহিন (৩০) এর নেতৃত্বে আনুমানিক ১০-১৫ জন অজ্ঞাতনামা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ধারালো রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, সুইচ গিয়ার চাকু, ছেনদা, এসএস স্টিলের পাইপ, লোহার রড ও হকিস্টিক হাতে সজ্জিত হয়ে টাটকী এলাকায় ভিকটিম মো. নূর আলমের (২৪) বসতবাড়িতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে।
অভিযুক্তরা বাড়ির দরজা, জানালা, গেটসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর শুরু করে। এসময় নূর আলম ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে অভিযুক্তরা তার উপর এলোপাথারী হামলা চালায়। ১ নং অভিযুক্ত শাহিন ওরফে ডিশ শাহিন তার হাতে থাকা ধারালো রামদা দিয়ে নূর আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দেয়, যা তার মাথায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম সৃষ্টি করে। ৬ নং অভিযুক্ত মোঃ শান্ত (২৪) রামদা দিয়ে নূর আলমের বাম কানের ওপরের অংশে গুরুতর জখম করে। ৩ নং অভিযুক্ত মোঃ রুবেল ভূইয়া (৩৫) চাপাতি দিয়ে নূর আলমের পিঠে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
৪ নং অভিযুক্ত মোঃ প্রাবন ওরফে কুত্তা প্রাবন (২০) ধারালো চাইনিজ কুড়াল দিয়ে নূর আলমের মাথা বরাবর কোপ দিলে তিনি জীবন রক্ষার্থে ডান হাত দিয়ে ঠেকাতে যান। এতে তার ডান হাতের কব্জিতে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। এর পরপরই ৫ নং অভিযুক্ত মোঃ মেহেদী ওরফে চুরা মেহেদী (২৪) তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে নূর আলমের ডান হাতের কনুইয়ের নিচে গুরুতর জখম করে। ২ নং অভিযুক্ত মোঃ ররি খান (৩০) ধারালো সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে নূর আলমের পেটে আঘাত করে ভূঁড়ি বের করে দেয়, যা তার পেটে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। ৭ নং অভিযুক্ত মোঃ কাজল (২৫) ধারালো চাইনিজ কুড়াল দিয়ে নূর আলমের বুকের বাম পাশে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ৮ নং অভিযুক্ত মোঃ হৃদয় (২২) ছুরি দিয়ে নূর আলমের পিঠের বাম পাশে গুরুতর জখম করে। ৯ নং অভিযুক্ত মোঃ মারুফ (১৯) এসএস স্টিলের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে নূর আলমের ডান হাতের হাড় ফাটিয়ে দেয়। ১০ থেকে ১৫ নং অভিযুক্তরা লোহার রড, হকিস্টিক ও এসএস স্টিলের পাইপ দিয়ে নূর আলমের বুকে, পিঠে, কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করে।
নূর আলমের চিৎকার শুনে তার মা মোসা. কলেমান নেছা (৬০) এগিয়ে এসে অভিযুক্তদের কবল থেকে ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে ১০, ১১ ও ১২ নং অভিযুক্তরা তাকে এলোপাথাড়ি মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে। ১৩ ও ১৪ নং অভিযুক্তরা ভিকটিমের মায়ের চুলের মুঠি ধরে টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি ঘটায়।
হামলাকারীরা ভিকটিমের বসতবাড়ির দরজা, জানালা, গেট ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আনুমানিক ১,৫০,০০০/- (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার ক্ষতি সাধন করে। মারধরের সময় ১ নং অভিযুক্ত নূর আলমের মায়ের গলা থেকে এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন (মূল্য আনুমানিক ১,০০,০০০/- টাকা) ছিনিয়ে নেয়। ১,২,৩ ও ১৫ নং অভিযুক্তরা নূর আলমের ঘরে ঢুকে স্টিলের সোকেসের ড্রয়ার খুলে ব্যবসা বাবদ রাখা নগদ ১,২০,০০০/- (এক লক্ষ বিশ হাজার) টাকা এবং দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার (মূল্য আনুমানিক ২,২০,০০০/- টাকা) নিয়ে যায়।
নূর আলমের চিৎকার ও অভিযুক্তদের হৈ চৈ শুনে আশপাশের লোকজন আসতে থাকলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। যাওয়ার সময় অভিযুক্তরা হুমকি দেয় যে, তাদের সাথে বাড়াবাড়ি করলে বা এই ঘটনায় মামলা করলে নূর আলম ও তার বাড়ির লোকজনকে রাস্তাঘাটে সুযোগ মতো পেলে প্রাণে মেরে ফেলবে।
খবর পেয়ে নূর আলমের বড় ভাই ও অন্যান্যরা বাড়িতে এসে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে নূর আলম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।
ঘটনাটি রুজু হওয়ার পর থেকেই র্যাব-১১ অজ্ঞাতনামা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই ঘটনার সাথে জড়িত অভিযুক্ত মোঃ মেহেদী ওরফে চুরা মেহেদীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব। গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফতুল্লা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাবের সহকারী পরিচালক মোঃ আল মাসুদ খান, এএসপি নিশ্চিত করেছেন।