রূপগঞ্জে আগুনের বিষ, কেড়ে নিল দুটি তরতাজা প্রাণ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কয়েকটি দিন যেন অনন্তকাল ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন দুটি জীবন। রূপগঞ্জের কাজীপাড়া মঞ্জু টেক্সটাইল মিলের সেই ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণের শিকার হতভাগ্য শ্রমিক মো. হান্নান এবং মো. কবির হোসেন অবশেষে নিয়তির কাছে হার মানলেন। দীর্ঘ সাড়ে সাত ঘণ্টার ব্যবধানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শীতলতা তাদের জীবন কেড়ে নিল।
তথ্যটি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান।
গত পয়লা মে’র সেই সকাল, যখন গ্যাস লিকেজের অপ্রত্যাশিত বিস্ফোরণে মুহূর্তেই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। সেদিন অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে হাসিমুখে কাজে এসেছিলেন হান্নান ও কবির। কে জানত, এটাই তাদের কর্মস্থলে শেষ পদার্পণ হতে চলেছে? আগুনের লেলিহান শিখা তাদের স্বপ্ন, তাদের ভবিষ্যৎ নিমেষে গ্রাস করে নিয়েছিল।
দগ্ধ শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তারা ভর্তি হয়েছিলেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে। তাদের পরিবারের সদস্যরা, সহকর্মীরা সকলেই উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছিলেন, হয়তো কোনো অলৌকিক স্পর্শে তারা ফিরে আসবেন স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু ভাগ্য ছিল অন্যরকম। রবিবার গভীর রাতে প্রথম শোকের ছায়া নেমে আসে, যখন চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যান ৫২ বছর বয়সী মো. হান্নান। তার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এরপর পরদিন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় এল আরও এক দুঃসংবাদ, থামল ৪৫ বছর বয়সী কবির হোসেনের হৃদস্পন্দনও, যার ৫৩ শতাংশ শরীর দগ্ধ হয়েছিল সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে।
তাদের নিয়ে আসা সহকর্মী মো. ফারুক আহমেদের মলিন মুখ যেন ঘটনার ভয়াবহতা আরও প্রকট করে তোলে। রূপগঞ্জের সেই টেক্সটাইল মিলে সেদিন কর্মরত চারজন শ্রমিকই গ্যাস লাইনের অপ্রত্যাশিত বিষ্ফোরণের শিকার হয়েছিলেন।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, আগুনের ভয়াবহতা কেড়ে নিয়েছে দুটি প্রাণ। এই ঘটনায় দগ্ধ অপর দুই শ্রমিকের মধ্যে সাইফুল (২৮) প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও, ৩৪ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে এখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।