মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
Led01Led02জেলাজুড়েরাজনীতিসদর

রাজউকের জমি উন্মুক্ত করতে নাগরিক কমিটির হুশিয়ারী

# এ আন্দোলন চলছে চলবে: এবি সিদ্দিক
# রাজউক, রেলওয়ে ও বিআইডব্লিউটিএসহ সকল বিক্রিত জায়গার দখল মুক্ত করতে হবে: হাফিজুল ইসলাম
# একটা ইটও এই এখানে লাগাতে পারবেন না: এড মাসুম

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: রাজউকের অধিগ্রহণকৃত ভূমি উন্মুক্ত এবং চলমান মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কোজ কাজ ধরা যাবে না বলে হুশিয়ারী দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজউকের ভূমি বিক্রির প্রতিবাদে বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত শহরের বালুর মাঠ এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।

অবস্থান কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলা বাসদের সদস্য-সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হাফিজুর রহমান, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মন্টু, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, জেলা খেলাঘর আসরের উপদেষ্টা রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, নাগরিক কমিটির কার্যকরী সদস্য হাফিজুল হক, নারী নেত্রী পপি রানী সরকারসহ আরও অনেকে।

এ সময় সভায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমস্যার শেষ নেই, কিন্তু বহু সময় ধরেই আমরা এই বিষয়ে আন্দোলন করে আসছি। একটা দুর্বৃত্ত শক্তি আমাদের দেশের ওপর চেপে বসেছিলো। আমরা এই দুর্বৃত্ত শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এই সংগ্রামের লক্ষ ছিলো নারায়ণগঞ্জকে একটি শান্তিপূর্ণ নগরী হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুর্নীতির শিকড় সব জায়গায় বীর্তৃত হয়েছে। ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে নানা দুর্নীতি চলেছে। এর সাথে ছিল মাদক ব্যবসা ও বালু ব্যবসাসহ আরো কিছু। এই পরিবারের মদদে কিছু সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তাদের এই অপরাদ চক্রে এই কিছু সাংবাদিক ও নামধারী ব্যবসায়ীরাই সঙ্গ দিয়েছে। ২০০৮ সালে রাজউক এই ভূমি বিক্রির জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। সেসময়ের রাজউকের এই অবৈধ টেন্ডারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ঢাকায় ওদের অফিস ও ঘেরাও করেছি। তারা নারায়ণগঞ্জে এসে সেই টেন্ডার বাতিল ঘোষণা দেয়। ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, যদি ভূমি অধিগ্রহণ করার পর তা ব্যবহৃত করা না হয়, তাহলে সেই জমি কোনো ভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তর করে যাবে না বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু তারা এই আইন মেনে নিই। রাতারাতি এই জমি হাত বদল হয়ে কাজল, নূপুরের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। কে এই কাজল? এই কাজলের বাবা রাজাকার ছিল। ১৯৭১ সালে যে শান্তি কমিটি গঠন করা হয় সেখানে সভাপতি ছিল কাজলের বাবা। ওসমান পরিবারের অনেক লুটপাট করার জন্য কাজল সাহায্য করেছে। আজমেরী ওসমান লাশের পর লাশ ফেলেছে। যখন তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় সেখানে পুলিশের গাড়ি থেকে আজমেরী ওসমান পালিয়ে গেল। যার গাড়ি থেকে পালিয়ে গেল সেই পুলিশ হলো আজমেরী ওসমানের বোনের জামাই। আমাদের প্রশ্ন সেই পুলিশ ইফতেখার কেন এখনো পুলিশ বাহিনীতে বহাল আছে। এই জমি অবৈধ ভাবে কেনা বেচার সাথে যারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশ এবং বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, আমাদের লক্ষ্য এই নারায়ণগঞ্জকে আবারো দখলমুক্ত করা। আমাদের রাইফেল ক্লাবে শামীম ওসমান অস্রের ব্যবহারের প্রশিক্ষন দিয়েছে। রাইফেল ক্লাবকে আমরা সন্ত্রাসী মুক্ত চাই। আমরা চাই আমাদের সন্তানরাও সুটিং শিখুক। এই খালেদ হায়দার খান কাজল ওসমান পরিবারের অর্থের উৎস নিয়ন্ত্রণ করতেন। আমার অবাক লাগে আপনার মত ঘৃণিত লোক এখনো পদত্যাগ করেন নি। এই কাজল জোগসাজোস করে শামীম ওসমানের রাজত্বকে পাকাপোক্ত করেছে। সুধু সেটাই নয় কাজল অবৈধ ভাবে রাজউকের সাথে যোগসাজশ করে এই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড সরিয়ে দিয়ে রাতারাতি দখল করেছে। তখন আমরা গুটিকয়েক লোক এর প্রতিবার করেছি। পপুলারের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান আপনাকে হুশিয়ারি করে বলতে চাই। রায় না আসা পর্যন্ত জায়গা উন্মুক্ত করে দেন। আপনার বাপ শামীম ওসমান আছে সেখানে আপনাকে কিছু বলা যাবে না, এই দুঃস্বপ্ন ছেড়ে দেন কারণ একটা ইটও এই এখানে লাগাতে পারবেন না। জনগণের জন্য এটা বালুর মাঠ ছিলো সেটাই থাকবে। সরকার পতনের আন্দোলনের পর এখন মাঠ-ঘাট কারা দখল করেছে। ছাত্ররা এই স্বৈরাচারী সরকারকে কেন সিরিয়েছে, যাতে নতুন করে কেই দখল করতে পারে? এক ওসমান চলে গেছে আরেক ওসমান পরিবার প্রতিষ্ঠা হতে চাচ্ছে। আপনারা সরকার গঠন করে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই যা শুরু করেছেন তা দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, শামীম ওসমানের সেনাপতির প্রেত্তারা আপনাদের মাঝে ঢুকে গেছে। রাজপথে আমরা আছি, আমরা ছিলাম এবং আমরা থাকবো। যে কোনো ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে অবস্থান করবো। একপরিবার গেছে আরেক পরিবার চাই না। আমরা চাই রাইফেল ক্লাব আবার সন্ত্রাসীদের থেকে উন্মুক্ত হোক। পপুলারকে বলতে চাই আপনারা ব্যবসা করছেন করেন। কিন্তু রায় না আসা পর্যন্ত এখানে কোনো কাজ করা যাবে না। যখন এখানে প্রশাসন এসেছিলো তাদের লোকজন শুধু শামীম ওসমানের পায়ে ধরা বাকি ছিল। এখন ছাত্র আন্দোলন সফল হওয়াতে তারা পাল্টি নিয়েছে। ওরা ওসমান পরিবারের হাড্ডি খেয়েছে, যারা হাড্ডি খেয়েছে তারা কখনো ভালো হতে পারে না।

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা‘র সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেছেন, বাংলাদেশের ন্যারেটিভ আওয়ামী লীগ তৈরী করতে চেয়েছিল। এই নারায়ণগঞ্জকে অচল নারায়ণগঞ্জে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। এই অচল নারায়ণগঞ্জকে সচল করা দরকার। সকাল থেকেই শহরের সড়কগুলোতে বাস, গাড়ি, বিভিন্ন পরিবহন থেমে থাকে। আমরা আগেও বলেছিলাম, শহরে প্রয়োজনের তুলনায় গণপরিবহন অত্যন্ত বেশি। ৪ ফেব্রুয়ারিতে পত্রিকায় রিপোর্ট আসে, শহরে সড়কে প্রায় ৫ শতাধিক বাস রয়েছে। যার মধ্যে দেড় শতাধিকের রুট পারমিট নাই, প্রায় দেড় শতাধিক যানের ফিটনেট পারমিট নাই। ডিসি বলেছিলেন, যেসকল বাসের ফিটনেস, রুট পারমিট নাই তাদের চিহ্নিত করা হবে। ডিসি সেটা করেন নাই। চাদাবাজি করে আগে যে সকল স্ট্যান্ড করা হয়েছিল, সেগুলো এখনও আছে। শহরকে সচল করতে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে হবে। সেই সাথে রুট পার্মিট, ফিটনেস পার্মিট নাই এসকল বাসকে চিহ্নিত করে সড়কে চলাচল বন্ধ করতে হবে। পরিকল্পিতভাবে কাজ করে নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। যারা দখলদার, চাঁদাবাজ তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে নতুন করে সরকারি জায়গা, ব্যক্তিগত সম্পদ দখল করার চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বলবো অবৈধভাবে সম্পদ যে বিক্রি হয়েছে তা তার আসল মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিন। জনগণের সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন। বালুর মাঠে দখল হওয়া জায়গাগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক জেলা প্রশাসকের কাছে আমরা আহ্বান জানাই।

রথীন চক্রবর্তী বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করের সাথে সাথে দেশে একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেছে। সেটা ছাত্ররা যতোই বলুক তারা বা সাধারণের পক্ষে এটা ঠিক করা এত সহজে সম্ভব হবে না। বঙ্গবন্ধু রোডে বিক্রিতভূমি পুনরুদ্ধার এবং জনস্বার্থবিরোধী এই লুটপাট প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত মন্ত্রী, এমপি ও রাজউকের অসাধুকর্মকর্তার নাম প্রকাশ এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

হাফিজুল ইসলাম বলেন, রাজউক, রেলওয়ে, বিআইডব্লিউটিএ, রোডস এন্ড হাইওয়েসহ সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জায়গা কিছু অসাধু কর্মকর্তারা মাফিয়াদের ও সিন্ডিকেটের সাথে আতাত করে বিক্রি করে দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে ভূমির অভাবে যেখানে উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মানসম্মত হৃদরোগ ও চক্ষু-হাসপাতালসহ নগরের অনেক প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাচ্ছে না সেখানে চলছে অবাধে ভূমি লুটপাট। স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের ছত্রছায়ায় নারায়ণগঞ্জে একদল মাফিয়াগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। যার সাথে যুক্ত ছিল দুর্নীতিবাজ কিছু মন্ত্রী এবং এ সব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ আমলা-কর্মকর্তারা। আজকে আমরা বিক্রিতভূমি পূনরুদ্ধার এবং জনস্বার্থবিরোধী এই লুটপাট বিরুদ্ধে আন্দোলনে এসেছি। এই অবস্থান কর্মসূচি আমাদের চলবে। এই জমি বিক্রির প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত মন্ত্রী, এমপি ও রাজউকের অসাধুকর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, এ আন্দোলন চলছে চলবে। নারায়ণগঞ্জবাসীর জায়গা কেউকে দখল করতে দিবো না। নারায়ণগঞ্জবাসীর সকলের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমরা চাই এখানে একটা ভালো মেডিকেল কলেজ হোক, একটা হার্ট সেন্টার হোক, এখানে ভালো একটা পার্ক হোক।

RSS
Follow by Email