যে ভাবে গ্রেপ্তার হলেন সাবেক মেয়র আইভী
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শুক্রবার (৯ মে) ভোর পৌনে ৬টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ড. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবারাত ১১ টায় সাবেক মেয়রকে আটক করতে দেওভোগে অবস্থিত চুনকা কুটিরে অভিযান চালায় তারা। রাতভর এলাকাবাসী ও সমর্থকদের বাধায় বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এদিকে আইভীও জানিয়ে দেন সকাল না হওয়া পর্যন্ত তিনি যাবেন না। সে অনুযায়ী ভোরে স্বেচ্ছায় পুলিশের সাথে গাড়িতে উঠেন আইভী।
এরপর সকাল সাড়ে দশটায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিনারুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয় আওয়ামী লীগের এই নেত্রীকে। শুনানী শেষে তাকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
শেখ হাসিনার পতনের ৯ মাস পর মধ্যরাতে আইভীকে আটক করতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এদিকে মসজিদের মাইকে পুলিশ আসার খবর পেয়ে আইভীর বাড়ির চারপাশে অবস্থান নিতে শুরু করে শতশত এলাকাবাসী। মূল সড়ক থেকে বাড়িতে আসার পথে বাঁশ, ইট, পাথর ও বালু দিয়ে ব্যারিকেড দেয় তারা।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, রাত ১১ টা থেকে চুনকা কুটিরে প্রবেশ করেন মোট ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। সেখানে তারা সাবেক মেয়রের সাথে কথা বলেন।
এদিকে সারা রাত দেওভোগ ও বঙ্গবন্ধু সড়কের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি বহরকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। র্যাব, পুলিশ ও ডিবির পাশাপাশি এক ঝলক দেখা যায় সেনাবাহিনীকেও।
অবস্থান নেওয়া স্থানীয় যুবক সম্রাট বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের ছোঁয়া মেয়র আইভীর থেকেই এসেছে। আমরা শুনতে পেরেছি, কিছু পুলিশ এসেছে তাকে নিয়ে যেতে। আমরা তাকে নিতে দেবো না। বৈধ কাগজ ও দিনের আলোতে নিতে হবে, এভাবে রাতের আধারে কেন এসেছে তারা? ’
আরেকজন অবস্থাকারী সিনথিয়া জুই বলেন, ‘আমরা সবাই একত্রিত হয়েছে তাকে যেতে দিবো না, আইভী কিছু করে নাই। কেন রাত ১১ টায় কেন নিতে আসবে পুলিশ। তাদের আসতে হলে দিনের আলোতে আসতে হবে। ওনাকে আমরা মেয়র বানাইছি। নারায়ণগঞ্জ কখনও এত সুন্দর ছিল? পুলিশ থাকা পর্যন্ত আমরা এই অবস্থানেই থাকবো। পুলিশকে আমাদের বলতে হবে কিসের মামলায় তাকে আটক করা হচ্ছে। আগস্টের পর এতদিন আসে নাই, এখন কেন আসছেন তারা? উনি তো পলাতক না। খেলা দেখাইতে গিয়ে অনেক লোক বিদেশে চলে গেছেন, কিন্তু আমাদের মেয়র পালায় নাই। চোর খুনি পালাইয়ে গেছে।
শিক্ষক সিফাত বলেন, ‘ প্রশাসন কেন রাতের সাড়ে ১১ টায় আসবে। আমরা সবাই ভালোবাসার টানে আসছি। ওনার দোষ উনি চাঁদাবাজি করেনি, এটায় উনার দোষ। আমরা লড়াই করেছি সত্যের পথে। এই প্রাণ দিয়ে সৈরাচ্চারদের হটিয়ে দিয়েছি। দল নয় এখানে দেখবো তার ব্যক্তি পরিচয়। ওনার নির্বাচনী প্রচারণা যখন হয় তখন কেউকে ভাড়া করতে হয় না, সবাই আনন্দ মিছিলের মতো যায়।’
এদিকে সারা রাত অবস্থানের পর ভোর ৫টায় সমর্থকদের কাছে খবর আসে আইভি স্বেচ্ছায় পুলিশের সাথে যেতে রাজি হয়েছেন। এতে করে অবস্থানকারীরা বাড়ির বাহিরেই মাঝে পথ ছেড়ে দিয়ে ২ পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।
তবে যাওয়ার আগে বক্তব্য রাখেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না দেখিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলা যদি অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি অপরাধী। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে ২১ বছরের সেবায় কোন দল কিংবা ব্যক্তিকে আঘাত করার মতো কিছু কখনো করিনি। যখনি নারায়ণগঞ্জে হত্যাকান্ড ঘটেছে তখনি প্রতিবাদ করেছি। কোন অপরাধ না কনে অপরাধ হিসেবে আমাকে গ্রেপ্তার করা বৈষম্য বলে মনে করি বিগত সময়ের মতো নারায়ণগঞ্জবাসীকে পাশে থাকার আহবান জানাই।’
বক্তব্য শেষে নিজ বাড়ি থেকে কিছুদূর হেঁটে গাড়িতে উঠেন আইভী। এসময় নেতাকর্মীরা নানান স্লোগানের সাথে জয় বাংলা স্লোগানও দেন। আইভী তার সমর্থকদের হাত নাড়িয়ে নিজেও জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিদায় নেন।
পুলিশের গাড়িতে আইভীকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তবে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু সড়কের আলম খান লেনে পৌছাতেই হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে দেওভোগের বাসিন্দা রফিউল রাব্বি দাবি করেন, ‘আমরা যাওয়ার পথে আলম খান লেনে আসলে আমাদের উপর যুবদলের ছেলেরা হামলা করে। ওরা রাস্তার ইট পাটকেল আমাদের নিক্ষেপ করে। এতে একাধিক পুলিশ সদস্যসহ আরও নেতাকর্মীরা আহত হন। আমিও পায়ে আঘাদ পেয়েছি। কারো মাথা ফেটে গেছে, কেউ হাতে ব্যথা পেয়েছে। আহতরা খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’
এরপর পুলিশের গাড়ি বহর এসপি অফিস পৌছালে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর বাড়িতে অভিযান করা হয়। শুক্রবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ৪টি ও ফতুল্লা থানায় ১টি মোট ৫টি হত্যা এবং হত্যার চেষ্টা মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলায় তাকে আজ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থিত গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।’