বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Led02রাজনীতি

যে কারণে রাজনীতিতে এসেছিল ‌তিন ভাই

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেছেন, ১৯৭৫ সালে আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমার বড় ভাই বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে চলে গিয়েছিল ভরতে। সংসারের দায়িত্ব নিতে হলো আমাকে। ঘরে এক মুঠো চাল ছিল না, ব্যাংক একাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হলো, আমাদের গাড়ি গুলো জব্দ করে নিয়ে গেলো। বাড়িটিও উঠিয়ে দেওয়া হলো নিলামে। তখন তখন আলী আহমেদ চুনকা সাহেব, সমির হোসেন খানরা নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে ১ টাকা, ২ টাকা করে নিয়ে এই বাড়িকে রক্ষা করেছিল। মাত্র ৩৫ হাজার টাকার জন্য এই বাড়িটাকে অকশন করা হয়েছিল।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর ইউনিয়নের উন্নয়ন শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১০ টার দিকে এহসান উদ্দিন চেয়ারম্যানের বাসায় এ কথা বলেন তিনি।

সেলিম ওসমান বলেন, সেই নারায়ণগঞ্জের কথা আমার মা-বাবা ভুলতে পারেনি। তার জন্য আমাদের ৩ ভাইকে এই নারায়ণগঞ্জের মানুষের সেবা করার জন্য প্রস্তুত করেছেন। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো সংসার চালানোর, নাসিম ওসমানের স্বপ্ন ছিল জজ-ব্যারিস্টার হওয়ার। তাকে নিয়ে আসা হলো রাজনীতিতে। বাবা জীবিত অবস্থাতেই তার সিটে (আসনে) নাসিম ওসমানকে রাজনীতি করতে দেওয়া হলো। তাও আবার জাতীয়পার্টি থেকে, কারণ নির্দেশনা ছিল তাই।

সেলিম ওসমান নির্বাচনে আসার পিছনের কিছু স্মতি স্মরণ করে বলেন, ‘আমি পৌরসভায় কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলাম। আমার বাবা চাইতো নির্বাচন করি কিন্তু আমার মা চাইতো না। তিনি আমার স্ত্রীকে বলতো-নামাজ পড়ে দোয়া করো যাতে আমি পাশ না করতে পারি। আমার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা নিয়ে আমার বাবা-মার সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়া হতো। এক পর্যায়ে বাবাকে বুঝিয়ে ঘরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন থেকে সরি আসি। তখন মাকে সাহস করে জিজ্ঞাসা করে ছিলাম, আমি নির্বাচন করি, কেন তুমি চাও না। সে বললো ‘এখনও তোমার নির্বাচন করার সময় হয়নি। সময় হলে বলবো।’

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই যখন মৃত্যু বরণ করলো। নারায়ণগঞ্জের অনেক মানুষই তখন আমার কাছে গেলেন, সেখানে কোন আওয়ামী লীগ, জাতীয়পার্টি ছিল না। আমার অফিসে গিয়ে অত্যাচার করা শুরু করলেন, সবাই বললেন, আমাকে নির্বাচন করতে হবে। তখন আমি মাকে টেলিফোন করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, এরা আমাকে অত্যাচার করছে, আমি কি করবো? মা তখন উত্তর দিলেন, এক দিন তোমাকে কথা দিয়ে ছিলাম সময় আসলে নির্বাচন করতে বলবো। এখন তোমার নির্বাচন করার সময়। সংসারের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আজকের থেকে তুমি নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব নিবা। যে দায়িত্ব তোমার দাদা পালন করেছে, যে দায়িত্ব তোমার বাবা পালন করেছে, যে দায়িত্ব তোমার ভাই সম্পূর্ণ করতে পারেনি। সেই অসমাপ্ত কাজের সমাপ্ত করবা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন অ্যামেরিকায় ছিলেন, আমি আমার ব্যবসায়ীক নেতাকে তার অনুমতি নেওয়ার জন্য বললাম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওর শরীরের যে অবস্থা ওকি কি পারবে। আমি উত্তর দিয়েছিলাম, উনার যদি দোয়া থাকে আমি পারবো। এরপর আসলো নির্বাচন। এত কঠিন নির্বাচন আমি আর দেখিনি। আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী, আরেক জন সাবেক আমলা ও সংসদ সদস্য। সে সর্ম্পকে আমার চাচা। এরপর আরও ১ বার নিবাচিত হয়েছি।

বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ রশিদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানু, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয়পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান প্রমুখ।

RSS
Follow by Email