সোমবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Led05বিশেষ প্রতিবেদন

যে কারণে নগরীতে ভয়াবহ যানজট

* ২নং গেটে থেকে চাষাঢ়া যেতে আড়াই ঘন্টা সময় লেগেছে: চালক
* পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না যানজট নিরসন করা: অতি. পুলিশ সুপার
*মূল সড়কের সাথে অলিগলিতেও যানজট

সামিতুল হাসান নিরাক, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নগরবাসীর কাছে একটি অতি পরিচিত ও যন্ত্রণাদায়ক শব্দ ‘যানজট’। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের সংযুক্ত সড়কসহ প্রধান প্রধান সড়ক গুলোর মধ্যেও এই সমস্যা প্রকট। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সড়কে বেড়েই চলেছে যানজট সমস্যার তীব্রতা। বাসা থেকে বেরোনো মানেই যানজটের সম্মুখীন হওয়া। মূল সড়কের সাথে অলিগলির রাস্তায় একই চিত্র। শহরে যানজট সমস্যার বেশ কয়েকটি কারণও রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তা নির্মনে কাজ ও অবৈধ পার্কিং যানজটের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে দায়ী।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা অথচ রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক সঙ্কীর্ণ। তাছাড়া গাড়ি চলাচলের জায়গা না রেখেই অপরিকল্পিতভাবে রাস্তার পাশে ব্যাক্তিগত গাড়ি পার্কিং ও দোকানপাট গড়ে উঠছে। ফলে রাস্তায় যান চলাচলের জায়গার অভাবে যানজট বাড়ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, গাড়ি চালকদের অজ্ঞতা, রিকশা ও অটো রিকশা আধিক্য, ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, সড়কের দুই পাশের অধিকাংশ ভবন গুলোতে পার্কিং স্পেসের ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে শহরে প্রতিনিয়ত যানজট সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।

বিগত কয়েক দিন যাবত বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেলগেট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছেন বিআরটিসি পরিবহনের চালক মো. ইউনুস মিয়া। লাইভ নারায়ণগঞ্জের এ প্রতিবেদকের কাছে স্বল্প সময়ের এই রাস্তা আড়াই ঘন্টায় অতিক্রম হওয়ার তিক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এই চালক। তিনি বলেন, মাত্র আসলাম আলমখান লেন, এখানে আসতেই লাগলো ৩০ মিনিট। গতকাল ২নং গেটে থেকে চাষাঢ়া যেতে আড়াই ঘন্টা সময় লেগেছে। চাষাঢ়ায় রাস্তার কাজের জন্য যানজট বেশী হচ্ছে। মাঝে মাঝে বাসের যাত্রীরাও ক্ষেপে যায়। রোড ঘাট ক্লিয়ার থাকলে সবার জন্যই ভালো।

যানজটের কারণে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো সময়মতো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে পারে না, ফলে অসুস্থ ও বিপদাপন্ন অনেক মানুষের জীবনে নেমে আসে মারাত্মক বিপর্যয়। যানজটের ফলে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়, যার জন্য কর্মস্থলে সঠিক সময়ে পৌছানো যায় না। এতে নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা।

এম্বুলেন্সে মুন্সিগঞ্জ থেকে রোগী নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন আসলাম (ছদ্মনাম)। দেড় ঘন্টা যাবত নারায়ণগঞ্জের ভেতরেই রয়ে গেছে তার গাড়ি। তিনি জানান, মেয়ের দুদিন যাবত জ্বর। গতকাল ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পর মেয়ের অবস্থা খারাপ হতে চলছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এমন যানজটের শিকার হতে হবে জানলে মাওয়া রুট দিয়ে চলে যেতাম।

রাজধানীতে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন কাজল কানন। বেশ কয়েকদিন যাবত সঠিক সময়ে পৌছাতে পারেন না তিনি। একমাত্র কারণ যানজট। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমার অফিসের সময় থেকে ৪ ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হই। তবুও ঠিক সময়ে পৌছাতে পারি না অফিসে। বঙ্গবন্ধু সড়কে তীব্র যানজট থাকার ফলে অলিগলির ভেতর দিয়ে মিশুক বা রিক্সা দিয়ে চাষাঢ়া অব্দি যেতে পারি না। কারণ সেখানেও একই অবস্থা। তাই এখন পায়ে হেটেই চাষাঢ়া পর্যন্ত যাই। তবুও ফুটপাতে দোকানপাট থাকা পায়ে পায়ে হোচট খেতে হয় বার বার।

যানজটের কারণ জানতে চাইলে খোদ পুলিশ কর্মকর্তাও তীব্র যানজটের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন সাগর লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে যানজটের কারণ অসংখ্য। তবে এর মধ্যে মূল কয়েকটা হলো, গত কয়েক সপ্তাহ যাবত চরম ভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে রাস্তার দুই পাশে অনেক অংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। কোন গাড়ি পারে দাঁড়াতে পারছে না। সব গুলোই রাস্তার মাঝে দাঁড়াচ্ছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সড়ক ও জনপদের কাজ চলছে। পঞ্চবটী সড়কে চার পাশে মাটি ভেঙ্গে পরে গেছে।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ ঘন বসতিপূর্ণ শহর। কিন্তু সেই তুলনায়,সড়ক খুবই কম। তাছাড়া দিনের বেলা ট্রাক ঢুকছে, আমরা কিন্তু না করতে পারছি না। কারণ নারায়ণগঞ্জ বাণিজ্যিক এলাকা। পাশাপাশি ইজি বাইক তো আছেই। আমাদের নিজেদেই পুলিশ লাইন যাতায়াত করতে গেলে ১ থেকে দেড় ঘন্টা লাগে। যতটুকু সম্ভব ট্রাফিক পুলিশ গায়ে খেটে কাজ করছে। শহরে কোথাও পার্কিং ব্যবস্থা নেই। রাস্তার মধ্যে গাড়ি রেখে মার্কেটে যাচ্ছে, ব্যাক্তিগত কাজ করছে। আমরা অভিযান করে মামলা করেছি, গাড়ির হাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছি, তবুও কেউ নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আসে না। নগরবাসীর সচেতন হতে হবে, পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না যানজট নিরসন করা। তবুও আশা করি আরও ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

RSS
Follow by Email