সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Led01বিশেষ প্রতিবেদন

যানজটের কবল থেকে মুক্তি চায় নগরবাসী

# ‘দুই-একদিনের জন্য লোক দেখানো অভিযান হলে চলবে না’
# ‘যানজট সমস্যা সমাধানে কমিটি গঠন করা দরকার ’
# যানজট নিরসনে হকারদের নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে: এনসিসি সিইও
# লোকবল সংকট, ফিল্ডে নতুনদের নিয়ে কাজ কিছুটা কঠিন হচ্ছে: এডি.এসপি (ট্রাফিক)

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: যানজটের কবলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী। নগরীর সড়কগুলোতে স্থির হয়ে থাকা যানবাহনের বিশাল লাইন যেন এখন নিত্যদিনের চিত্রে পরিণত হয়েছে। ভোর সকালের দিকে যানজটের মাত্রা কিছুটা কম দেখা গেলেও, বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রতিদিনই যানজটের কারণে চাকুরিজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানান পেশার মানুষের যাতায়াতে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। নগরীতে বঙ্গবন্ধু সড়ক, সিরাজউদ্দৌলা সড়ক সহ প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বিশাল যানজট বাঁধতে দেখা যায়। দীর্ঘ সময়ে আটকরা পড়ে যানবাহনে যাত্রী বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বসে থাকার বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা এড়াতে অনেকে আবার হাঁটতে শুরু করেন। তবে সেই চলার পথও হকারদের দখলে।

অবৈধ স্ট্যান্ড, হকারদের ফুটপাথ দখল, সড়কের পাশে পার্কিং ,শহরে অতিমাত্রায় মিশুক-অটোরিকশার প্রবেশসহ বিভিন্ন কারণকে যানজটের জন্য দায়ী করে আসছে নগরবাসী। এই সমস্যা থেকে মুক্তির আশায় সকলেই প্রশাসনের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে। এরইমধ্যে নগরীর যানজট নিরসনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জেলা পুলিশ এবং বিআরটিএ‘র যৌথ উদ্যোগে অভিযান পরিচালিত হয়। গেল ১৪ নভেম্বর ও ২১ নভেম্বর নগরীর ২নং রেল গেইট, কালিরবাজার মোড, চাষাড়া, লিঙ্ক রোডে, ডিআইটি এলাকায় অবৈধ পার্কিং এর কারণে বিভিন্ন যানবহন জব্দসহ চালকদের জরিমানা করা হয়। সেই সাথে কয়েকটি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়।

পুলিশ-প্রশাসনের নেয়া এই উদ্যোগ কিছু সময়ের জন্য প্রভাব রাখলেও, যানজট নিরসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতনমহল। তারা বলছেন, যানজট দূর করতে সড়কে অবৈধ পার্কিং ও অবৈধ স্ট্যান্ড বন্ধ করতে হবে, ফুটপাথকে দখলমুক্ত করতে হবে এবং ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। পুলিশ, প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মহল ঐক্যবদ্ধ হয়ে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, যা যানজট সমস্যা সমাধানে সুদুরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, যানজট নিরসনের জন্য পুলিশ-প্রশাসন থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটিকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু তাদের অভিযান দুই-একদিনের জন্য লোক দেখানো হলে চলবে না। প্রতিদিন অভিযান চালাতে হবে। সড়কের পাশে সিএনজি, অটোরিকশার স্ট্যান্ডগুলো উৎখাত করতে হবে। সড়কের পাশে অবৈধভাবে পার্কিং করা হয়, এটি বন্ধ করতে হবে। রঙ রুটে (উল্টো পথে) যান চলাচলেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সড়কে যান চলাচল নিয়ে সিটি কর্পোরেশনকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিশিষ্ট সাংবাদিক আফজাল হোসেন পন্টি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, যানজট দূর করতে এই যৌথ উদ্যোগের প্রভাব শূণ্য বলে আমি মনে করি। দুই একদিনের অভিযানে যানজট কখনও দূর হবে না। সড়কে কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত যানজট দূর করা সম্ভব না। সড়কে ট্রাফিক আইন ভালোভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। সড়কে যে কোন প্রকার পার্কিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, ফুটপাত হকারমুক্ত করে তাদের কোথাও বসার ব্যবস্থা করা,শহরে মিশুক-অটোরিকশা প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। এগুলো করতে প্রয়োজন হলে পুলিশ-প্রশাসন, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বাস চালকদের প্রতিনিধি, মিশুক-অটোরিকশার প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি করতে হবে। কী কারণে যানজট হচ্ছে তা পয়েন্ট আউট করে সমাধানের জন্য এই কমিটি কাজ করবে। দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যানজট দূর করা সম্ভব হবে।

এদিকে, যানজট নিরসনে যৌথ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, যানজট দূর করতে আমরা যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছি। যতদিন যানজট সহনীয় পর্যায়ে কমে না আসছে, আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন থেকে বিভিন্ন কর্মী সড়কে কাজ করে যাচ্ছেন। যানজটের জন্য অন্যতম কারণ ফুটপাথের হকাররা। এদের নিয়েও আমরা পরিকল্পনা করছি। সবকিছুই একসাথে নয়, একটা একটা করে ধরছি। আমরা সামনে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিয়ে বসবো। আমরা ট্রাক মালিক সমিতি, বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করেছি। আমরা সকলের সাথে মতবিনিময় করে যানজট নিরসনে কাজ করবো।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, যানজট নিরসনে বর্তমানে প্রায় ১১০ জন কর্মকর্তা ফিল্ডে কাজ করছেন। সকাল থেকে দুপুর ও দুপুর থেকে রাত অবধি দুই শিফটে তারা কাজ করছে। শহর ছাড়াও হাইওয়ের দিকে আমাদের কাজ করতে হয়। সবমিলিয়ে আমাদের লোকবল সংকট। বেশিরভাগ ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নতুন যুক্ত হয়েছে। ফিল্ডে তাদের নিয়ে ভালোভাবে কাজ করা কঠিন হয়েছে, কিছুটা সময় লাগছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে অভিযান চলছে, আমরাও বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালাচ্ছি। অবৈধভাবে পার্কিং করার কারণে ইজিবাইক আটক করেছি। যৌথভাবে অপরাশেন হলে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারি। একা কিংবা দুইজন মিলে যখন অপারশেন চলে, তখন সে পরিমাণে প্রভাব রাখতে পারে না। এই সপ্তাহে আবার অপারশেন হবে। যানজট সহনীয় পর্যায়ে আসতে একটু সময় লাগবে।

তিনি বলেন, শহরের মধ্যে দুই থেকে তিনটি পয়েন্ট আছে যেখানে গাড়ির চালক সময় বাঁচানোর জন্য শর্টকাট নিতে উল্টো পথে ঢুকে পড়ে। এইভাবে এক কিলোমিটারের মতো যানজট বাঁধে। এর জন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেই। এর জন্য কন্সটেবল আছে। তবে তিন-চার জন করে দেওয়া সম্ভব হয় না।

RSS
Follow by Email