মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা ‘কাজ না করলে, না খেয়ে থাকতে হবে’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ঘাম ঝরানো দিন মজুরদের অধিকার আদায়ের দিন পহেলা মে। দিনটিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয় শ্রমিক দিবস হিসেবে। কিন্তু এই দিনেও পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে শ্রমিকদের। অধিকার প্রতিষ্ঠার ২৩৮ বছর পরে এসেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে শ্রমিকের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতে হয় নিষ্পেষিত দিন মজুরদের। এখনো হাড় ভাঙা খাটুনিতে মরতে হয় জনমজুরদের। বন্ধের দিনেও শ্রম দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের খেটে খাওয়া শ্রমিক।
১৮৮৬ সালের পহেলা মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সেই আত্মদানে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শ্রমিক শ্রেণির। কিন্তু ২৩৮ বছর পর এখন কঠোর পরিশ্রম দিতে হচ্ছে। একদল মুনাফাখোর কিংবা মালিকপক্ষ সুবিধা নিয়ে আরও ফুলে ফেঁপে ওঠার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় পিষ্ট হচ্ছে শ্রমিক মজুরদের জীবন। বর্তমান সময়ে এসে কোন কোন শ্রমিক জানেই না শ্রমিক দিবস কেনো পালন করা হয়। মালিক পক্ষ, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মে দিবস পালন করেন। তারা ছুটি ভোগ করেন। অথচ মে দিবস শ্রমিকদের দিবস। তাদেরই ছুটি পাওয়ার কথা। অন্যান্য দিনের মতো মে দিবসেও তারা ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। কিছু শ্রমজীবী মানুষ মে দিবসের কথা জেনেও পেটের দায়ে ও পরিবারের জীবিকার কথা চিন্তা করে শ্রমিক দিবসেও শ্রম দিচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জে ফলের আড়তের শ্রমিক এক শ্রমিকরা জানায়, আজকে কি দিবস জানি না, সকাল থেকে কাজ করছি পেটের দায়ে, কাজ না করলে তো টাকা আসবে না, খাবার জুটবে না। কি দিবম কইতাম পারমু না, আমাদের পেট চালাতে হইবো না, গরীব মানুষ নৌকা বাইয়া খাই মাথার ঘাম পায়ে হালাইয়া। গরীবের দিকে কেউ চাইবো না, চাইবো আল্লায়।
দিনমজুর মো. বিল্লাল হোসেন জানায়, আজকে মে দিবস। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিবস আজকে। আমাদের পক্ষে সরকারের কাছে অধিকার আদায়ের বিষয়ে তুলে ধরা। কিন্তু সরকার এমন কিছু করে নাই। সরকার যদি সক্ষম হইতো তাহলে আমাদেরও আজ বন্ধ থাকতো। আমরা আমাদের মতো কাজ করছি, প্রতিদিনের মতো আমরা আসছি। আমরা মার্কেটে এসে জানতে পারি আজ শ্রমিক দিবস।
নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালে বাস চালক মামুন আলী জানায়, সকাল থেকে বন্ধ ছিলো, বেলা হতেই কাজে আসতে হয়েছে। কারণ কাজ না করলে আমাদের সংসার চলবে না, সবাই না খেয়ে থাকতে হবে। শুনেছি আজকে সারা বাংলাদেশ বন্ধ, কিন্তু আমাদের তো ফ্যামিলি আছে সংসার আছে।
এক পরিবহন শ্রমিক জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, শ্রমিকদের পেটে ক্ষুধা, আবার কোম্পানী খোলা রাখছে। আমরা কাজ করছি আমাদের পেটের অভাবে। মে দিবস মানে বন্ধের দিন, শ্রমিকরা দুঃখ সুখের কতা বলমু। যারা শ্রমিক নেতা আছে তারা আমাদের দেখে না, আমাদের কোন অধিকার প্রতিষ্ঠা করে না। যদি দেখতো তাহলে আমাদের কষ্ট হতো না।
নারায়ণগঞ্জ খেয়া ঘাটের শ্রমিক মাঝি লোকনাথ দাস বলেন, আমরা সরকারের কাছে কোন মূল্যয়ন পাই নাই, শ্রমিক দিবসেও আমাদের কাজ করতে হবে পরিবারের জন্য। আমরা চাই আমাদের জন্য সরকার ব্যবস্তা গ্রহন করুক।