মে দিবসে শ্রমিক ফ্রন্টের লাল পতাকা মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: মহান মে দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১ মে) সকাল ৯টায় আলী আহম্মেদ চুনকা পাঠাগারের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নিখিল দাস। আরও বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, রি-রোলিং স্টিল মিলস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এস এম কাদির, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ।
নিখিল দাস বলেন, আজ থেকে ১৩৮ বছর আগে ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কাজ নয়, ৮ ঘণ্টা কাজ এই দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন অগাস্ট, স্পাইজ, এঞ্জেলস, ফিসার। মালিক এবং সরকার ভেবেছিল ফাঁসি দিয়ে শ্রমিক নেতাদেরকে হত্যা করে শ্রমিকদেরকে ভয় দেখানো এবং আন্দোলন দমন করা যাবে। কিন্তু ন্যায্য দাবিতে গড়ে উঠা শ্রমিকদের এই আন্দোলন হত্যা ও নির্যাতনের মাধ্যমে দমন করা যায় নাই। বরং আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর দেশে দেশে। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে ফ্রেডরিক এঙ্গেলসের নেতৃত্বে ‘দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্যারিস কংগ্রেসে’ প্রতিবছর ১ মে আন্তর্জাতিক বিক্ষোভ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৮৯০ সালের নিউইয়র্কে প্রথম মে দিবসের সমাবেশের প্রস্তাবে লেখা হয়, ‘৮ ঘণ্টা কাজের দিনের দাবি পূরণের সংগ্রাম আমরা চালিয়ে যাব, কিন্তু কখনো ভুলবো না, আমাদের শেষ লক্ষ্য হলো (পুঁজিবাদী) মজুরি ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন’। তারপর থেকেই ৮ ঘণ্টা কাজ, ন্যায্য মজুরি আর পুঁজিবাদ উচ্ছেদের সংগ্রাম একসাথেই চলছে ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ৬ শতাংশের বেশি, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ কিন্তু শ্রমিকের মজুরি বাড়ে ৫ শতাংশ। মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৭৯৫ ডলার। ১১৫ টাকা ডলার ধরলে ৫ সদস্যের একটি পরিবারে মাসিক আয় ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা হওয়ার কথা, সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। পৃথিবীর বহুদেশ বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের মডেল হিসেবে প্রশংসা করছেÑএ সমস্ত কথা আমরা সরকারের কাছ থেকে প্রতিদিন শুনছি। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান শক্তি যে শ্রমিক তারা এত কম মজুরি কেন পায়, সে প্রশ্নে শাসক শ্রেণি নীরব। পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা শ্রমিক আর মালিক শ্রমিকের বিশাল বৈষম্যের দেশ এই বাংলাদেশ। গার্মেন্টস, সুয়েটার, টেক্সটাইল, রি-রোলিং, পাট-চা, তাঁত, পরিবহন শ্রমিক, মোটর মেকানিক, রিকশাচালক, দোকান ও হোটেল কর্মচারী, পাদুকাসহ সকল সেক্টরের শ্রমিকরা মানসম্পন্ন জীবনযাপনের মতো মজুরি থেকে বঞ্চিত।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার গার্মেন্টসে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেছে। সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো অধিকাংশ কারখানায় বাস্তবায়ন হয়নি। চার মাস হয়ে গেল সরকার যে সকল কারখানায় মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যান্য সেক্টরে এখনও মজুরি বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দেশের ৯০ ভাগ শ্রমিক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের। এদের আয় বাড়েনি। শ্রমিকের দীর্ঘদিনের দাবি রেশনের। উচ্চ নিত্যপণ্যের দামের কারণে শ্রমিক খাদ্য তালিকা থেকে খাবার কমিয়ে দিয়েছে। ঋণ করে তাদের সংসার চালানো হচ্ছে। কিন্তু সরকার শ্রমিকের রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাত মিলে ৭ কোটি ৩৬ লাখ শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করেও নিজেদের দারিদ্র্য দূর করতে পারছে না, অন্যদিকে কয়েক লাখ কোটিপতির জীবনে বিলাসিতার শেষ নেই। শ্রমিকদেরকে শোষণ করেই তাদের এই সম্পদের সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকরা সচেতন হলে এই অন্যায় শোষণমুলক ব্যবস্থা পাল্টানোর সংগ্রাম করবেই, এটা মালিকরা জানে। সে কারণে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার পথে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছে। শ্রম আইন, বিধিমালা, প্রশাসন-পুলিশ, মাস্তান, শ্রমিকনেতা নামধারী একদল দালালদের ব্যবহার করে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সংগঠিত হতে বাধা দেয়। কারণ তারা জানে শ্রমিকরা সংখ্যায় যত বেশি হোক না কেন অসংগঠিত থাকলে তারা দুর্বল ও অসহায়।
নেতৃবৃন্দ মহার্ঘ ভাতা প্রদান, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন ও শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান এবং কাজ, ন্যায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শক্তিশালী করুন।