মালিকানা দাবিতে নগরীর এটেল মাটি হোটেল উচ্ছেদ, হামলার অভিযোগ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নগরীর এটেল মাটি হোটেলের জমির মালিকানা দাবিতে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সোমবার (৭ জুলাই) নগরীর চাষাড়ার বাগে জান্নাত মসজিদ সংলগ্ন মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। তবে এসময় মালিকানার দাবিতে দুপক্ষের মাঝে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায় তা হাতাহাতিতে রূপ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও ব্যবসায়ি গোলাম সরোয়ার সাঈদ আহত হন।
ঘটনার বিষয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাইভ নারায়ণগঞ্জকে তিনি বলেন, রেস্টুরেন্টের ওইখানের চৌদ্দ শতাংশ জায়গার মালিক ফয়জুর রহমান। উনি ২০০৩ বা ২০০৬ সালে সে জমির ক্রয় সূত্রে মালিক হয়। এরপর ২০১৩ সালে তিনি আমাকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দেন ভবন নির্মাণের জন্য। তখন ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নিলে পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে আগাতে পারি নি। অতঃপর পাঁচে আগস্টের পর আমরা যখন আবার কাজ শুরু করি তখন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রানা আমাদের কাজে বাধা দেয়। পরবর্তীতে তার সাথে এই জমি বিষয়ে বেশ কয়েকবার বসেছি, সে আমার মালিকানার কাগজ দেখতে চেয়েছে, আমরা দেখিয়েছি। এরপরও তাকে বলা হয়েছিল আমরা কাজ শুরু করবো সে যেন নতুন করে কোন ঝামেলা না করে। এছাড়াও ২০০১ সালে সিটি কপোরেশন একটি রাজনৈতিক কারণে এই জায়গাটির উপরে একটি মামলা করে। ওখানে ৯৭ শতাংশ মধ্যে শুধু আমার ১৪ শতাংশের ওপর মামলা করা হয়েছে। অথচ আদালতে বিগত ১৪ বছর পর্যন্ত কোন কাগজের ধারায় তারা মালিক সেটা এখন পর্যন্ত জমা দিতে পারিনি। এই নিয়ে সে আদালতের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ তাকে চার্যও করেছে। আদালতের বলার পরও তারা এই মামলার গত ডেটের সাক্ষীও আনতে পারেনি।
জমির উপর এনসিসির বরাদ্ধ বিষয়ে এ ব্যবসায়ি বলেন, মামলা চলমান থাকা অবস্থায় সেই রানা সিটি কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করে এই জায়গার উপর ২২০ স্কয়ার ফিটের উপরে একটি বরাদ্দ নিয়ে আসে। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি সেটা রানা নয় অন্য একটা ছেলে এনেছে তবে ভেতরে ভেতরে রানাই কাজটা করিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ভাড়া দিলে সম্পূর্ন জায়গাটাকে ভাড়া দেবে, ১৪ শতাংশ জায়গার মধ্যে ২২০ স্কয়ার ফিটের ভাড়া কেন দেবে। আমি এতদিন ভবনের কাজ ধরিনি যেহেতু মামলা চলছিল, এখন মামলা প্রায় শেষের পর্যায়ে তাই আমরা এরপর কাজ ধরবো। কিন্তু এখানে রানা আমাদের কথা না শুনে এখানে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে। এতে আমরা কোর্ট থেকে ১৪৫ ইস্যু করি।
সেই দোকানের জমিতে কাজ শুরুর বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এ সম্পূর্ন বিষয়টি থানার সাথে কথা বলার পর সেখান থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। পরবর্তীতে আমরা সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলেছি। সেনাবাহিনীর মেজর আফজাল সাহেব কিছুদিন আগে আমাকে জানিয়েছে, তারা রানাকে ডেকে কথা বলেছে। রানা তাদেরকে জানিয়েছে এইখানের ভবনের কাজে সে নেই। সেনাবাহিনী থেকে আমাকে জানানো হয়েছে যেহেতু এখানে রানার কোন ইনবলমেন্ট নেই তাই আমরা কাজ আপনি শুরু করতে পারি। গতকাল রাতে রানার সাথে এ নিয়ে কথা হয়, আমি বলেছি যেহেতু আপনার এখানে কোন ইনবলমেন্ট নেই তাই আমি আমার মত কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে প্রস্তুতি নিয়ে সকালবেলা ওই জায়গায় অনেকগুলো ময়লা ছিল সেগুলো অপসারণের জন্য বেকু নিয়ে যাই। আমাদের কাজ শুরু হওয়ার আধা ঘন্টা পর লোকজন আসে। লোকজনদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সদর থানার সেক্রেটারি জুলহাসও ছিল। সে আসছে আমাদের সাথে ভালো মন্দ কথা বলেছে, সে তার পক্ষে যুক্তি রেখেছে, আমি আমার পক্ষে যুক্তি রেখেছি। আমাদের কথার মাঝে হঠাৎ করে কমিশনার শকু ভাই এসেছেন। তিনি এসে বলেছেন, এগুলো সবই সিটি কর্পোরেশনের জায়গা। তবে তার কথাগুলো সত্যি নয়। এছাড়াও কাউন্সিলর যে এই বিষয়ে কথা বলতে এসেছে, এখানে তো তার আসার কোন এখতিয়ার নেই। যদি এই জমিটা সিটি কর্পোরেশনের হয়ে থাকে তাহলে সিটি কর্পোরেশনের কোন কর্মকর্তা আসবে। কর্মকর্তারা প্রয়োজনে পুলিশ নিয়ে এসে তারা জায়গার মালিকানা প্রমাণ করবে আমরা চলে যাবো। শকু ভাই কাউন্সিলর না তবুও সে আসার পর পরিবেশটা ঘোলা হয়ে গেছে। শকু ভাইয়ের কথা বলার মাঝে রানা ঘটনাস্থলে আসে। যখন আমি রানাকে জিজ্ঞেস করলাম যে আপনি কিভাবে কাজ শুরু করলেন সেটা বলেন, তখন সে আমাকে কিছু না বলেই তার লোকজন আমার উপর হামলা শুরু করে। আমি এই বিষয়টি সেনাবাহিনীকে অবহিত করেছে, এবং জেলা পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে দিচ্ছি।
অভিযোগ করে চেম্বারের এই পরিচালক আরও বলেন, সম্পূর্ণ ঘটনাটি ঘটেছে সিটি কর্পোরেশনের জন্য। তারা রানাকে বরাদ্দ না দিলে সে এখানে আসতো না। রানা একটি দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে, কাগজ নিয়ে এসে ১৪ শতাংশ জায়গার উপর ২২০ স্কোয়ার ফিটের বরাদ্দে নিয়েছে যেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এখানে সিটি কর্পোরেশন অবৈধ কাজ করেছে, এবং রানা তার রাজনৈতিক পরিচয় অপব্যবহার করে আমাকে এক বছর যাবত আমার জমিতে কাজ করতে দিচ্ছে না। আমি প্রশাসনের কাছে দাবি রাখি, আজ সে হামলা হলো সে হামলার সুষ্ঠু বিচার হোক। এবং আমি আমার জায়গা যেন নিরাপদে কাজ করতে পারি সেটা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে ব্যবসায়িকে মারধর এবং বেকু দিয়ে দোকান ভাংচুরের ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন এনসিসির ১২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু।
লাইভ নারায়ণগঞ্জকে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি বাসায় ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে খবর পাই সিটি কর্পোরেশনের পৌর মার্কেটে বেকু নিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমি সাথে সাথে সিটি কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে জানায় সেখানে তারা বেকুবা বা কোন টিম পাঠায়নি। এরপর আমি নিজে ঘটনা্স্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখলাম একটি দোকান সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সাঈদ আমার পূর্ব পরিচিত, তার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। তবে সে কেন এরকম একটা বেআইনি কাজ কেন করলো সেটা আমার বোধগম্য নয়। লাজ ফার্মা থেকে বাগে জান্নাত মসজিদ, এবং পিছনের স্কুল সবগুলো সিটি কর্পোরেশনের জমি। আমি ওই সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং চারবারের জনপ্রতিনিধি, এই বিষয়টা আমার জানা আছে। একজন ব্যক্তি কোন প্রশাসন বা পুলিশ ছাড়াই একটি রানিং দোকানের মধ্যে বেকু চালিয়ে দিল এটা কি করে হতে পারে। জমির বিষয়ে আমি সাঈদকে তার মালিকানা কথা জিজ্ঞেস করেছি, এই জমির মালিকানা সে হলে এতদিন সিটি কর্পোরেশন কেন ভাড়া তুলছে। এই মার্কেট, জমি ও এই দোকান পূর্বের পশ্চিমের সম্পূর্ণ সিটি কর্পোরেশনের। যে ভদ্রলোক ওনাকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়েছে সে ভদ্রলোকের জমি সেই জায়গাতেই আছে, সেখানে তো কেউ যায়নি। সাঈদ বলছে আমার এখানে রাস্তা প্রয়োজন, কিন্তু তার রাস্তা প্রয়োজন হলে একটি রানিং দোকানকে সে ভেঙে দিতে পারে? ঘটনাস্থলনের সাংবাদিকরা ছিল, তারা সাইদের কাছে কাগজপত্র চেয়েছিল কিন্তু সে তখন দেখাতে পারেনি। কিন্তু বিপরীতে দোকান ও দোকান দেখাশোনা করা লোকজন সিটি কর্পোরেশনের প্রদত্ত ভাড়ার রিসেট এবং সকল কাগজপত্র দেখিয়েছে।
সাবেক এই কাউন্সিলর আরও বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব নাজুক অবস্থায় আছে। এ সময়ে সে এসে একটি দোকানে বেকু লাগিয়ে দিল এবং মনে করলো জায়গা উচ্ছেদ হয়ে গেছে, এই জমি এখন তার এটা তো হতে পারে না। ঘটনাস্থলে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মী আহত হয়। সেটা দেখে রানা একটু উত্তেজিত হয়ে যায়। নিজের দলের কর্মী আহত হয়েছে এটা দেখে একটু উত্তেজিত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ঘটনাটা যে এ পর্যায়ে যাবে সেটা আমিও বুঝতে পারিনি। আমরা কখনো দেখিনি সিটি কর্পোরেশনের কোন জায়গায় অন্য কোন কোম্পানিকে দেখভালের জন্য দেয়া হয়। এ মার্কেট হওয়ার পর ২০১২ সালে সে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়েছে। তাহলে সেই থেকে এই ১৩ বছর পর্যন্ত সে কি করলো। এতো বছর পর কেন আসলো। কদিন আগেও দেখলাম দোকানের মধ্যে টাইলস দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। যতটুকু জানতে পেরেছি তারা আগস্টের দিকে উদ্বোধন করতেন। এটেল মাটি প্রতিষ্ঠান মালিক বলেছে যেহেতু জুলাই মাস চলছে, এই মাসে দোকান উদ্বোধন করলে খারাপ দেখা যায়। তাই আগস্ট এর প্রথম সপ্তাহের দিকে উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে আজ বেকু নিয়ে গিয়ে তার প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। সাইদের উপর যে হামলাটা হয়েছে সেটাও ঠিক না এবং বেকু দিয়ে রানিং দোকান ভেঙে দিলো এটাও ঠিক না।