মহালয়ার সুরে জাগলো না.গঞ্জ, পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের সূচনা
# শান্তি, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ও সম্প্রীতি বজায় রেখে কাজ করছি: ডিসি
# সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে, নাম্বার প্রতিটি মন্দিরে দেওয়া থাকবে: এসপি
# দলের কোনো সদস্য শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সাখাওয়াত
# বিসর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব: টিপু
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: ভোরের নরম আলোয় যখন প্রকৃতিতে মিশে ছিল এক স্নিগ্ধ আমেজ, তখন নারায়ণগঞ্জের মন্দিরে মন্দিরে বেজে উঠলো শঙ্খ, ঘণ্টা আর মন্ত্রের ধ্বনি। দেড়’শ বছরের ইতিহাসে পঞ্চমবারের মতো মহালয়ার পুণ্য লগ্নে, দেবী দুর্গা যেন নেমে এলেন নারায়ণগঞ্জের মাটিতে। এই দিনটি শুধু পিতৃপক্ষের শেষ নয়, দেবীপক্ষের শুভ সূচনা। আমলাপাড়া শ্রী শ্রী লক্ষ্মী জনার্দ্দন বালা জিউর আখড়া পরিণত হলো এক জীবন্ত দুর্গা মঞ্চে। এখানে কেবল মন্ত্র পাঠ নয়, ছিল দেবীমাহাত্ম্যম্ শাস্ত্র থেকে স্তোত্রপাঠ, যা শত শত ভক্তের হৃদয়ে বয়ে আনছিল এক পবিত্র আবেগ।
ভোরের আলো ফুটতেই আমলাপাড়া পূজা মণ্ডপে দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একত্রিত হয়ে উলুধ্বনি আর চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিলেন। অসুর বধের যে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করা হয়, তা দেখে ভক্তরা এতটাই মুগ্ধ ও আন্দলিত হন যে, তারা আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং প্রতি বছর এমন আয়োজন করার প্রত্যাশা করেন। মহালয়ার মধ্য দিয়ে কেবল দুর্গাপূজা শুরু হয় না, শুরু হয় এক ঐক্যের উৎসব, যেখানে ভক্তরা দেবীর কাছে অশুভ শক্তি থেকে দেশ মুক্তির প্রার্থনা করেন।
এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজে, অর্থাৎ হাতিতে। শাস্ত্রমতে, গজে দেবীর আগমন হলে মর্ত্যলোক সুখ, সমৃদ্ধি এবং শান্তিতে ভরে ওঠে। এর ফলে পরিশ্রমের ফল মেলে, এবং অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি হয় না। কিন্তু বিজয়া দশমীতে দেবীর গমন হবে দোলায় বা পালকিতে। শাস্ত্রমতে, দোলায় গমন মহামারী, ভূমিকম্প এবং অতিমৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়, যা ভক্তদের মনে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
এ বছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট ২২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯টি, বন্দরে ২৯টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি, আড়াইহাজারে ৩৬টি এবং রূপগঞ্জে ৪৪টি মণ্ডপ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “নারায়ণগঞ্জে মোট ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমরা শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে এই উৎসব উদযাপনের জন্য কাজ করছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলাদেশের এক অনন্য শক্তি। এই শক্তিকে অক্ষুণ্ণ রেখে আমরা সবাই মিলেমিশে প্রতিটি উৎসব উদযাপন করব।”
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, এবার দুর্গাপূজায় পুলিশের পক্ষ থেকে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, “সার্বক্ষণিক আমাদের একটি কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। কন্ট্রোল রুমের নাম্বারগুলো প্রতিটি মন্দিরের কমিটির সদস্যদের কাছে দেওয়া থাকবে, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পারে। আশা করি আমরা সবার সহযোগিতায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সুন্দর পূজা উপহার দিতে পারব।”
শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিও বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায়, দুর্গাপূজার সময় মহানগরীর প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিএনপির পক্ষ থেকে কমপক্ষে ১০ জন করে কর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, “আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের সকল জেলা ও মহানগরের নেতাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তার নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দুর্গাপূজার সময় যেন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। যদি দলের কোনো সদস্য শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বা উসকানিমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আবু আল ইউসুফ খান টিসুফ বলেন, “তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পূজার সময় পাহারার দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা বিগত বছরগুলোতেও এভাবে পাশে ছিলাম। এই বছরও আমরা শেষ পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থেকে তাদের উৎসব সফল করতে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখব। বিসর্জন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।”
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মহালয়া ২১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। এই দিনে পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী। লক্ষ্মীপূজা ৬ অক্টোবর এবং কালীপূজা ২০ অক্টোবর।