বুধবার, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
Led01রাজনীতি

‘মহল্লার প্রতিটি মসজিদকে কুরআন শিক্ষার কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক’

#ভারতের চ্যানেল দেখে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অশ্লীলতা এসেছে

লাইভ নারায়ণগঞ্জ: জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন বলেন, নির্বাচনে যারা খারাপ কাজ, মাদক ও অপসংস্কৃতির সাথে জড়িত তাদের আমরা বয়কট করবো। কারণ ভোট দেওয়ার ক্ষমতা আমার হাতে। আমার ভোট আমি ভালো মানুষকে দেবো। আমাদের বুঝতে হবে আমাদের কাছে কি ক্ষমতা আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন চ্যানেল আমাদের ছেলেমেয়েরা দেখে। তাই তাদের মধ্যে অশ্লীলতা এসেছে। ছোটবেলায় দেখতাম ওলামায়ে কেরামরা নামাজ পড়াতেন, আযান দিতেন। তারা কিন্তু সাধারন মানুষের সাথে মিশতেন না। উনারা কোন আন্দোলন সংগ্রাম জড়িত হতেন না। ওয়াজের সময় গর্ব করে বলতেন আমরা কোন রাজনীতির সাথে জড়িত না। কিন্তু নবীরা সাহাবীরা দ্বীন ও জনগণের জন্য কাজ করেছেন।

সোমবার (৬ জানুয়ারি) ফতুল্লায় বক্তাবলিতে ইমাম ও আলেম সমাজের উদ্যোগে ‘মাদক ও অপসাংস্কৃতির ভয়াল থাবায় সামাজিক অবক্ষয় থেকে উত্তরণ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন গিয়াসউদ্দিন।

এসময় তিনি আরও বলেন, এখনকার ওলামায়ে কেরামরাও একই রকম। তারা শুধু দ্বীন নয় জনগণ ও রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেন। কারাবরণ ও নির্যাতন সহ্য করেও দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করেন। ওলামায়ে কেরামদের নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। আমি আউয়াল সাহেব তো অনেক শ্রদ্ধা করি। এখানে মাসুম বিল্লাহ ভাইও আছেন। তারা ইসলামের কাজও করে আন্দোলন সংগ্রাম করে। তাদের মধ্যে যে স্পিড আছে এটা দিয়ে অনেক অসাধ্যকে সাধন করা যায়। বিগত সরকারের আমলে অনেক ওলামায়ে কেরামদের নির্যাতন করা হয়েছে কিন্তু তারা থেমে যাননি।

সাবেক সংসদ সদস্য আরও বলেন, মাদক ও অপসংস্কৃতির সমাজ থেকে রোধ করার দায়িত্ব আমরা সকলেই নিতে পারি। এতে কারো উপর নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। কাজটি করতে হলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের কোরআন এবং হাদিসের শিক্ষা দিতে হবে। ছোটকাল থেকেই যদি কোরআন হাদিসের শিক্ষা আমরা সন্তানকে দেই, তাহলে সেটা ভ্যাকসিনের মত তার শরীরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবে। আসুন আমরা মুসলিম পরিবারের সন্তানদের সকাল বেলা উঠিয়ে তাদের শিক্ষা কোরআন শিখাতে পাঠাবো। যদি প্রথম থেকে তাদের শিক্ষা দিতে পারেন তাহলে আর আন্দোলন সংগ্রাম না করলেও চলবে। ছোটবেলায় আমাকে প্রথমে কোন স্কুল বা কিন্ডারগার্ডেনে ভর্তি করা হয়নি। আমাকে বাসার পাশের এক মসজিদে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে আলিফ-বা দিয়ে আমার জীবনের পড়ালেখা শুরু হয়। কোরআন খতম এবং নামাজ শিক্ষা পাওয়ার পর আমাকে স্কুলে পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি আলেমকে আমি অনুরোধ করতে চাই, পাড়া মহল্লার প্রতিটি মসজিদকে আবারো কোরআন শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। অভিভাবকরা চেষ্টা করবেন আপনাদের সন্তানেরা সকালবেলা যেন কোরআন শিখতে মসজিদে আসে।

সেমিনারে তিনি আরও বলেন, আমরাই আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে কন্ট্রোল করতে পারবো। যারা সমাজে নেতৃত্ব দেন তারা যদি সৎ এবং ভালো হন, তাহলেই সমাজ সুন্দরভাবে চলবে ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। যারা ন্যায় বিচার করার বুদ্ধিমত্তা রাখে এবং সৎ তাদেরকে নিয়ে কমিটি করেই সমাজের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অনেক সময় এমন দেখা যায়, হাতে-পায়ে আমাদের সন্তানেরা বলিষ্ঠ হয়ে গেলে পিতা-মাতাদের কথা শুনেনা। তখন সে যদি নেশা করে কিংবা অপসংস্কৃতির দিকে যায় তখন মা-বাবা বাধা দিলেও সে শোনে না, উল্টো হুমকি ধামকি দেয়। সেখানে সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। যেখানে বৃদ্ধ পিতা সন্তানকে শাসন করতে পারে না সেখানে সমাজ এগিয়ে যেতে হবে। যদি কোন মহল্লায় কেউ মাদক সেবন করে বা বিক্রি করে, সেই মহল্লার লোকেদের এই বিষয়টাই অজানা থাকার কথা না। পুলিশ বা রাষ্ট্র বিচার করার আগে আপনাদের কাছেও তো একটি পাওয়ার আছে। আপনারা চাইলে সেটা দিয়েও বিচার করতে পারেন। শুক্রবার অনেকেই মসজিদে যায়, সেখানে ওলামায়ে কেরামরা আমাদের বিভিন্ন দ্বীনি শিক্ষা দেন। শুক্রবার যদি সমাজের মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবকদের নাম ঘোষণা করা হয়, এবং তাদের একটি তালিকা মসজিদের টাঙিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেই অপমানবোধ থেকে তারা এই মাদকের জগত থেকে ফিরে আসবে। মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করে দেবো।

গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমরা নামাজ রোজা কালাম ইবাদত করি জান্নাত লাভের আশায় ও আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য। কিন্তু ইবাদত করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় খারাপ কাজে জড়িত হয়ে যাই। বার্ষিক এক ওয়াজ মাহফিল করতে গেলে আগে বৈঠক করতে হয় কাকে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি করতে হবে সেই নিয়ে। এই বৈঠকে গিয়ে আমরা চিন্তা করি মসজিদ চলার জন্য কে এক টন রড দিতে পারবে, কে একশো বস্তা সিমেন্ট দিতে পারবে তাকেই প্রধান অতিথি করতে হবে। সে যদি চোর বা ঘুষখোর হয় তাহলেও তাকে আমন্ত্রণ দিয়ে এনে ওলামায়ে কেরামদের পাশের বড় চেয়ারে বসাই। তাহলে ওই চোর বা বাটপার লোকটা চিন্তা করে এখানে এসে সম্মান পাওয়ার যোগ্যতাই হলো টাকা। তখনই তার এই টাকা কামানোর প্রবণতা বাড়ে। আপনার আমার সন্তানও ভাবে যদি এভাবে টাকা ইনকাম করেও সম্মান পাওয়া যাবে। তাই আমরা এই ধরনের ভালো কাজের ক্ষেত্রে চোর বাটপারদের প্রধান বা বিশেষ অতিথি করবো না। এ কাজগুলো আমাদের বাদ দিতে হবে। আল্লাহর ঘর নির্মাণ করার কাজে হাত দিয়েছি, আল্লাহ নিজেই নির্মাণ করার ব্যবস্থা করে দেবে। আর যদি ভালো মানুষদের সম্মানীত করা যায় তাহলে আমাদের সন্তানরা শিখবে যে সম্মানিত হতে হলে ভালো মানুষ হতে হবে। তারা ভালো মানুষ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে।

RSS
Follow by Email