ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের নোংরা শৌচাগার, শয্যার অভাবে মেঝেতে চিকিৎসা
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: যেখানে জীবন রক্ষার আশা নিয়ে মানুষ ছুটে আসে, সেই নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল এখন পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের এক নতুন কেন্দ্রে। হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতা, বিশেষ করে শৌচাগারগুলোর ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সম্প্রতি এক রোগীর তিক্ত অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে হাসপাতালটির বেহাল দশার করুণ চিত্র সবার সামনে চলে আসে।
ভুক্তভোগী আফরিন আহমেদ হিয়া তার ফেসবুক পোস্টে হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের এক নির্মম উদাহরণ তুলে ধরেছেন:
“গত পরশু জ্বরের থেকা হাতপা খিচানি দিয়া শক্ত হয়া গেসিল। তারপর ভিক্টোরীয়া হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিসে। ডাক্তার সেলাইন খাওয়াইল আর একটা অসুধ দিল আর দিল সাপোজিটারি কারণ জ্বর কমাইতে হবে।
আমার সেন্স আসিল,, হাত পা বাকা হইয়া পিঠ থেকা শুরু কইরা মাথার পিছনে এমন রগে টান দিসিল,, মনে হইতাসিল মাথার রগ ছিরা যাইব।
এই অবস্থায় আমি যখন কাতরাইতাসি,, ইমারজেন্সি ডাক্তারের রুমে বিশ-পঁচিশ মানুষের লাইন।। কোন রকমে আমার ব্যপক চিৎকার শুইনা ডাক্তার অসুধ দিল আর মুখে স্যলাইন খাওয়াইতে কইল। সেলাইন খায়ার পরে,,, পশ্চাতদেশ দিয়া সাপোজিটারি দিতে হবে।
ইমারজেন্সিতে কোন বাথরুম নাই। তো কি আর করা এত এত লেকের সামনেই প্যান্ট খুইলা দিল সাপোজিটারি। পরে ধরসে হিসু,, কারণ স্যালাইন খাইসিলাম এক বোতল।
এলা কই হিসু করমু,,,এই যন্ত্রনা।
পরে নিচতলায় ইমারজেন্সি থেকা অনেকখানি ভিতরে ডাইরিয়া সেকশন। ওইখানে নিয়া যাইতে যাইতেই আমি হিসু কইরা দিসি প্যন্টে।
এরপর কিছুটা স্বাভাবিক হইতাসি,,, তো ক্যনলা দিয়া স্যলাইন দিবো। এইসময় গেসেগা কারেন্ট,, মোবাইলের লাইট দিয়া ক্যনলা পড়ায়ে স্যলাইন দিল। এরপর শুরু হইল মশার যন্ত্রণা। আমার আব্বা আর দিনার সমানে আমার দুইহাত ম্যসেজ করতাসে। আর আমার ননাস যান-প্রাণ দিয়া মশা তাড়াইতাসে।
প্রায় আধঘণ্টা পরে কারেন্ট আইসে। সেলাইন দিতে দিতে দেখলার একটা বেডে দুইজন কইরা স্যলাইন দিতাসে। একজনের পায়ের কাছে আরেকজনের মাথা।
এরমধ্যে দিনারে আবার একবোতল স্যলাইন আর ডাবের পানি খাওয়াইল। বারবার হিসু পাইতাসে। এইসময়ে কিছুটা স্ট্যাবল হইসি, হাইট্টাা ডাইরিয়া সেকশনের টয়লেটে যাইতে পারি। তো বাথরুমে গিয়া দেখি,,, টয়লেটের কমডের চারপাশে দলা দলা গু ঠেইলা বমি আসতাসে।
কি করমু বুঝতে পারতাসিলাম না। যাস্ট চোখ- নাক বন্ধ কইরা হিসু করসি।
এই কয়েকমাস এতপরিমানে মানুষ অসুস্থ হইসে,, হাসপাতালে গেলে বুঝা যায় আমরা কোন নরকে থাকি। একটারপর একটা রোগী আসতাসে,, একটু বসতে দিবো রোগীরে,, একটা বেডে শোয়াইবো তার উপায় নাই।
আমি প্রতিবার টয়েলেটে যাইতাসি,, আর আমার আব্বা বেড পাহারা দিতাসে।
এই হইল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এখন ভালো আছি।
সকলের দোয়ায় সুস্থ আছি।
এই অবস্থার কোন পরিবর্তন হবেনা জানি,,,
তাও লিখলাম যদি এইসব অতিরিক্ত অসুস্থতার দিনগুলিতে পর্যাপ্ত বেড আর একটা গু ছাড়া বাথরুম পাওয়া যায়।”
স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন
রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালের ভেতরে এ ধরনের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক নীতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে হাসপাতালকে জীবাণুমুক্ত থাকার কথা, সেখানে এমন নোংরা পরিবেশে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। শুধুমাত্র শৌচাগারই নয়, পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়, যা দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণেও অনেক সময় রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এসব সমস্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
কর্তৃপক্ষের নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ
বারবার অভিযোগ করার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীরবতা সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই হাসপাতালটি ধীরে ধীরে এমন দুরবস্থায় পৌঁছেছে। অবিলম্বে এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা, অন্যথায় এটি জনগণের আস্থা হারাবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালকে সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জহিরুল লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা হাসপাতালের সংস্কারের কাজ করছি। জরুরী বিভাগ ভেঙ্গে দুটো ওয়াশরুম তৈরী করছি। এ কাজ গুলোর জন্য আমাদের জরুরী বিভাগের সাথে যে অবজারভেশন রুমে বিছানা গুলো ছিলো, সেগুলো আপাতত বাহিরে রাখা হয়েছে। আমাদের এই কাজ গুলো শেষ হতে ১ সপ্তাহের মতো লাগবে।