ভিক্টোরিয়ায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হাসপাতালের লেবার রুমে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৃত নবজাতকের লাশ নিয়ে হাসপাতালের সামনেই বিক্ষোভ করে স্বজনেররা। চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নবজাতকের পিতা লিটন চন্দ্র সাহা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩ টায় নবজাকতের মা লিপি রানী সাহার ব্যথা অনুভব হলে স্বজনেররা তাকে নিয়ে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে আসে। পরবর্তীতে ডা. আনুকা রায়ের বিভাগে চেকাপের পর নার্সদের সাথে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয় লিপিকে। ৪ টায় নবজাতকের জন্ম হলে বাচ্চার মা শিশুর কান্না শুনতে পায়, কিন্তু নার্স বাচ্চাকে মায়ের কাছে না দিয়ে নানা অজুহাত দেখাতে থাকে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বাচ্চার বাবাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জানায় তাদের সন্তান ৬/৭ দিন আগে মায়ের গর্ভেই মৃত্যুবরণ করেছে। নবজাতকের লাশ নিয়ে যেতে স্বজনদের জোর করা হয়, অন্যথায় লাশটি ডাস্টবিনে ফেলে দিবে বলে হুমকি দেয় চিকিৎসক।
নবজাতকের মা লিপি সাহা বলেন, ‘ব্যথা উঠার পর বিকেল ৪ টায় আমি আমার ছেলেকে জন্ম দেই। আমি নার্সের কাছে আমার বাচ্চা চাইসি যে আমার বাচ্চা দেও। নার্সেরা বলে এখন না পরে। তারা বাচ্চার বাবারে খুজতে থাকে। বাচ্চার বাবা তখন টাকা আনতে বাহিরে গেছিলো। আমার সাথে হাসপাতালে আমার এক মাসি ছিলো, তারেও রুম থেকে বের করে দিসে। পরে সকাল ৭ টার সময় নার্সেআমারে বলসে আমার বাচ্চা মারা গেছে। কিন্তু ছেলে জন্ম হওয়ার সময় আমার বাচ্চার কান্না আমি নিজে শুনছি। বাচ্চা হওয়ার পর নার্সের কাছে বাচ্চা চাইসি তখনও বলছে আমার বাচ্চা ভালো আছে।’
বাবা লিটন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বাচ্চার মায়রে হাসপাতালে আনার পর আমার কাছে টাকা ছিলো না। টাকার ব্যবস্থা করতে নবীগঞ্জে গেছিলাম। সেখান থেকে হাইটা আসতে সাড়ে ৬ টা বাইজা যায়। হাসপাতালে আসার পর ডাক্তার বলে ‘তোমার মরা বাচ্চা হইসে’। কিন্তু আমার যখন জিগেস করসি তখন আমার পরিবার বলসে তারা বাচ্চা জন্মের পর কান্না শুনছে। পরে ডাক্তার ফোন দিয়ে আমারে বলে ‘লাশটা তারাতারি নিয়ে যাও নাইলে ডাস্টবিনে ফালাইয়া দিমু’। পরে আমার থেকে কাগজে সই নিয়ে লাশ দিয়ে দেয়।
নিহতের স্বজনেরা বলেন, ‘আজ (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে আইসা যে নার্স ডেলিভারি করসে তারে খুজতে আসছি। তখন আমাদের বলে যে তোমাদের তো মরা বাচ্চা হইসে, লাশ মর্গে আছে। আমি বলসি মর্গে কেন থাকবো আমাগো লাশ তো আমাদের সাথেই আছে। তখন ২ জন নার্স জামা চেঞ্জ কইরা পলাইয়া যাইতে চাইসে। কিন্তু একজনরে ধরসি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সেই নারীর নরমাল ডেলিভারি হয়। সে হাসপাতালে আসার ৫ মিনিটের মধ্যেই ডেলিভারি হয়। তবে বাচ্চা আগে থেকে মৃত ছিলো। আমাদের সিভিল সার্জেন মহোদয়কে আমরা জানিয়েছি সম্পূর্ন বিষয়। পরিবারকেও বুঝিয়ে বলেছি। পরে আমরা এটাও বলেছি যদি সন্দেহ থাকে তাহলে লাশের ময়না তদন্ত করতে কিন্তু নবজাতকের পরিবার ময়না তদন্ত করেনি। তারা বুঝতে পেরে লাশ নিয়ে চলে গেছে।
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমরা এমন একটা অভিযোগ পেয়েছি এবং থানা থেকে অফিসার পাঠিয়েছিলাম। প্রাথমিক ভাবে যতটুকু ঘটনা যানতে পেরেছি যে, বাচ্চা মহিলার গর্ভে জন্মের ৫/৬ দিন আগেই মারা গেছে। কিন্তু যে লেবার রুমে বাচ্চা জন্ম হয়েছে সেখানে অন্য একজনের বাচ্চা জন্ম হয়। সে বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনেছে স্বজনেরা। ডাক্তার বিষয়টা বুঝিয়ে বলার পরও নবজাতকের পরিবারের সদস্যরা বুঝতে চাচ্ছিলো না, তারা উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলো। এসময় উত্তেজিত পরিবারের সদস্যদের ঠান্ডা করতে আমার অফিসার বলেছে আপনাদের সন্দেহ থাকলে থানায় অভিযোগ করেন। তখন তারা একটা অভিযোগ দায়ের করে। বিষয়ে সিভিল সার্জেন সকালে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। সে আমাকে ঘটনা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন তারা সেখানে গিয়ে তদন্ত করে দেখেছে, বাচ্চাটা ৫ থেকে ৭ দিন আগেই মারা গেছে। তবুও সিভিল সার্জেন বলেছেন যদি সন্দেহ থাকে তাহলে পুলিশ বা পরিবারের সদস্য চাইলে বাচ্চার ময়না তদন্ত করাতে পারে, এটা করলে সত্য বের হয়ে যাবে। একই জিনিস সিভিল সার্জেন পরবিারকে বুঝিয়ে বলার পর তারা বুঝতে পেরেছে এবং লাশ নিয়ে চলে গেছে। মানবিকতার দিক থেকে সিভিল সার্জেন পরিবারকে দাফন কাফনের জন্য কোন সাহায্য লাগলে জানাতে বলেছে।