বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে শ্রমজীবীদের আয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে: গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট
লাইভ নারায়ণগঞ্জ: শ্রমিক আন্দোলন দমনের অপচর্চা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ শক্তি প্রয়োগে শ্রমিক আন্দোলন দমনের অপচর্চা বন্ধে প্রয়োজনীয় সংস্কার, বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণ, মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হত্যার বিচার, আই.এল.ও কনভেনশন ১২১, ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুস্বাক্ষর, হাইকোর্টের ২০০৯ সালের রায়ের আলোকে প্রতিটি কারখানায় নিপীড়ন বিরোধী কমিটি গঠন, ঝুঁট সন্ত্রাসী ও দালাল লালন এবং সালিসের নামে শ্রমিক ঠকানোর অপচর্চা বন্ধের দাবি জানান।
সেই সাথে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, ইন্ডষ্ট্রীয়াল পুলিশ ও শ্রম আদালতের প্রয়োজনীয় সংস্কার, শ্রম আইন ও বিধিমালার শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী কালা কানুন বাতিল করে শ্রম আইনে আই.এল.ও কনভেনশনসমূহের প্রতিফলন ও মালিকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থেকে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশাসনিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং বিদেশে টাকা পাচারকারী মালিকদের চিহ্নিত করে শাস্তি ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করে শ্রমিক কল্যাণে ব্যায় করতে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপশি তৈরি পোশাক ক্রেতাদের ইথিক্যাল ট্রেডিং নিশ্চিত করার দাবি জানান।
গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সভাপতি রুহুল আমিন সোহাগ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল শাখার সহসভাপতি আনোয়ার খান, ফতুল্লা আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক কামাল পারভেজ মিঠু, গাবতলী-পুলিশ লাইন শিল্পাঞ্চল শাখার সহসভাপতি মোফাজ্জল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বৈষম্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প। এই শিল্পে চলে ঠকানোর প্রতিযোগিতা। একদিকে, গার্মেন্টস কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে কয়েক লাইনের কারখানা থেকে বিশাল বিশাল কারখানা এমনকি শিল্প গ্রুপের মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতারা উৎপাদন খরচের দশগুন মুনাফা করছে। ফলে, প্রতি মুহুর্তে স্ফীত হচ্ছে কারখানা মালিক আর ক্রেতাদের সম্পদ আর ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা অতিরিক্ত শ্রমের বিপরীতে পুষ্টিকর খাবারে না পেয়ে অনেক কম বয়সে কর্মক্ষমতা হারিয়ে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিকদের সামান্য মজুরিও নিয়মিত পরিশোধ না করতে, বিশেষ করে শ্রমিকের চাকরি অবসানকালীন পাওনা আত্মসাৎ করতে শ্রম আইনের অপব্যবহার ছাড়াও স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পুলিশ, ঝুঁট সন্ত্রাসী আর দালাল শ্রমিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে শ্রমিক নিপীড়নের ভয়ঙ্কর একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। গার্মেন্টস মালিকরা ক্রেতাদের নিকট থেকে ন্যায্যমূল্য আদায় করতে ব্যার্থ হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ স্থিতিশীল শিল্প সম্পর্ক তৈরির পরিবর্তে নিপীড়ন আর হয়রানির মাধ্যমে শ্রমিকের প্রতিবাদের কন্ঠ স্তব্ধ করে, দরকষাকষির সক্ষমতা গুড়িয়ে দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রায় দাসত্বের জীবনে বেঁধে রেখে মুনাফা সর্বোচ্চকরণ কে বাধাহীন করার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছে এই অশুভ সিন্ডিকেট। স্বৈরাচারী সরকারের প্রশ্রয়ে গার্মেন্টস মালিকদের গড়ে তোলা শ্রমিক ঠকানোর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে আধুনিক দাসত্বের জীবন থেকে একটি মানবিক জীবনে উন্নয়নের আকাঙ্খা থেকেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছে, জীবন দিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যূত্থানে নিহতদের মধ্যে এককভাবে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক। শত শত শহিদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে শহিদ শ্রমজীবীদের বৈষম্য নিরশনের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে মজুরি পুনঃনির্ধারণ করতে হবে, অন্তবর্তী সময়ে রেশন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। গণঅভ্যূত্থান এবং মজুরি আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের হত্যার বিচার এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ প্রদান করতে হবে। এতদিন যারা স্বৈরাচারের সহচর হিসাবে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে, নির্বিচার হত্যাকান্ড চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে তাদের অনেকে এখন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের আবেগকে পুঁজি করে নানা রূপে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে এই ধডপরণের বর্ণচোরাদের বিষয়ে সাবধান হতে হবে। চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করতে হবে সন্ত্রাস, দালালী, প্রতারণা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজী, দলবাজী, সাম্প্রদায়িকতাসহ ফ্যাসিবাদের প্রতিটি শিকড়কে। মজুরি নির্ধারণের মানদণ্ড নির্দিষ্ট করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং প্রতি দুই বছরের মুদ্রাস্ফীতি এবং বাজারদরের সাথে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। তারা মন্তব্য করেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রমজীবী তাদের দ্রুত তাদের আয় বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাঙ্খা সুদুর পরাহত।