বৃষ্টিতে হাটু সমান কাদা আর শুষ্কতে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত সমাধান জরুরী
# ত্রিমুখী জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যায়
# বৃষ্টি হলে কাদা, শুকালে ধুলো
# অটোরিক্সা-মিশুক নিলে জীবন ঝুঁকির শঙ্কা থাকে
# বিদেশে প্রকল্প করলে বিকল্প রাস্তা থাকে, আমাদের নেই: সাংবাদিক
# ট্রাফিক পুলিশের কাজ দ্রুত করতে রাস্তা মেরামত প্রয়োজন: পুলিশ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইভ নারায়ণগঞ্জ: কখনো বাকা হয়ে চলে আবার কখনো পেছনের চাকা উঠে গিয়ে ৩ চাকার ভরে চালাতে হয় ট্রাক ও বাস। আকাঁবাকা রাস্তা ও প্রায় শতাধিক ছোট গর্ত থাকায় এমন চিত্র নিত্য দিনের। সিএনজি, অটোরিক্সা ও মিশুকের জন্য বিপদজনক রাস্তা হলেও বৃষ্টির সময় ভয়াবহ হয়ে যায়। একদিকে হাটু সমান কাদা অন্য দিকে খানাখন্দ থাকায় জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় ফতুল্লা পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপর পর্যন্ত সড়ক। অন্যদিকে বৃষ্টি ছাড়া শুষ্কদিনে কাদা শুকিয়ে ধুলোয় পরিনত হয়, এতে স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে লাখ লাখ শ্রমিক শ্বাসকষ্ট ও কাশির জনিত সমস্যায় ভুগছে।
সরেজমিন দেখা যায়, পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর পযর্ন্ত ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়কটিতে প্রায় শতাধিক খানাখন্দভরা। পঞ্চবটী মোড় থেকে কিছুদুর সামনে গেলেই দেখা যায়, রাস্তার ১ লেন বন্ধ করে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ভেঙ্গে খাদ হয়ে গেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফলে গর্ত হয়ে যানবাহন আটকে দীর্ঘ জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে। শাসনগাঁও ৩ রাস্তার মোড়ে ত্রিমুখী জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে থাকে। এছাড়া চার পাশে বৃষ্টির পানি জমে কাদামাটি গর্তের তৈরি হয়ে গেছে। সেই গর্তে প্রায়ই যানবাহনের চাকা আটকা পড়ে। বোঝাই যাচ্ছে না কোথায় গর্ত আর কোথায় ভালো সড়ক। অনেক স্থানেই রাস্তায় ভেকু কাজের জন্য রাস্তা আটকিয়ে কাজ করছে। এর ফলে গর্তের কারণে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল ও রাস্তা আটকিয়ে রাখায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ছোট ছোট জানবাহন আটকে যাচ্ছে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে। কোথায় আবার উল্টে গিয়ে সাধারণ মানুষ আহত হচ্ছে।
এই সড়কের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট হলো বিসিক ১নং গেইট। প্রতিদিন সকাল বিকাল এখানে প্রায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করতে আসে এই সড়ক পারি দিয়ে। বৃষ্টির মৌসুমে হাটু সমান পানি ও কাদা নিয়ে যেতে হয় কর্মস্থলে। অটোরিক্সা ও মিশুক দিয়ে চলাচল করলে জীবন ঝুঁকি অথবা বড় ধরণের দুর্ঘটনার ঘটার শঙ্কা কাজ করে। অন্যদিকে কর্মস্থলে দেড়ি করে যেতে হয়, সময় মতো না পৌছালে মালিক পক্ষ জরিমানা করেন বলে দাবি তাদের। শ্রমিকরা জানায়, ৩ দিন লেটে কর্মস্থলে গেলে ১ দিনের অনুপস্থিত ধরেন মালিক। তাছাড়া গালিগালাজ তো আছেই।
বিসিকে কর্মরত নারী শ্রমিক সোনিয়া এ প্রতিবেদককে জানায়, ‘এখানে বৃষ্টি হলে অনেক কাদা হয়। রাস্তায় সব সময় জ্যাম থাকে। অফিস যেখানে ৯টায় যেতে হয় সেখানে লেট হয়ে যায়। এতে স্যারেরা অনেক বকাবকি করে। যখন শুকায় থাকে তখন অনেক ধুলো উড়ে, এতে আমাদের শ্বাসকষ্টসহ অনেক কষ্ট হয়।
সংবাদকর্মীদের দেখে আছিয়া আক্তার নামে আরেক নারী শ্রমিক এগিয়ে এসে মন্তব্য করে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের দেড়ি হয়ে যায় অফিসে যেতে। লেট হলে গেটে আটকিয়ে দেয়া। আমরা চাই আমাদের রাস্তাঘাট ঠিক করে, যাতে আমরা ভালোভাবে চলতে পারি।
জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ পুরোনো সড়কের আশপাশে ইমারত নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রাজধানীতে ইমরত নির্মাণসামগ্রীও এই সড়ক দিয়ে সরবরাহ করা হয়। মুক্তারপুরে সিমেন্ট কারখানা, হিমাগারসহ ভারি ভারি শিল্প কারখানায় ২৪ থেকে ৫০ মেট্রিক টন ওজনের যান চলাচল করে এই সড়ক দিয়ে। শিল্প নগরী বিসিকের বিভিন্ন গার্মেন্টস এর মালামালের কন্টেইনার গাড়ি, ট্রাকসহ প্রতিদিন হাজার হাজার মালবাহী যানবাহন চলাচল করতে হয়।
সূত্র মতে, পঞ্চবটী সড়কের চেহারা বদলে দিতে নেয়া হয়েছে আধুনিকায়ন প্রকল্প। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পটির সময়কাল ১ জানুয়ারি ২০২১ হতে ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ধরা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের বেঁধে দেয়া সময়ের প্রায় ৪ বছর অতিক্রম হলেও কাজের অগ্রগতি অনেকটা কম। এতে করে প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে সড়কটি বছরের পর বছর পার হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেই।
পঞ্চবটী মুক্তারপুর সড়কে প্রতিদিন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শ্রমিক, দিনমজুর, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেনী পেশার যাতায়াত করেন। শ্রমিকের পাশাপাশি ভুগতে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও।
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেনস কলেজ শিক্ষার্থী হাসান। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, রাস্তাদিয়ে গেলে অনেক ঝুঁকির্পণ হয়ে যেতে হয়। বেশীরভাগ সময় পরে উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী। কাদা পানির জন্য অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। আমরা চাই যতদ্রুত সম্ভব রাস্তার কাজ গুলো শেষ করুক।
আব্দুল্লা আল আরেফিন নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, এখানে কাদা থাকে বৃষ্টি হলে। এতে সমস্যা আরও বেশী হয়। বিভিন্ন স্থানে গর্ত থাকায় মাঝে মাঝে আমাদের রিক্সা উল্টে যায়। অনেক মানুষ এতে আহত হয়। রাতের ১০টার পর এই বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় এসব রাস্তা ভয়ানক হয়ে যায়। বিশেষ করে রাতে নারীদের চলাফেরা করতে বেশী সমস্যা হয়। আমরা চাই এখানে একটা নিরাপদ স্থানে পরিনত হোক।
ফতুল্লায় এলাকায় বসবাস করে সাংবাদিক কবিরুল ইসলাম। তিনি লাইভ নারায়ণগঞ্জকে জানান, বিদেশে একটা প্রকল্প করতে গেলে বিকল্প একটা রাস্তা করে তারপর কাজ শুরু করে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এটা নাই। আমাদের দেশে একেবারে উল্টো। এখানে রাস্তার মধ্যেই নির্মাণ সামগ্রী রেখে রাস্তার কাজ করেন। ফ্লাইওভারের উদ্যোগ খুবই ভালো, কিন্তু সেটাও একটা বিকল্প রাস্তা বের করে কাজ শুরু করবে। রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এর ফলে আরও যানজট লাগছে, সরকারের কাছে আবেদন এই রাস্তাটা যাতে মসৃণ করা হয়। আমাদের কর্ম ঘন্টার ৭-৮ ঘন্টা এই জ্যামের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। আমি দ্রুত এই কাজ গুলো সম্পন্ন করার আহ্বান করবো।
পঞ্চবটী মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ (টিআই) হারুন অর রশীদ লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, রাস্তায় জানযট হওয়ার অন্যতম কারণ হলো রাস্তায় ভাঙাচোরা ও বেহাল দশা। এছাড়া চায়না প্রজেক্টে কাজের কারণে মাল সামান রেখে দেয়ায় এক লেনের রাস্তা হয়ে গেছে। পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর লাইন পর্যন্ত অগনিত গর্ত আছে। আমরা ইতোমধ্যে কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, তারা আমাদের বলেছে খুব শীঘ্রই রাস্তা ঠিক করে দিবে। আর চায়না প্রজেক্টটা কাজ অনেক দ্রুত কাজ করছে, এগুলো শেষ হয়ে গেছে আশা করি যানজট নিরসন হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, মাঝে মাঝে সড়কে বড় বড় গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আমরা এই গাড়িগুলো সরাতে পারি না, এগুলার জন্য যানজট লেগেই যাচ্ছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশের কাজ দ্রুত সহজ করতে এই মুহুর্তে রাস্তাটা মেরামত করা খুব প্রয়োজন। রাস্তা মেরামত হলে ৬০-৭০ ভাগ যানজট এমনি কমে যাবে। বাকিগুলো আমাদের কমইউনিটি পুলিশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।